• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুবর্ণচরে শিম চাষে সাফল্য, অভাব ঘুচেছে চাষিদের

  আরিফ সবুজ, নোয়াখালী

২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:৩৫
সুবর্ণচরের বিস্তীর্ণ জমিতে শিম চাষ
সুবর্ণচরের বিস্তীর্ণ জমিতে শিম চাষ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বছর দশেক আগে কৃষক মো. সালাউদ্দিন মিয়া পৈত্তিক ভিটা ভোলার চরফ্যাশন ছেড়ে স্ত্রীর ও দুই সন্তান নিয়ে পাড়ি জমান নোয়াখালীর সুবর্ণচরে। উপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের চর বায়েজিদ গ্রামে বসতি গড়ে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে কাটত তার। এক সময়ের নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে এখন আর অভাবের লেশমাত্র নেই। বরং তার সবজি খামারে জীবিকা নির্বাহ হয় আরও পাঁচটি পরিবারের।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়, কৃষক মো. সালাহউদ্দিনের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছর আগে এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে শিম চাষে উদ্যোগী হন। মাত্র তিন মাসে সফলতার দেখা পান সালাহ উদ্দিন। মাত্র ১৩ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তিন মাসের মাথায় লাভ করেন দেড় লাখ টাকা। এরপর আর তাকে পেছনে তাকাতে হয়নি। এবার ৫ একর জমিতে শিম চাষে তার খরচ হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। ভালো পরিবেশ এবং ন্যায্য দাম পেলে বিক্রি হবে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা।

একই এলাকার চাষি মো. জামাল ফরায়েজি ও আলী আহম্মদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, শিম চাষের ব্যাপারে তাদের তেমন অভিজ্ঞতা না থাকলেও নিজের মতো করে চাষ করছেন। এ চাষে চার গুণেরও বেশি লাভ করা যায়। তবে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ভালো পরামর্শ পেলে আরও ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব হতো। এছাড়াও শিমের বাজার দর নিয়ে সরকারি তালিকা নির্ধারণের দাবি এ চাষিদের।

থোকায় খোকায় ধরে থাকা শিম (ছবি : দৈনিক অধিকার)

এদিকে নোয়াখালীর সদর উপজেলার পুর্ব চরমটুয়া গ্রামের শিম চাষি মো. শাহাদাৎ হোসেন মুরাদ জানান, এ বছর পরিবেশ অনুকুলে থাকায় প্রতিমণ শিম ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা বিক্রি করায় প্রায় চার গুণ লাভ হচ্ছে আমাদের। তবে মাঝে মাঝে সাদা মাছির আক্রমণে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এ বিষয়ে সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনের সময় আমরা সরকারি কোনো কৃষি অফিসারদের দেখাও পাই না।

সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের বয়ার বাজার এলাকার শিম চাষি মো. আব্দুর রহমান জানান, আড়ৎদাররা আমাদের থেকে কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে ক্রয় করে নিয়ে যায় ৷ অথচ বাজারে প্রতি কেজি শিম ৭০ থেকে ৮০টাকা বিক্রি হয়। এতে আমরা যেমন কম লাভবান হচ্ছি, তেমনি সাধারণ মানুষও বেশি দামে ক্রয় করতে হচ্ছে। এতে একটি চক্র মোটা অঙ্কের মুনাফা অর্জন করছে।

নোয়াখালীর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশারেফুল হাসান জানান, চলতি মৌসুমে নোয়াখালীতে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে মোট ৮০,৩২৬ মেট্রিক টন শিম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এ বছর আমরা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে পারবো। এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সহায়তা না করার অভিযোগ প্রত্যাখান করে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন হয় বলে কৃষকরা ভালো ফলন অর্জন করতে পেরেছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহেদুল ইসলাম জানান, সুবর্ণচর উপজেলা এমনিতেই উর্বর এবং এখানকার মানুষরা পরিশ্রমী যার কারণে সুবর্ণচরে কৃষিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আর আমরা সুবর্ণচরের প্রতিটি গ্রামে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ার কারণে সুবর্ণচরে এখন সব ধরনের কৃষি পণ্যের ভালো ফলন সম্ভব হয়েছে।

এ বিষয়ে সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক জনান, নোয়াখালীর আবহাওয়া মোটামুটি অনুকূলে থাকে, মাটির গুণগত মান ভালো। সেই সঙ্গে নোয়াখালীর মানুষের পরিশ্রমের কারণে তারা কৃষিতে ভালো ফলন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও সরকারিভাবে কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণ দিলে নোয়াখালী থেকে আরও অধিক পরিমাণ ফসল তারা উৎপাদন করতে পারবেন।

ওডি/ এফইউ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড