• মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

র‍্যাব হেফাজতে মৃত্যু

পরিবারের দাবি সে নির্দোষ, সুলতানা চক্রান্তের শিকার

  কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

২৯ মার্চ ২০২৩, ১৩:৪০
পরিবারের দাবি সে নির্দোষ, সুলতানা চক্রান্তের শিকার

র‍্যাব হেফাজতে নিহত সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ শুনে অবাক হয়েছেন তার স্বজন, প্রতিবেশী ও সহকর্মীরা।

সুলতানার মামা ও নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক বলেন, আমার ভাগ্নি অত্যন্ত সাদামাটা একজন গৃহিণী। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ছোট্ট একটা চাকরি করে ছেলেটাকে মানুষ করছে সে। তার ছেলের লেখাপড়ার খরচের টাকা অনেক সময় আমাকে দিতে হয়।

আর্থিক অনিয়ম করলে তো অভাব-অনটন থাকতো না। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আমার ভাগ্নি একটা চক্রান্তের শিকার হয়েছে। আমার বিশ্বাস, সঠিকভাবে তদন্ত করলে তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে।

নওগাঁ শহরের জনকল্যাণ পাড়ায় সুলতানার ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার একমাত্র সন্তান শাহেদ হোসেন সৈকত ঘরে আছেন; কিন্তু কারও সঙ্গে কথা বলছেন না। সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

সুলতানার ছোট ভাই সোহাগ মিয়া এবং ভগ্নিপতি রফিকুল ইসলাম গত রবিবার গণমাধ্যমকে র‍্যাব হেফজাতে তার মৃত্যুর অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিলেও এখন তারা আর কোনো কথা বলছেন না।

নিহত সুলতানার ভাই সোহাগ মিয়া বলেন, আমার বোনের সঙ্গে যা ঘটেছে এটা সবাই জানে। আর কোনো কথা বলতে চাই না। মামলা করতে চাই না। আমাদের কোনো দাবি নাই।

সুলতানা জেসমিন চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত ছিলেন। আট বছর ধরে শহরের জনকল্যাণপাড়ার দেলোয়ার হোসেনের বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। প্রায় ১৭ বছর আগে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছিল তার সংসার। ছেলে শাহেদ হোসেন সৈকত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

তার ভাড়া বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুলতানা জেসমিন দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকলেও তার কোনো অস্বাভাবিক চলাফেরা কখনো চোখে পড়েনি। একদম নিভৃতভাবে চলাফেরা করতেন। তার মতো নারী অন্যের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে চাকরি দেওয়ার নাম করে মানুষকে প্রতারণা করবে এতে তিনি বিস্মিত।

র‍্যাব হেফাজতে নিহত জেসমিনের সহকর্মী নওগাঁর চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী মোমেনা খাতুন বলেছেন, জেসমিন শান্তশিষ্ট মানুষ ছিলেন। এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জেসমিনকে একজন ভালো সহকর্মী হিসেবে পেয়েছি। অতীতেও তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আমার জানা মতে হয়নি। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ ওঠায় অবাকই হয়েছি।

গত ২২ মার্চ (বুধবার) নওগাঁ সদরের হাজি মনসুর রোডের বাসিন্দা জেসমিনকে আটক করে র‍্যাব। এরপর অসুস্থ অবস্থায় তাকে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে এবং পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন শুক্রবার মারা যান জেসমিন। আটকের পর র্যাব হেফাজতে জেসমিনকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।

মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুরের হাইমচর থানার গাজীবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আল আমিন ও সুলতানা জেসমিনসহ অজ্ঞাতনামা দুই-তিনজন ব্যক্তি যুগ্ম সচিব এনামুল হকের নাম ও পদবি ব্যবহার করে ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদী এনামুল হকের অভিযোগ সুলতানার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনিসহ কয়েকজন বাদীর পরিচয় ও পদবি ব্যবহার করে ভুয়া ফেসবুক আইডি খোলেন। এরপর চাকরি দেওয়ার নামে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তবে সুলতানার মামা নাজমুল হক জানান, তার ভাগনি মোবাইল ও কম্পিউটার ঠিকমতো ব্যবহারই করতে পারতেন না। এ জন্য অফিসের সহকর্মীদের কাছে তাকে কথা শুনতে হতো। তার যে জীবনাচরণ ছিল, তাতে অন্যের নামে ফেসবুক আইডি খুলে প্রতারণা করা অসম্ভব।

সুলতানা জেসমিনের (৩৮) বাড়ি নওগাঁ সদরের হাজি মনসুর রোডে। এ মামলায় তিনি ছাড়াও মো. আল আমিন (৩২) নামে একজনকে আসামি করা হয়েছে। তার বাড়ি চাঁদপুরের হাইমচরে।

আল আমিন সম্পর্কে সুলতানা জেসমিনের স্বজনেরা বলছেন, এই নামের কারও সঙ্গে সুলতানার পরিচয় ছিল, এটা তাদের জানা নেই। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দু-তিনজনকেও আসামি করা হয়েছে।

নওগাঁ সদর থানার ওসি ফয়সাল বিন আহসান জানান, তারা জেসমিনের বিরুদ্ধে এর আগের কোনো মামলার তথ্য পাননি।

সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলেছে, মামলা দায়েরের আগে আটক, বেআইনি জিজ্ঞাসাবাদ ও পুলিশকে না জানানো সংবিধান, মানবাধিকারের মূলনীতি, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন। আর এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের নিকৃষ্ট উদাহরণ। তাদের অভিমত, আগের ঘটনাগুলোর আইনগত প্রতিকার না হওয়ায় বারবার একই ঘটনা ঘটছে।

এজাহারে বাদী যা বলেছেন বাদী এনামুল হক এজাহারে বলেছেন, মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে তার নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলেছিলেন সুলতানা জেসমিন ও তার সহযোগীরা। ওই আইডিতে সরকারি কাজ বাস্তবায়নের সময় তোলা তার (এনামুল) ছবি শেয়ার করছিলেন তারা। গত ১৯ মার্চ রাজশাহী মহানগরের রাজপাড়ায় তার কার্যালয়ের সামনে চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার তথ্যও তিনি পেয়েছেন। এসব অর্থ সুলতানা জেসমিন নিজের ব্যাংক হিসাব এবং মুঠোফোনে আর্থিক সেবার হিসাবে লেনদেন করতেন বলেও জানতে পেরেছেন। এতে তার (এনামুল) সম্মানহানি হয়েছে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড