• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বন্যায় বিনাশ চট্টগ্রামের ‘সবজিভাণ্ডার’ শঙ্খ চর, সব হারিয়ে নিঃস্ব সবজি চাষীরা

  মোঃ কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)

২১ আগস্ট ২০২৩, ১৮:৪৯
বন্যা

গত ৭ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত টানা চার দিন অবিরাম মুষলধারে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চন্দনাইশ উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার কারনে আউশ, রোপা আমন বীজতলা, বোনা আমন ও শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হঠাৎ বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করায় মাঠের ফসল ছাড়াও ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির তীব্র স্রোতে বিভিন্ন এলাকার আভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় লন্ডভন্ড হয়ে বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে শঙ্খ নদীর তীর ঘেষা চট্টগ্রামের ‘সবজিভাণ্ডার’ হিসেবে পরিচিত শঙ্খ চর।

চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা শঙ্খ নদী তীরবর্তী এই চরে সারা বছর জুড়েই বিভিন্ন শাক-সবজি উৎপাদন হয়। এ অঞ্চলে শিল্পকারখানা না থাকায় শঙ্খ নদী তীরবর্তী লোকজন শাক-সবজি চাষের ওপর নির্ভরশীল। যাদের নিজস্ব জমি নেই তাঁরাও অন্যের জমি লিজ নিয়ে শাক-সবজি চাষ করেন। এতে শত শত পরিবার সচ্ছল ভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বেগুন, মূলা, শিম, ঢেঁড়শ, কাকরোল, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঝিঙ্গা, তিত করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, লাউ, পেঁপে সহ বিভিন্ন ধরনের শাক উৎপাদন হয় এখানে। জমিতে ফলানো সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার মুহূর্তে হঠাৎ বন্যার তাণ্ডবে ক্ষেত নষ্ট হয়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন শঙ্খ চরের সবজি চাষীরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি সবজি উৎপাদন মৌসুমে চন্দনাইশ উপজেলার দুইটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে এক হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। তন্মধ্যে দোহাজারী ব্লকে সবজি আবাদ হয়েছে ৪০০ হেক্টর জমিতে। শঙ্খ চরের প্রতিটি সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সব হারিয়ে নিঃস্ব সবজি চাষীরা দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন।

রবিবার (২০ আগস্ট) সকালে শঙ্খ চরে গিয়ে কথা হয় শঙ্খ চরের সবজি চাষী দোহাজারী খানবাড়ি এলাকার কৃষক সামশুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, তাঁর নয় হেক্টর জমিতে লাগানো বরবটি, ঢেঁড়স, মূলা ও পেঁপে বাগান বন্যার পানির তীব্র স্রোতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এতে আনুমানিক বিশ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে তাঁর। লাভের আশায় সবজির আবাদ করে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে তিনি এখন দিশাহারা। গত ১১ আগস্ট পানি নেমে যাওয়ার পর আত্মীয়ের কাছ থেকে ধার করে টাকা নিয়ে নতুন করে সবজি আবাদ করার জন্য ২০আগস্ট কৃষি শ্রমিক দিয়ে জমি প্রস্তুত করছিলেন তিনি।

পূর্ব দোহাজারী আজগর আলী বাড়ি এলাকার আহমদ মিয়ার চার হেক্টর জমিতে লাগানো তিত করলা, বরবটি ও মূলা ক্ষেত তছনছ হয়ে গেছে। বৃষ্টি ও বন্যা কেড়ে নিয়েছে কষ্টের সব ফসল। এতে আনুমানিক আট লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে তার।

কিল্লাপাড়া এলাকার আবু তাহের জানান, ধার-দেনা করে দুই হেক্টর জমিতে চাল কুমড়া, বরবটি ও মূলা আবাদ করেছি। কিন্তু সবই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আনুমানিক চার লাখ টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছি। পুনরায় সবজি আবাদ করতে সহজে ঋণ পাওয়ার জন্য কৃষি কর্মকর্তার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

সামশুল ইসলাম, আহমদ মিয়া ও আবু তাহেরের মত শঙ্খ চরের প্রায় চার শতাধিক কৃষকের মধ্যে সবাই হারিয়েছেন ক্ষেতের ফসল। সন্তানের মত পরিচর্যা করে বিক্রি উপযোগী করার পর হঠাৎ বন্যার তান্ডবে সব হারিয়ে নিঃস্ব চাষীরা এখন দিশেহারা।

দোহাজারী পৌরসভার ৭নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমার ওয়ার্ডের পূর্ব সীমান্ত লালুটিয়া থেকে পশ্চিম সীমান্ত দোহাজারী রেললাইন পর্যন্ত লালুটিয়া, রায়জোয়ারা, কিল্লাপাড়া, বেগম বাজার, বাবুখান বাড়ি, আজগর আলীর বাড়ি, মজুপাড়া এলাকার সিংহভাগ মানুষ শঙ্খ নদী তীরবর্তী চরে সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। টানা চারদিন মুষলধারে অবিরাম বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সবকিছুই তছনছ হয়ে গেছে তাদের। বন্যায় কম করে হলেও চার শতাধিক সবজি চাষি ক্ষতির শিকার হয়ে পথে বসেছেন।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আজাদ হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে প্রতি বছরই দেশের কোথাও না কোথাও কম বেশি বন্যা দেখা দেয়। বন্যার কারণে মাঠের আউশ, রোপা আমন বীজতলা, বোনা আমন ও শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়। চন্দনাইশের দুইটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে এক হাজার ৪০ হেক্টর সবজি, ৪৫০ হেক্টর আমন বীজতলা, ১২০ হেক্টর আউশ ও ১৫ হেক্টর রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমান টাকার অংকে আনুমানিক ৩১কোটি টাকা। যেসব এলাকার চাষীরা ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাঁদের তালিকা করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কৃষকদের প্রণোদনা এবং নতুন করে সার ও বীজ সরবরাহ করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রান্তিক কৃষকেরা যাতে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারেন এজন্য কৃষি কার্ডধারী কৃষকদের সহজে কৃষি ঋণ পেতে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড