• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কুড়িগ্রামে ছিটমহল বিনিময় : ঐতিহাসিক মানবিক অর্জন শীর্ষক আলোচনা সভা

রক্তপাতহীন ভূখণ্ড বিনিময় করেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাননি শেখ হাসিনা

  হুমায়ুন কবির সূর্য, কুড়িগ্রাম

০২ আগস্ট ২০২৩, ১২:২৬
রক্তপাতহীন ভূখণ্ড বিনিময় করেও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাননি শেখ হাসিনা
কুড়িগ্রামে ছিটমহল বিনিময় : ঐতিহাসিক মানবিক অর্জন শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে (ছবি : অধিকার)

কুড়িগ্রামের কলেজমোড়স্থ শেখ রাসেল অডিটোরিয়ামে ‘কুড়িগ্রামে ছিটমহল বিনিময় : ঐতিহাসিক মানবিক অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বেসরকারি সংগঠন উদ্দীপন, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর কালচারাল অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ ও উত্তরবঙ্গ যাদুঘর সেমিনারের আয়োজন করে।

উত্তরবঙ্গ যাদুঘর ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন- পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাফর আলী, বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি মইনুল হক, সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা, উদ্দীপনের নির্বাহী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বসু প্রমুখ।

মুল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, ছিটমহল বিনিময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিৎ। দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের লাঞ্ছনা-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে একটি রক্তপাতবিহীন ভূখণ্ড বিনিময় ও মানুষ বিনিময়ের ঘটনাটি বিরল হলেও, সেভাবে প্রচার করা হয়নি। যতটা প্রচার পেয়েছিল ছিট বিনিময় চুক্তি করে শেখ মুজিব ভারতের কাছে দেশ বিক্রি করে দেয়ার ঘনযন্ত্র করছেন।

এই ল্যান্ড চুক্তির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়তি আরও ১০ হাজার হেক্টর ভূখণ্ড বাংলাদেশের সাথে যুক্ত করতে পেরেছেন।

বিলুপ্ত বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সেক্রেটারি গোলাম মোস্তফা দাবি তোলেন, ১ আগস্ট তারিখকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ছিটমহল মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হোক। এছাড়াও তিনি ছিটমহল আন্দোলনরে সাথে প্রত্যক্ষভাবে যারা জড়িত ছিলেন তাদের তালিকা রাষ্ট্রীয়ভাবে গেজেট আকারে প্রকাশ করার দাবি জানান।

পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ছিটমহলের মানুষের ভিতরের যে কথা তা ডকুমেন্টেশন করা দরকার। কারণ এই মানুষগুলো সারাজীবন থাকবেন না। এই যে মানুষের দুঃখের গল্প, মানুষের চাপা ক্ষোভের গল্প। মানুষের দেশ আছে, জমি আছে কিন্তু কোন দেশ নেই জমি নেই। আপনি একজন মানুষ কিন্তু আপনি কোন মানুষ নন। আপনার জায়গা জমি সবই আছে কিন্তু কোন কিছুই নেই। র্যাডলিফ দেশ ভাগ করে একটি টিউমার রেখে গেছেন। দীর্ঘদিনের সংগ্রামের পর আপনারা টিউমারটি অপারেশন করতে পেরেছেন। এই টিউমারের ব্যথা ৬৮ বছর ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম আপনারা ভোগ করে গেছেন। এর প্রতিকার আপনারা করতে পারেন আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিচার চেয়ে।

তিনি আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশ চুক্তির ফলে যে বিশাল অর্জন হয়েছে, তার জন্য বিভিন্ন মহলের কাজ করা দরকার। এটি শেখ হাসিনা সরকারের বিশাল সাফল্য অথচ তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত হননি। এটি নিয়েও কাজ করা দরকার।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার বলেন, ছিটমহলগুলোর জন্য বাংলাদেশ সরকার অনেক কিছু করছেন। তাদের জন্য আরও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। সেই কাজগুলো সকলে মিলে করা দরকার।

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, আগে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। এখন ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ জ্বলছে, আলপথ এখন রাজপথ হয়েছে। আজকের ছিটমহল এবং ৮ বছর আগের ছিটমহলের মধ্যে বিশাল পার্থক্য হয়েছে। এক সময় স্বাধীনতা বিরোধীরা গোলামী চুক্তি বলেছিল। অথচ এই চুক্তি ৫১ হাজার মানুষকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি দিয়েছে। শোকাবহ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিটমহলবাসীদের জীবনে আলোক বর্তিতা নিয়ে এসেছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, আগামী বছর থেকে এই ঐতিহাসিক দিনটিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে বলে আমি কথা দিচ্ছি।

এছাড়াও তিনি বলেন, জনসংখ্যা বিষয়ে যে সকল বিরোধ রয়েছে সেটি মিটিয়ে ফেলা হবে। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহল দুই দিনের মধ্যে বিনিময় হয়। এতে ৫১ হাজার ছিটমহলবাসী বন্দিদশা থেকে মুক্তি লাভ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অমানবিক জীবন যাপনকারী ছিটবাসীর উন্নয়নের পথ সুগম হয়। আর কয়েক বছরে বাংলাদেশী ছিটমহলগুলো অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটে।

সভায় বক্তারা ছিটমহল বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানের কথা স্বীকার করে ছিটমহলের ইতিহাস সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড