• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এক সময় সিনেমা হলের মাইকিং করা সৈয়বের আঙুল ফুলে কলাগাছ

  জে রাসেল, ফরিদপুর

০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:৫০
এক সময় সিনেমা হলের মাইকিং করা সৈয়বের আঙুল ফুলে কলাগাছ
গ্রেফতারকৃত আসামিরা (ছবি : অধিকার)

এক সময় সিনেমা হলের মাইকিং করে কোনো মতে সংসার চালাতেন গাইবান্ধার সৈয়ব আলী। পরে খাবার হোটেলে ম্যানেজারির কাজ শুরু করেন। এরপর মাত্র এক বছরেই কোটিপতি হয়ে যান তিনি।

কোটিপতি হয়ে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি পদও বাগিয়ে নেন সৈয়ব। বিপুল অর্থ খরচ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি।

সৈয়ব আলীর হাতে কোনো আলাদিনে চেরাগ আসেনি। তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন স্বর্ণ প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে।

সম্প্রতি পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়েন সৈয়ব আলী ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে তাদের রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার সব তথ্য।

জানা গেছে- ইমরান, কালাম, মধু খাঁ, মাজেদুল খাঁ নামে কয়েকজনের মাধ্যমে সৈয়ব আলী জানতে পারেন কীভাবে প্রতারণা করে স্বর্ণ হাতিয়ে নিতে হয়। এরপর স্ত্রী, ভাই ও তার ছেলেকে প্রশিক্ষিত করে তাদের নিয়ে এক স্বর্ণ প্রতারণার সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলেন।

চক্রটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, নরসিংদী, ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, যশোর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় জুয়েলারি দোকানে প্রতারণা শুরু করে। মাত্র এক বছরের মধ্যেই সৈয়ব আলীর গ্যাং হাতিয়ে নেয় কোটি টাকার স্বর্ণালংকার।

গতকাল রবিবার (২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় ফরিদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মাদ ইমদাদ হুসাইন।

তিনি জানিয়েছেন, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রতারণা করে সৈয়ব গ্যাং। ভুক্তভোগী দোকানির অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর থেকে প্রতারক চক্রটি গ্রেফতার করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, এ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের বড় দাউদপুরের সৈয়ব আলী (৪৭), তার স্ত্রী নাজমিন বেগম (৪২), সৈয়দ আলীর ভাই তৈয়ব আলী (৪১) ও তার ছেলে তামিম রহমান সজিব (২১)।

তাদের কাছ থেকে ২২ ক্যারেটের চারটি স্বর্ণের চেইন, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, গত ১৬ মার্চ ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা বাজারে ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের দোকানে দুজন নারী কিছু স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করতে যান। এসময় তাদের কাছে থাকা ২ ভরি ১৫ আনা ওজনের দুটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া কানের দুল, এক জোড়া কানের রিং দেখান। দোকানি স্বর্ণ যাচাই-বাছাই করে দেখেন সেগুলো আসল স্বর্ণ।

তখন ওই দুই নারী জানান, তারা এর পরিবর্তে টাকা নেবেন না, নতুন স্বর্ণের অলঙ্কার নেবেন। ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ কর্মকার তাতে রাজি হলে ওই দুই নারী পাশের দোকান থেকে পুরাতন সোনার বাজার মূল্য যাচাই করে আসছেন বলে জানান। কিছুক্ষণ পর তারা দোকানে এসে পুরাতন অলঙ্কার দিয়ে দোকান থেকে নতুন অলঙ্কার নেন এবং যাওয়ার সময় বলেন, পছন্দ না হলে পরবর্তী সময়ে মডেল পরিবর্তন করতে আসবেন।

কিছুক্ষণ পর ব্যবসায়ী রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে তিনি পুরাতন অলঙ্কারগুলো পরীক্ষা করে দেখেন, আগের দেখানো অলঙ্কার আর এগুলো এক নয়। পরের বার তাকে ইমিটেশনের গহনা (নকল স্বর্ণ) ধরিয়ে দিয়ে তার কাছে থেকে আসল স্বর্ণের অলঙ্কার নিয়ে চম্পট দিয়েছেন ওই দুই নারী। পরে তিনি এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমদাদ জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ খোঁজখবর নিয়ে ওই দুই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে। এরপর গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে অভিযান চালিয়ে চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা একই পরিবারের সদস্য।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এ প্রতারকরা জানিয়েছে, এক বছর আগে সৈয়ব আলী স্বর্ণ প্রতারণা সম্পর্কে হাতে কলমে কৌশল রপ্ত করে। আর তার স্ত্রী নাজমিন পীরগঞ্জের লাকমিঠাপুরের বৃদ্ধা হাসনা বেগমের কাছ থেকে প্রতারণার কৌশল শেখে। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে ভাই তৈয়ব আলী ও ছেলে তামিম রহমান সজিবকে প্রশিক্ষণ দেয়। এই সৈয়ব আলী স্থানীয় একটি হত্যা মামলায় এর মাঝে গ্রেফতার হন। তারপরেও ভালোই চলছিল তাদের এই প্রতারণার ধান্দা।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড