• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গৃহবধূকে হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে জনতা 

  মনিরুজ্জামান, নরসিংদী

১৩ আগস্ট ২০২৩, ১৫:৩২
গৃহবধূকে হত্যার প্রতিবাদে রাজপথে জনতা 

নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীতে গৃহবধূ সানিয়া আক্তারকে হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছেন নিহতের স্বজন ও স্থানীয় লোকজন।

গতকাল শনিবার (১২ আগস্ট) বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের ডৌকাদী গ্রামে এই সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহতের চাচা মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ২০২২ সালের ২৯ মার্চ রাত পৌনে বারোটায় আমার ভাতিজি সানিয়া আক্তার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হলে একই এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে সোহাগ তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পার্শ্ববর্তী পুকুর পাড়ে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় আমরা মাধবদী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে পুলিশ তাকে আটক করে জেল-হাজতে পাঠায়। পরে বিয়ের শর্তে তাকে জামিনে মুক্ত করে তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সোহাগের মা-বাবা তাদের এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর থেকেই তারা যৌতুকের জন্য আমার ভাতিজির উপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। বাধ্য হয়ে আমরা তাদের চাওয়া পূরণ করতে জামাইরা গাড়ি কেনার জন্য ৬০ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবদার পূরণ করে আসছি। কিন্তু যৌতুকের লোভ তাদের এতটাই পেয়ে বসেছে যে এর জন্য সর্বশেষ তারা আমার ভাতিজিকে সাড়ে তিন মাসের একটি ছোট্ট শিশু রেখে মেরে ফেলেছে।

তার দাবি, তারা আমার ভাতিজিকে মেরে তার মৃত্যুকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে। তার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হলে আমরা বিষয়টি মাধবদী থানা পুলিশকে অবগত করি। মাধবদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় এবং বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধবদী থানার এসআই রনিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, আমরা নিহতের স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরকে আসামি করে মামলা করতে চাইলে এসআই রনি আসামি পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমার ভাতিজা রিপনের কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে একজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন এবং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা করেছে বলে রিপোর্ট দেন।

মাসুদ রানা বলেন, এ সময় ঘটনার পুনঃ তদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) ডৌকাদি গ্রামে শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্বামী মিলে সানিয়াকে হত্যা করেছে। এরপর তারা স্থানীয় থানা পুলিশ ম্যানেজ করে এটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। সানিয়ার ভাই রিপন মিয়া মাধবদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত সানিয়া উপজেলার কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের ডৌকাদী গ্রামের মৃত শফিউল্লাহর মেয়ে। অপর দিকে অভিযুক্ত সোহাগ মিয়া একই এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে। সানিয়া হত্যা মামলায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত শনিবার বিকালে সোহাগকে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

নিহতের ছোট ভাই হযরত আলী বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে তার বোন সানিয়াকে মারধর করে হত্যা করেছে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

তিনি আরও বলেন, প্রায় সময় শ্বশুর, শাশুড়ি ও সোহাগ এবং তার বোন সহ সানিয়াকে মারধর করতো। সবশেষ গত শুক্রবার বিকেলে তারা আমার বোন সানিয়াকে হত্যা করেছে বলে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি সানিয়ার মরদেহ বসত ঘরের সামনে মাটিতে রাখা আছে। এসময় সোহাগ ও তার পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় সোহাগকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।

সানিয়ার বড় ভাই রিপন মিয়া বলেন, বোন হত্যার বিচার চেয়ে মাধবদী থানায় মামলা করেছেন তিনি। কিন্তু ওই মামলায় এস আই রনি তাকে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি আপোষ করে ফেলতে অনুরোধ করে। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় রনি স্বামীদের পক্ষ নিয়ে শুধু সোহাগকে আসামি করে মামলা দায়ের করার পাশাপাশি এটিকে আত্মহত্যা বলে রিপোর্ট দেয়।

তিনি আরও বলেন, এ সময় নিহত গৃহবধূ সানিয়া আক্তারের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকার পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড