নেশার টাকার জন্য গার্মেন্টস কর্মীকে স্বামীর হত্যাচেষ্টা

বরগুনার আমতলীতে নেশার জন্য টাকা না পেয়ে স্বামী কর্তৃক তন্নি (২২) নামে এক গার্মেন্টস কর্মী স্ত্রীকে নির্যাতন করে হত্যাচেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। স্বজনরা গুরুতর আহত অবস্থায় ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। গত রবিবার রাত ৯টার সময় হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহতের স্বজন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া গ্রামের নান্টু প্যাদার মেয়ে তন্নির সাথে একই ইউনিয়নের উত্তর রাওঘা গ্রামের আমিরুল আকনের ছেলে রিয়াজ আকনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ের বাবা মেয়ের সুখের কথা বিবেচনা করে সংসারের সকল মালামাল এবং মেয়ের হাতের স্বর্ণের চুরি ও কানের দুল এবং ছেলের জন্য একটি স্বর্ণের চেইন উপহার হিসেবে প্রদান করেন।

বিয়ের পরে তার স্ত্রী তন্নি জানতে পারেন তার স্বামী রিয়াজ নেশাগ্রস্ত। সে প্রায়ই নেশা করে ঘরে এসে স্ত্রী তন্নিকে নির্যাতন করে। এর মধ্যে রিয়াজ তন্নি দম্পতির কোল জুরে আসে তানহা নামের এক পুত্র সন্তান। তন্নি সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে রিয়াজের অনেক নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে আসছে।

সংসারের অভাব দূর করার জন্য ২০২২ সালে সে ঢাকার কেরানীগঞ্জের নিডেল ওয়ার্ক নামের একটি গার্মেন্টসে চাকুরি নেয়। পবিত্র ইদুল ফিতরের দু’দিন আগে তন্নি ছুটি নিয়ে বাড়ি এসে ১দিন স্বামী বাড়ী অবস্থান করে পরের দিন শুক্রবার স্বামী এবং সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি বেড়াত যায়।

রবিবার রাতে স্বামী রিয়াজুল স্ত্রী তন্নির নিকট নেশা করার জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করে। তন্নি টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রথমে সে কিলঘুষি এবং লাথি মারে। এক পর্যায়ে তন্নির মুখে কাপর ঢুকিয়ে গলায় লোহার রড ঠেকিয়ে হত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ঘরে থাকা ভারী কাঠ দিয়ে স্ত্রী তন্নির বুকে, পিঠে, উড়–তে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে।

ওই সময় স্ত্রী তন্নির মুখের কাপর সরে গেলে সে ডাক চিৎকার দিলে তার বাবা মা এবং প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে স্বামী রিয়াজ পালিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সোমবার সকালে গুরুতর আহত গার্মেন্টস কর্মী তন্নিকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করা হয়।

আহত গার্মেন্টস কর্মী তন্নি কান্না জড়িত কণ্ঠে আমতলী হাসপাতালে শয্যায় শুয়ে বলেন, দ্যাহেন স্যার নেশা করার জন্য টাকা না দেওয়ায় আমারে মাইরা কি হরছে। বুক পিঠে, স্তন, উড়–সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মাইরা কালো দাগ বানাইয়া ফালাইছে। প্রায়ই নেশার টাকার জন্য আমাকে এভাবে মারধর করে। গার্মেন্টসে চাকুরি করে যে কয় টাকা পাই তা স্বামী, সংসার এবং সন্তানের জন্য খরচ করে আর থাকে না।

তিনি আরও বলেন, রবিবার রাতে নেশার জন্য আমার কাছে ২০ হাজার টাকা চায়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমার স্বামী আমারে লোহার রড দিয়ে গলায় আঘাত করে হত্যার চেষ্টা করে। হত্যা করতে না পেরে ভারী গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়ে কালো দাগ করে ফেলেছে। মারার আগে আমার মুখে কাপর ঢুকিয়ে নেয় যাতে আমি ডাক চিৎকার করতে না পারি। আমি এর বিচার চাই।

আহত তন্নির মা জোসনা বেগম বলেন, মোর মাইয়াডারে নেশার টাহার লইগ্যা স্বামী রিয়াজ মাইরা হালান ধরছেলে। মোরা টের পাইয়া যাওনে ও প্রাণে বাইচ্যা যায়। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।

এ দিকে অভিযুক্ত রিয়াজ নেশার জন্য টাকা চাওয়া নয়, পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্ত্রীকে মারধর করেছেন বলে দাবি করেন।

আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. লুনা বিনতে হক বলেন, হাসপাতালে আসা তন্নির ডান হাতের বাহুতে, পিঠে, বুকে মারের আঘাতে কালো দাগ হয়ে আছে।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে আমতলী হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।