• শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মহেশপুর সীমান্তে অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে কমিটি, নিষ্ক্রিয় প্রশাসন

  শাহারিয়ার রহমান রকি, ঝিনাইদহ

০৭ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৩৩
বিজিবির হাতে আটক অনুপ্রবেশকারীরা
বিজিবির হাতে আটক অনুপ্রবেশকারীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ভারতে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ঘোষণার পর ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রোহিঙ্গাদের মতো পরিবেশ তৈরির শঙ্কায় উদ্বিগ্ন সচেতন মহল অনুপ্রবেশ ঠেকাতে প্রতিরোধ কমিটি গঠন করেছেন।

জানা যায়, ভারতে এনআরসি ঘোষণার পর পুলিশি ও রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গেল বছরের নভেম্বর মাস থেকে জেলার মহেশপুর সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বেড়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশ।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ৪০ জন, দ্বিতীয় সপ্তাহে ১২৬ জন, তৃতীয় সপ্তাহে ৪৮ জন, চতুর্থ সপ্তাহে ৪৬ জন ভারতীয় নাগরিক অনুপ্রবেশ করেছেন। এরপর ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ৩৩ জন, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩৮ জন, তৃতীয় সপ্তাহে ১৪ জন এবং চতুর্থ সপ্তাহে ২২ জন অনুপ্রবেশ করেছেন। আর এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত মহেশপুর থানায় ৫১টি মামলা দায়ের হয়েছে।

এ দিকে, গেল ডিসেম্বর মাসে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে সীমান্তবর্তী যাদবপুর ইউপি চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিক প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু সদস্যদের কোনো ধরনের সম্মানি কিংবা ভাতা না থাকায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে প্রতিরোধ কমিটি।

অনেক সময় বিজিবির হাতে আটক অনুপ্রবেশকারীদের থানায় নিতেও সময় ক্ষেপণ করে থানা কর্তৃপক্ষ। এই সুযোগে সীমান্ত পার হয়ে মাঠ-ঘাট দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছেন অনুপ্রবেশকারীরা। তবে তারা অনেকেই নিজেরদের বাংলাদেশি দাবি করলেও কারও কাছেই নেই এদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র।

অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য যাদবপুর ইউপি সদস্য ফজলুর রহমান জানান, আমাদের কোনো সম্মানি বা ভাতা নেই। শুধু স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সীমান্ত পাহারা দিতে কিংবা প্রশাসনকে তথ্য দিতে কেউ আগ্রহী নয়। তাছাড়া গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব তাও সম্ভব না। তারা সবাই দিনমজুর, খেটে খাওয়া মানুষ। কাজ না করলে সংসার চলে না। এ অবস্থায় তারা তো বিনা পয়সায় সীমানা পাহারা দেবে না। সরকার বা প্রশাসন যদি কোনো ব্যবস্থা করত তাহলে হয়তো এই মানুষগুলো এগিয়ে আসত।

অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও যাদবপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদুল ইসলাম দৈনিক অধিকারকে বলেন, এখন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে লোক ঢুকছে। যখন আমাদের কমিটি হয় তখন উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে পুলিশ, বিজিবি, প্রশাসনকি কর্মকর্তারা ছিলেন। সে সময় থানা পুলিশের প্রতিনিধি বলেছিল এত আসামি রাখব কোথায়? থানায় জায়গা নেই। শিশু-নারী, পুরুষ আছে আবার তাদের খাবার-দাবার বিষয় আছে। এতে আমাদের সমস্যা হয়।

আবার বিজিবিও বলেছিল আসামি নিতে থানা গড়িমসি করে। হয়তো থানা পুলিশের এমন কারণে বিজিবিও কম আটক করছে।

ইউপি চেয়ারম্যান শাহীদুল ইসলাম বলেন, প্রতিরোধ কমিটি হলেও শীতের রাতে নোম্যানস ল্যান্ডে গিয়েকে ঝুঁকি নিয়ে পাহারা দিতে চায় না কেউ। যদি বিএসএফ গুলি করে দেয়; এ আশঙ্কায় কেউ বিনা পারিশ্রমিকে কেউ ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। যদি চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় কিংবা চলার পথে চোখে পড়ে তখন বিজিবিকে জানানো হয়।

বিজিবির হাতে আটক আবুল বাশার নামর এক অনুপ্রবশকারী বলেন, প্রায় আট বছর ধরে ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে ছিলাম। ওখানে বাঙালি রাখবে না। আমাদের কাজ-কর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। মেয়েদের কাজ করতে দেয় না। তারা বলে, তোমরা তোমাদের দেশে চলে যাও। আমার ভারতের কোনো পরিচয়পত্র নেই। বাংলাদেশেরও নেই। বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে বড়পাড় গ্রামে বাড়িতে হয়তো মার কাছে থাকতে পারে।

ওপর অনুপ্রবেশকারী নারী রেহানা জানান, মোদী বলেছে আমাদের রাখবে না। সেখানে পুলিশ ও রাজনৈতিক লোকজন খুব নির্যাতন করে। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়, ভয় দেখায়। তাই দালাল ধরে চলে এসিছি। আমাদের মতো অনেক লোক আছে যারা চলে আসবে।

অনুপ্রবেশ নিয়ে সীমান্ত পাড়ের মানুষ জানান, এখন খুবই কম আটক হচ্ছে। উপজেলায় সীমান্তবর্তী ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এই এলাকা দিয়ে যদি দু-একজন করে আসতেই থাকে তাহলে তো রোহিঙ্গাদের মতো পরিবেশ তৈরি হবে।

বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকার সুরক্ষা কমিটির জেলা সভাপতি আব্দুর রহমান দৈনিক অধিকারকে জানান, এনআরসির কারণে অনুপ্রবেশ বেড়েছে। তবে যারা সীমান্ত পার হয়ে এদেশে আসছে তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, সীমান্ত পার হওয়ার সময় দালালরা নির্জন স্থানে মেয়েদের যেমন শারীরিক নির্যাতন করছে। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে সব লুট করে নিচ্ছে। পরে আবার বাংলাদেশের এসে স্থানীয় কিছু দালাল চক্রের দ্বারা পুনরায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এক কথায় তারা খুবই অসহায় অবস্থায় সীমান্ত পার হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, এরা বাংলাদেশ নাগরিক দাবি করলেও বিজিবি বা পুলিশ কেউই সেটা নিয়ে নিশ্চিত না। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সরকরের উচিত দ্বি-পাক্ষিত বৈঠকের মাধ্যমে এর সমাধান করা। নইলে রোহিঙ্গাদের থেকেও খারাপ পরিবেশ তৈরি হতে পারে। কেন না শুধু যে অনুপ্রবেশকারী আসছে খারাপ প্রকৃতির লোক আসছে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

আরও পড়ুন: সংস্কারের অভাবে সড়কের বেহাল দশা, জনদুর্ভোগ চরমে

তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি, বিজিবি কিংবা পুলিশের কোনো কর্মকর্তা। মহেশপুর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার দৈনিক অধিকারকে বলেন, সব ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে বিজিবি, পুলিশসহ সকল প্রশাসন। এছাড়াও প্রতিরোধ কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া আছে বিজিবিকে তথ্য দেওয়র জন্য।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড