• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

১৯৯০ সাল থেকে পত্রিকা বিলি করছেন আব্দুল আলিম

  সেলিম রেজা, সাপাহার (নওগাঁ)

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:৫০
আব্দুল আলিম
দৈনিক অধিকার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন আব্দুল আলিম (ছবি : দৈনিক অধিকার)

৩১ বছর ধরে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়-তুফান কোনো কিছুই তাকে ঘরে আটকে রাখতে পারেনি। ফজরের আজান দেওয়ার সাথে সাথেই বের হন ঘর থেকে। একটুও দেরি করার ফুসরৎ নেই। কারণ, দেরি হয়ে গেলে পত্রিকার বান্ডেল যদি কেউ নিয়ে চলে যায়! তাই পত্রিকার বান্ডেল আসার আগেই তার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। পত্রিকার বান্ডেল খুলে গুনে গুছিয়ে এবার তার দৌড়।

পাঠকের বাসা-বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ছোট বড় দোকানের অলিগলিতে তার অবিরাম ছুটে চলা। এ যেন এক নিখুঁত ডাকহরকরা। দেহে বয়সের ছাপ পড়েছে সুস্পষ্ট। কিন্তু মনে ছাপ পড়েনি এতোটুকুও। ছোটখাটো অসুখ হলেও কখনো থেমে থাকেননি তিনি। কাউকে দায়িত্বও দিতে চান না। কারণ, প্রতিদিন সকালে পত্রিকার ঘ্রাণ না শুনলে যে পেট ভরে না তার!

দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে এই ঘ্রাণটি নিচ্ছেন তিনি। শরীর না চাইলে মন চাচ্ছে না পত্রিকার হকারিটা ছাড়তে। কারণ, এই পত্রিকা বিলি করেই তিনি পেয়েছেন যশ-খ্যাতি। অনেকে পত্রিকার হকারিটা ছাড়তে বললেও রাজি নন তিনি। তার পরিষ্কার কথা, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পত্রিকা বিলি করে যেতে চাই।

বলছিলাম পত্রিকা বিলিকারী আব্দুল আলিমের কথা। নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়ার মৃত মো. বইমদ্দীনের ছোট ছেলে আব্দুল আলিম। দরিদ্র পিতার পক্ষে সম্ভব হয়নি তাকে পড়াশোনা করানো। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই শুরু করেছেন বাবার সাথে সংসারের ঘানি টানতে। নব্বই দশকের শুরু থেকে পত্রিকা বিলি শুরু করেন। পত্রিকা বিলি করাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় পেশা এবং নেশায় পরিণত হয়।

নিজস্ব ভুবনে আব্দুল আলিম বেশ সফল মানুষ। পত্রিকা বিলির টাকা দিয়েই বাবার চিকিৎসার জন্য অনেক ব্যয়বহুল অংক খরচ করেছেন। প্রায় তিন বছর আগে তার বাবা ছেড়ে যায় এই পৃথিবীর মায়া। সংসারে এক ছেলে ও মাকে নিয়ে তার বসবাস। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হলেও পত্রিকা বিলির কাজ ছাড়বেন না তিনি। করোনাকালে পত্রিকা থেকে তেমন খুব একটা মুনাফা আসে না। নিয়মিত গাড়ি-ঘোড়া না চলায় পত্রিকাও আসে না মাঝেমধ্যে। ফলে অলস সময় পার করতে হয় তাকে। তবুও নেই তার কোনো অভিযোগ।

আব্দুল আলিম বলেন, আজ থেকে প্রায় ৩১ বছর আগে থেকে আমি পত্রিকা বিলি করি। এই পত্রিকা বিলি করতে গিয়ে ইউএনও, ওসি, চেয়ারম্যান, মেম্বার থেকে শুরু করে ধনী-গরিব সবার সাথেই আমার এক ধরনের ভালোলাগা-ভালোবাসার সম্পর্ক হয়ে গেছে। অনেক হকাররা অনেক দেরিতে পত্রিকা দেয়, আবার সময়ে সময় গ্যাপ দেয়। কিন্তু আমি আল্লাহর রহমতে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবার হাতে হাতে পত্রিকা পৌঁছে দিই। যার কারণে সবাই আমাকে আদর করে, ভালোবাসে। পত্রিকার বিল নিয়ে কখনো কারো সাথে আমার দুই কথাও হয়নি। পত্রিকা দিতে গেলে বড় বড় অফিসাররা আমাকে নাম বলে ডাক দেয়। ভালো-মন্দ জানতে চায়। এটা আমার কাছে খুব সম্মানের মনে হয়। আমি মুর্খ মানুষ, পত্রিকা বিলি না করলে এতো বড় বড় মানুষগুলো আমাকে চিনতো না, জানতো না।

বর্তমানে ‘পত্রিকা বিলি করে আয় কেমন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে আমি আড়াইশো-তিনশোর ওপর পত্রিকা বিলি করেছি। করোনার পর থেকে পত্রিকা বিলি কমে গেছে। এখন একশ থেকে দেড়শ পত্রিকা বিলি করি। স্বাভাবিকভাবেই আয় কমে গেছে।

আরও পড়ুন : অনুমোদন ছাড়া ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে না ‘নগদ’

এলাকার বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, পত্রিকার হকার হলেও আব্দুল আলিম অত্যন্ত নীতিবান। নীতি-নৈতিকতার সাথে ৩১ বছর ধরে পত্রিকার ব্যবসা করে আসছেন তিনি। পত্রিকা বিলি করা ছাড়া তার ভালো থাকার সুযোগ নেই বলে জানান স্থানীয়রা।

ওডি/এএম

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড