মো. রেজোয়ান ইসলাম, নীলফামারী
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় নিয়মনীতি ও আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। প্রশাসনকে সংবাদ দিলে মেলে দায়সারা পরিদর্শন।
উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ডিজেল ইঞ্জিনকে রূপান্তরিত করে স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে এক দিকে যেমন পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও জমি হুমকির মুখে। তেমনি বিকট শব্দে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিরক্ত হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
আজ সোমবার (৭ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের গোদারবাজার সংলগ্ন নাউতারা ব্রিজের দক্ষিণ দিকে নদীর বাঁধ কাম চলাচলের রাস্তা সংস্কারে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। আর নিষিদ্ধ মেশিন চালানোর হুকুমদাতা একই ইউপি চেয়ারম্যান আশিক ইমতিয়াজ (মনি) এমনটিই জানিয়েছে ওই মেশিনের কর্মচারী দুলু মিয়া ও আইয়ুব আলী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, এভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে আমাদের অবধি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এছাড়াও মেশিনের উচ্চমাত্রার শব্দের আমার বাচ্চার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। রাস্তার কথা বলে বালু উত্তোলন করা হলেও তা না করে পাশের পরিত্যক্ত পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। আর সামান্য কিছু বালু রাস্তায় টাল দিয়ে রাখা হয়েছে।
ওই মেশিনে কর্মরত আইয়ুব আলীকে মেশিন মালিকের নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মেশিনকে জিগ্যেস করেন মেশিন মালিকের নাম। ভিডিয়ো করে চলে যান।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মেশিন চালক দক্ষিণা জানান, এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ। মেশিন চালানোর অনুমতি আছে। এটা চেয়ারম্যানের মেশিন। আর তারেই ঠিকাদারিতে মেশিন চালিয়ে সরকারি কাজে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আপনার কিছু বলার থাকলে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন।
মো. আশিক ইমতিয়াজ (মনি) নাউতারা ইউপি চেয়ারম্যান মেশিন চালানোর বিষয়ে বলেন, আমি এই কাজের ঠিকাদার নই। আচ্ছা আগে বলেন- ওখানে কেন মেশিন চলছে? পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে হতে লোকাল অ্যারেজমেন্টের মাধ্যমে কাজটা করতে হবে। পরে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন প্রজ্ঞাপনের কথা বললে চেয়ারম্যান বলেন, ওখানে গিয়ে আপনারা যদি এসব কথা বলেন। তাহলে বলেন, লেখেন। এখানে তো আর বলার কিছু নেই।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, যে কাজটা চলতেছে, ওই রাস্তাটা ভেঙে যাচ্ছে। এটা আপনারা সাংবাদিকরা একটা বার লিখলেন না, রিপোর্ট করলেন না! এখানে মূলত পাঁচশ পরিবারের বসতবাড়ি আর নদীর ধারের রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে সেজন্য নদী থেকে বালু তুলে জিও ব্যাগে সড়ক সংস্কার করা হবে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা জানান, আমাদের লোক পাঠানো হবে। কিন্তু পরে প্রতিবেদক একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন কেটে দেন।
ডিমলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার জানান, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে নাউতারা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. আবুল হোসেনকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ব্যবস্থা নেওয়া আদেশ দেন। কিন্তু উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে জানানোর দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন মো. আব্দুল হোসেন। আর তিনি উপস্থিত হওয়ার ১০ মিনিট আগেই বালু উত্তোলনের মেশিন, পাইপসহ অন্যান্য সরঞ্জাম সরিয়ে নেয় ওই মেশিন শ্রমিকরা।
এ বিষয়ে ঘটনাস্থলে কোনো মন্তব্য না করে ভূমি কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেন বলেন, অফিসে আসেন তখন কথা হবে।
পরে মুঠোফোনে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মানুষের জরুরি কাজ থাকতে পারে না? আমি তো সরেজমিনে গিয়ে কোনো মেশিন পাইনি। এ কথা বলে কল কেটে দেন। পরে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি কল কেটে দেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড