মো. মনিরুজ্জামান, নরসিংদী
প্রতিদিন কর্মস্থলে দেখা না গেলেও মাস শেষে হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর রয়েছে নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ সহকারীর। মাসে দু-একবার আসেন শুধুমাত্র যৎ সামান্য ঔষধ বিতরণ ও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার জন্য।
এমনই অভিযোগ উঠেছে নরসিংদীর সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তা (স্যাকমো) শাহিনুর ইসলাম শাহিনের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত (স্যাকমো) শাহিনুর ইসলাম শাহিন দীর্ঘ ১৫ বছরেরও অধিক সময় ধরে আলোকবালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) পদে দায়িত্বরত আছেন। আলোকবালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যোগদানের পর থেকে তিনি নিয়মিত কর্মস্থলে না এসে কোনো রকম দায় সারাভাবে মাসে একবার কি দুইবার এসে সর্বোচ্চ ঘণ্টা দেড়েক সময় থেকে সেবা নিতে আসা কয়েকজন সেবাগ্রহীতাকে কয়েকটি টেবলেট দিয়ে হাজিরা খাতায় বিগত দিনের অনুপস্থিত স্বাক্ষরগুলো করে আবার চলে যান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
নিয়মিত কর্মস্থলে না এসে হাজিরা খাতায় বিগত দিনের অনুপস্থিত স্বাক্ষরগুলো করে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করে যাচ্ছেন যোগদানের পর থেকেই। কর্মস্থলে তার অনুপস্থিত থাকার ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। দিনের পর দিন স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় স্থানীয়দের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।
সম্প্রতি "আলোকবালীর প্রতিবেদন" নামে একটি ফেসবুক পেইজে এই বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হলে তা দৈনিক অধিকার নরসিংদী জেলা প্রতিনিধির নজরে আসে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সকালে সরেজমিনে আলোকবালী গেলে কর্মরত (স্যাকমো) শাহিনুর ইসলাম শাহিনকে পাওয়া যায়নি। এ সময় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি তালাবন্ধ অবস্থায় দেখা যায়।
এ দিকে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে লোক জড়ো হতে দেখা যায়। দিনের পর দিন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকা দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করা সরকারের এ উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন স্থানীয়রা।
আলোকবালী বাজার মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আতিক দৈনিক অধিকারকে বলেন, ইমামতির পাশাপাশি বাজারে আমার দোকান আছে। আমি যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে দিয়ে যাই তখনই এটা বন্ধ দেখতে পাই। তাছাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির দায়িত্বে যিনি আছেন তিনি কখন আসেন কখন যায় তা বলতে পারছি না। দীর্ঘ এতো বছরে এখন আমি তাকে দেখিনি এবং চিনি না পর্যন্ত।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য রশিদ মেম্বার বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশেই আমার দোকান। সে সুবাদে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি মাসে দুই একবার খুলতে দেখি। এখানকার ডা. শাহিনকে ঘণ্টা খানেকের জন্য আসতে দেখি আবার চলে যায়।
নাছির উদ্দিন নামে কলেজ পড়ুয়া এক তরুণ বলেন, আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম এটা একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এর আগে তা জানতাম না। তাছাড়া জানবো কি করে এর সামনে নেই কোনো সাইনবোর্ড বা নেমপ্লেট, দেখলে মনে হয় ভূতুরে বাড়ি।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কম্পাউন্ডে অবস্থিত হাইস্কুলের নৈশ প্রহরী দিদার খান বলেন, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার মাসের দু'একবার আইয়্যে। আইয়্যাই একটা খাতায় সই কইয়্যা মাইনস্যেরে কিছু ঔষধ দিয়া আধা ঘণ্টার মধ্যে চইল্যা যায়।
আলোকবালী সরকারি প্রাইমারি স্কুলের অতিথি শিক্ষক নাসরিন আক্তার বলেন, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধই থাকে বলা চলে। মাসে দু'একবার খোলা দেখা গেলেও তা সর্বোচ্চ এক-দেড় ঘণ্টার জন্য। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আর আমার স্কুল সামনা সামনি বিদায় এলাকার অনেকে এটি খোলা থাকলে কিছু টেবলেট নিয়ে যেতে বলে। আমি টেবলেট নিতে আসলে দেখি টেবলেটগুলো স্বল্প মেয়াদের। সেগুলোর মেয়াদকাল এক মাসের বেশি থাকে না। কোনটা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে মেয়াদ উত্তীর্ণ টেবলেটগুলো আর দেওয়া হয় না।
আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড. আসাদ উল্লাহ বলেন, শাহিন নামে এই লোক আমার ইউনিয়নে কর্মরত আছে অথচ তাকে আমি চিনি না। উনি প্রতিদিন যদি তার কর্মস্থলে আসতো তাহলে কোনো না কোনোভাবে অবশ্যই তাকে আমি চিনতাম।
আলোকবালী ইউপি চেয়ারম্যান পবিত্র ওমরা পালনে সৌদি আরব থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হযরত আলী বলেন, আমি তাকে নিয়মিত এসে মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছি। শুধু তাই নয় আমি তাকে এমনও বলেছি যাতায়াতের অসুবিধা হলে আপনি অন্তত সপ্তাহে দুই দিন আসেন তবু মানুষের উপকার হবে। তিনি আমার এসব কথা কানেই নেননি। শুনছি তার নাকি উপরে লোক আছে তাই নিয়মিত না আসলেও সমস্যা হবে না।
আলোকবালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) শাহিনুর ইসলাম শাহিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার আমি আমার কর্মস্থলে না গেলেও মঙ্গলবার গিয়ে ছিলাম তা খোঁজ করে দেখতে পারেন। যাতায়াতের অনেক সমস্যা তাই নিয়মিত যাওয়া হয় না। তবে কর্মস্থলে না এসে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তেমন কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ ব্যাপারে নরসিংদী পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ পরিচালক অরবিন্দ দত্ত বলেন, গত বৃহস্পতিবার উনি বেতন ভাতা তুলেছেন বিধায় কর্মস্থলে যেতে পারেননি। নিয়মিত কর্মস্থলে না এসে হাজিয়া খাতায় স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। এর সত্যতা পাওয়া গেলে দাপ্তরিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড