• রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘হত্যার শিকার’ কিশোরী মিলল জীবিত, এসআই প্রত্যাহার

  অধিকার ডেস্ক

২৬ আগস্ট ২০২০, ২২:১৬
এসআই
এসআই শামীম আল মামুন (ছবি : সংগৃহীত)

তিন যুবকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর ‘ধর্ষণ ও হত্যার শিকার’ কিশোরীকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আল মামুনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকালে পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলমের নির্দেশে এসআই শামীমকে সদর মডেল থানা থেকে মাসদাইর পুলিশ লাইনে নিযুক্ত করা হয়েছে।

প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে এসপি জায়েদুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) এসআই শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় তার বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড (সংযুক্ত) করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়েছে সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাইকে।

এ ব্যাপারে সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাই বলেন, ‘আজকেই আমি সব নথিপত্র পেয়েছি। তদন্ত শেষেই বিস্তারিত বলা যাবে।’

এ দিকে, কিশোরী জীবিত উদ্ধারের ঘটনায় অভিযুক্ত তিন যুবকের পরিবারের অভিযোগ, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মামুন রিমান্ডে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে তাদের তিন পরিবারের কাছ থেকে ৪৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। এরপরও তাদের রিমান্ডে নির্যাতন করা হয় এবং ভয় দেখিয়ে তাদের স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।

অন্যদিকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান ও নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) কে এম মোশারফ হোসেন এসআই শামীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। কিন্তু মামলাটি তদন্ত করবেন পরিদর্শক আব্দুল হাই। আর এ বিষয়ে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।

তিনি বলেন, বুধবার প্রথম দিনে আমরা কিশোরী ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। একই সঙ্গে শীতলক্ষ্যা নদীর ওই ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছি। তদন্ত চলছে এবং আমরা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তবে এর জন্য সময়ের প্রয়োজন।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমের নির্দেশে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

‘আমার ছেলে যদি হত্যা করে থাকে তাহলে, জীবিত কেমন করে এলো?’

কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ’র বাবা আমজাত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার ছেলে যদি হত্যা করে থাকে, তাহলে এখন কোথা থেকে এলো?

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের চিনি না এমনকি আগে দেখিও নাই। আমরাও জানি না কিভাবে ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। ওই কিশোরী সাংবাদিকদের বলেছে, আব্দুল্লাহর সঙ্গে মোবাইলে কথায় পরিচয় ও বন্ধুত্ব।’

ছেলের আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসা করেছি কেন সে মারছে। শুরু থেকে আমার ছেলে বলছে, সে কিছু করে নাই। রিমান্ডে নিয়ে মারধর করে, ভয় দেখায়ে এ স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে।’

এ দিকে, কিশোরীর বাবা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যেভাবে সমাধান করা যায়। যাতে ওরাও বেঁচে যায় আর আমরাও বাঁচি।’

তিনি বলেন, আমার মেয়ে কোথায় আছে আমি তো জানতাম না। কোনো ষড়যন্ত্র না। ফোন নাম্বার মোবাইলে সেভ করলে ইমুতে রাকিবের ছবি ও নাম পেয়ে তাদের সঙ্গে প্রথম কথা বলি। এরপর তাদের নামে মামলা করি। এখন আইনিভাবে যেভাবে হয় সেইভাবেই যেতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৪ জুলাই থেকে নিখোঁজ হয় ওই কিশোরী। নিখোঁজের প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৭ জুলাই সদর মডেল থানায় জিডি করেন কিশোরীর মা। পরে গত ৬ আগস্ট থানায় অপহরণ মামলা করেন বাবা। পরদিন ওই মামলায় পুলিশ বন্দরের খলিলনগর এলাকার মো. আব্দুল্লাহ (২২), বুরুন্দি পশ্চিমপাড়া এলাকার ইজিবাইক চালক রাকিব (১৯) ও ইস্পাহানী খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি খলিলুর রহমানকে (৩৬) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পৃথক আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন আসামিরা। স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, ওই স্কুল ছাত্রীকে নৌকায় ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন তারা। বর্তমানে তিনজন কারাগারে রয়েছেন।

আরও পড়ুন : প্রতিবন্ধী যুবতীকে ধর্ষণ, যুবক গ্রেপ্তার

ধর্ষণ ও হত্যার নাটক

তদন্তে পুলিশ জানত পারে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়নি। ঘটনার দিন অভিযুক্ত আব্দুল্লাহার সঙ্গে ওই কিশোরী দেখা করে। পরে ইকবাল নামে একজনের সঙ্গে চলে যায়। এরপর দুইজন বিয়ে করে বন্দর কুশিয়ারা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকে।

একপর্যায়ে গত ২৩ আগস্ট ওই কিশোরী তার মাকে ফোন দিয়ে টাকা চায়। এরপর সকালে পুলিশ কুশিয়ারা থেকে কিশোরীসহ তার স্বামীকে আটক করে।

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড