• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অধ্যক্ষসহ ৯৮টি পদ শূন্য, শিক্ষক সংকটে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

  কবির হোসেন, কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি)

২১ আগস্ট ২০২৩, ১৬:৪১
  বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

রাঙামাটি কাপ্তাই উপজেলায় ১৯৬৩ সালে স্থাপন করা হয় দেশের অন্যতম কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট (বিএসপিআই)। তিন পার্বত্য জেলায় কারিগরি শিক্ষা প্রসারের জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। সারাদেশে এই প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট সুনাম থাকার ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে আগ্রহী হয়। দেশের ৪৯টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০২৩সালে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কাপ্তাই বেস্ট কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ২য় স্থানে স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৬টি ডিপার্টমেন্টে প্রায় ২ হাজার ১২৫জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। তার মধ্যে ছাত্র ১৮৪১জন,ছাত্রী ২৮৪জন,মুক্তিযোদ্ধা ২১জন, প্রতিবন্ধী ৫জন ও উপজাতী রয়েছে ২৯৩জন শিক্ষার্থী। এসকল শিক্ষার্থীর জন্য প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ ১১৯ জন অনুমোদিত শিক্ষক পদ থাকার কথা।কিন্ত কয়েক বছর যাবৎ অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ ৬টি টেকনোলজি বিভাগের চিফসহ ৯৮টি পদ শূন্য। বর্তমানে কর্মরত আছে ২১জন। এছাড়া কর্মচারী মেডিকেল অফিসার (খন্ডকালীন)সহ বিভিন্ন অনুমোদিত পদ রয়েছে ৫৪টি, কর্মরত আছে ২৩জন শূন্য রয়েছে ৩১জন। টেকনিক্যাল বিভাগ সিভিল উড,ইলেকট্রিক্যাল,মেকানিক্যাল,অটোমোবাইল,কম্পিউটার,কন্সট্রাকশন ও নন-টেক এ ক্রাফট ইন্সট্রাকটর(টিআর) অনুমোদিত পদ ১০২টি কর্মরত আছে ৫৩জন শূন্য পদ আছে ৪৯জন। এছাড়া কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীর মধ্যে আরও ৯জন সংযুক্ত অন্যত্র কর্মরত থেকে এ প্রতিষ্ঠান হতে বেতন-ভাতা নিচ্ছে। শিক্ষক,অফিস ও কর্মচারী সংকট চরম আকার ধারন করায় তালিজোড়া দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম।

বর্তমানে স্বল্প সংখ্যক স্থায়ী শিক্ষক, স্টেপ শিক্ষক এবং খন্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কোনরকমে চলছে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কার্যক্রম। এদিকে শিক্ষক সংকটের ফলে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ক্লাস পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে ছয়টি ডিপার্টমেন্ট এর প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই শিক্ষক সংকটে নিয়মিত ক্লাস এর ব্যাঘাত ঘটছে। এতে দুর দুরান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া সুষ্টু পরিবেশ, পরিস্থিতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এই বিষয় নিয়ে চরম হতাশায় ভুগছে। তারা সকলেই দ্রুত সময়ে অত্র প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট কাটিয়ে লেখাপড়ার সুষ্টু পরিবেশ নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন।

কাপ্তাই সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে শিক্ষক সংকটের বিষয়ে কথা হয় কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। এসময় প্রতিষ্ঠানটির ইলেকট্রিক ডিপার্টমেন্ট ৩য় পর্বের ছাত্র রিসাদ মাহমুদ জানান, আমি এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ইচ্ছা জাগে অত্র প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করবো। এবং আমার সেই ইচ্ছা পূরণ হলেও বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে এসে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছি আমি। কেননা শিক্ষক সংকটের ফলে আমাদের নিয়মিত ক্লাস হচ্ছেনা। এতে সময়টা চলে যাচ্ছে কিন্তু সঠিক জ্ঞান অর্জনে থেকে আমরা অনেকটা বঞ্চিত হচ্ছি।

প্রতিষ্ঠানটির মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট ৩য় পর্বের ছাত্র আব্দুল মজিদ জানান, শিক্ষক সংকটের ফলে আমাদের যেই বড় সমস্যাটি দেখা দিয়েছে সেটি হলো নিয়মিত ক্লাস না হওয়া। তবে খন্ডকালীন কিছু শিক্ষক দিয়ে মাঝেমাঝে ক্লাস চলমান রাখা হয়। কিন্তু আমরা যদি প্রতিটি বিষয় অনুযায়ী স্থায়ী এবং দক্ষ শিক্ষক পেতাম তাহলে আমাদের প্রতিটি বিষয়ের উপর দক্ষতা বাড়তো। এতে আমরা উপকৃত হতাম।

প্রতিষ্ঠানটির ইলেকট্রিকেল ডিপার্টমেন্ট ৩য় পর্বের আরেকজন ছাত্র শরিফ জানান, পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি হাতে কলমে আমাদের যেই শিক্ষাটা পাওয়া দরকার সেটি আসলে শিক্ষক সংকটের ফলে আমরা নিয়মিত পাচ্ছি না। বিশেষ করে আমরা অনেক বিষয়ে অজ্ঞ রয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানের স্যারেরা খুবই আন্তরিক, উনারা খুব চেষ্টা করেন আমাদের সঠিক শিক্ষাটা দেওয়ার জন্য। আশা করছি আমরা দ্রুত সময়ে শিক্ষক সংকটের এই সমস্যা কাটিয়ে উঠবো।

এদিকে শিক্ষক সংকটের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন কাপ্তাই সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ আবদুল মতিন হাওলাদার (অতিরিক্ত দায়িত্ব)। তিনি জানান, আমি ২০ জুন ২০১৯ সাল হতে অধ্যক্ষ পদে অতিরিক্ত দায়িত্ন পালন করছি। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকটের বিষয়টি আসলেই সত্য। যার ফলে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। স্টেপ শিক্ষক এবং খন্ডকালীন কিছু শিক্ষক রয়েছে তাদের দিয়ে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি। স্টেপ শিক্ষক ঠিকমত বেতন পায়না তারপরও ক্লাশে গিয়ে পাঠদান করছে। শিক্ষক, অফিস ও কর্মচারী সংকটের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিমাসে চিঠি দিয়েছি। যেহেতু শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াটি আমাদের হাতে নেই, সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর নির্দেশনা অনুযায়ী পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এর মাধ্যমে নিয়োগটা হয়ে থাকে। নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়ে গেলে আশা করছি আমরা দ্রুত সময়ে শিক্ষক সংকটের সমস্যা কাটিয়ে উঠবো।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড