• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার সাত বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সড়কটিতে

  মো. কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)

২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৫৯
পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার সাত বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সড়কটিতে

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ড ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ড নিয়ে দোহাজারী পৌরসভা গঠিত হয় ২০১৭ সালের ১১ মে। পৌরসভায় উন্নীত হওয়ার পর দীর্ঘ ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হাছনদন্ডী কলারপাড়া এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য প্রায় ৯শ মিটার ব্রিক সলিং সড়কে অদ্যাবধি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

ফলে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী কলারপাড়া এলাকার শতাধিক পরিবারের লোকজনকে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

ব্রিক সলিং পুরাতন সড়কটি দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ভ্যান, সিএনজি ও পণ্যবাহী পিকআপ চলাচল করলেও সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় ওই এলাকার চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, রোগীসহ কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

জনদুর্ভোগ লাঘবে ব্রিক সলিং থেকে আরসিসি ঢালাই রাস্তায় উন্নীতকরণের দাবি জানিয়ে এলাকাবাসী পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগে দুই দফা আবেদন করার পর পৌর কর্তৃপক্ষ সড়কটি দুই দফায় পরিমাপ করলেও অদ্যাবধি সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেওয়ানহাট-বৈলতলী সড়ক থেকে শুরু হয়ে কলারপাড়া এলাকার শেষপ্রান্ত পর্যন্ত সড়কটিতে ইটের সলিং (এইচবিবি) নষ্ট হয়ে বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মত সাম্প্রতিক বন্যায় সড়কটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

কলারপাড়ার বাসিন্দা দোহাজারী পৌরসভার ৫নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন রুবেল বলেন, প্রায় ১২ বছর আগে তৎকালীন সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডস্থ কলারপাড়া এলাকার সাধারণ মানুষের চলাচলে সুবিধার জন্য সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক সাড়ে ৮শ মিটার ইটের সলিং সড়কটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্নস্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে অটোরিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, মাল বোঝাই পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন। অতিরিক্ত সময় লাগছে যাতায়াতে, যে কোনো মুহূর্তে থাকে গাড়ি উল্টে যাওয়ার ভয়।

তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ গর্ভবতী নারী ও রোগীদের। এছাড়া এই এলাকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে আনা, নেওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এই এলাকার কৃষকদের। সড়কের কারণে পরিবহন খরচ বেশিসহ সময় মতো বাজার ধরতে পারছেন না কৃষকেরা। হাছনদন্ডীকে সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে দোহাজারী পৌরসভায় অন্তর্ভুক্ত করার পর ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সড়কটি সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। তাই দ্রুততম সময়ে সড়কটি ইটের সলিং থেকে আরসিসি ঢালাই সড়কে উন্নীতকরণের দাবি জানাচ্ছি।

কলারপাড়া এলাকার বাসিন্দা চন্দনাইশ উপজেলা তাঁতী লীগ যুগ্ম আহবায়ক ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মো. সালাউদ্দীন রাসেল বলেন, সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচল তো দূরের কথা, দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের হাঁটাচলাও। প্রতিনিয়তই ঘটছে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা। বিশেষ করে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী ও হাসপাতালে রোগীদের আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে। কারণ সড়কটি এখন নিজেই রোগী!

তিনি আরও বলেন, বিকল্প সড়ক না থাকাতে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহনও। অনেক সময় দ্বিগুণ ভাড়া দিলেও অটোরিকশা, সিএনজি দেওয়ানহাট-বৈলতলী সড়ক থেকে কলারপাড়া আসতে চায় না। সাথে চালের বস্তা বা অন্যান্য বাজারের ব্যাগ থাকলে তা দীর্ঘ পথ কাঁধে করে বহন করে আনা ছাড়া উপায় থাকে না। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ গর্ভবতী নারী ও রোগীদের। এটি আরসিসি ঢালাই সড়ক করা উচিত। একটু উঁচু করে নির্মাণ করলে আরও ভালো হয়।

আব্দুল মজিদ নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন, দোহাজারী ও দেওয়ানহাট থেকে কলারপাড়া এলাকার মানুষ নিয়ে আমাকে যাতায়াত করতে হয়। সড়কের বিভিন্নস্থানে ইট উঠে গিয়ে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক বন্যায় সড়কটির বেহাল অবস্থা থাকায় মাঝে মধ্যে যাত্রী নিয়ে কলারপাড়া আসতে অপারগতা প্রকাশ করি। কারণ, এই সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ির যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়। এতে লোকসান দিতে হয় আমাদের।

জুনাইদ নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সড়ক পথেই যাতায়াত করেন হাছনদন্ডী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, হাছনদন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাস্তার বেহাল দশার কারণে তাদের স্কুলে যেতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, এলাকাবাসীর দাবির সঙ্গে আমিও একমত। সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সদ্য সমাপ্ত পৌর নির্বাচনে গণসংযোগে গিয়ে কলারপাড়া এলাকাবাসীর দুরবস্থা আমি স্বচক্ষে দেখেছি। পৌরসভার প্রকৌশলীর সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি আমাকে জানিয়েছেন সড়কটি সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে শীঘ্রই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এ ব্যাপারে দোহাজারী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. নাঈম উদ্দিন বলেন, পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলমান রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রতিটি সড়ক এক অর্থবছরে সংস্কার করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে প্রতিটি সড়ক সংস্কার করা হবে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি পৌরসভায় গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হাছনদন্ডী কলারপাড়া রাস্তাটি সংস্কার প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে দরপত্র আহ্বান করে সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড