• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দেশের সেরা স্ট্রাইকার জীবন, অনুপ্রেরণা তার দাদা

  ক্রীড়া ডেস্ক

১৬ নভেম্বর ২০২০, ১০:৪০
নাবিব নেওয়াজ জীবন
নাবিব নেওয়াজ জীবন (বায়ে)। (ছবি : সংগৃহীত)

নাবিব নেওয়াজ জীবন- দেশের ফুটবলের খোঁজখবর যারা রাখেন তাদের কাছে নামটি অতি পরিচিত। এ সময়ে দেশের সেরা স্ট্রাইকার। শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নেপালের বিপক্ষে বাংলাদেশের ২-০ ব্যবধানের জয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন জীবন।

বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলির নাবিব নেওয়াজ জীবন ফুটবল পরিবারের একজন সদস্য। তার দাদা আফতাব হোসেন মন্ডল ১৯৩৯-৪০ সালের দিকে খেলেছেন কলকাতার মোহনবাগান ও কালিঘাটসহ বিভিন্ন ক্লাবে। ১৯৯৪ সালে যখন দাদা মারা যান তখন জীবনের বয়স চার কি পাঁচ বছর।

দাদাকে মনে আছে? ‘না তেমন নয়। হালকা হালকা মনে পড়ে। তিনিই আমাকে প্রথম বল কিনে দিয়েছিলেন। সেই বলসহ দাদার সঙ্গে আমার ছোট সময়ের একটা ছবি ছিল। অনেক পুরনো সেই ছবিটা নষ্ট হয়ে গেছে। ওই ছবি দেখিয়েই বাবা বলেছেন, ওই বলটি তোর দাদা কিনে দিয়েছিলেন। বলসহ দাদার সঙ্গে ছবি। দাদার ফুটবল খেলার গল্পটা বাবার কাছে শুনে শুনেই জনপ্রিয় এ খেলার প্রতি আমার ভালোবাসা তৈরি হয়েছে।’

জীবনের দাদার কারণেই এলাকায় তাদের পরিবারের আছে সুখ্যাতি। রোববার সে গল্প শোনালেন দেশের সেরা এ স্টাইকার, ‘আমাদের পরিবারের সুনাম আছে ফুটবল ফ্যামিলি হিসেবে। এলাকায় আমার দাদার অনেক পরিচিতি ছিল। বিশেষ ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। মোহনবাগানে ফুটবল খেলেছেন, তিনবার দেউলি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন।’

দাদার সম্পত্তি ভাগ হয়ে হয়ে এখন কমে গেছে। তাই জীবন ফুটবল খেলে নতুন করে জমি কিনছেন। ‘আমার দাদার ছিল দেড়শ বিঘা জমি। তখন আমাদের পরিবারের অনেক টাকা ছিল। আমরা দুই ভাই এক বোন। আমার বড় ভাইও খেলতেন। এখন ঢাকায় একটা চাকরি করেন। আমি বললে তিনি খেলা দেখতে আসেন। আমি মাঝেমধ্যে আসতে না করি। কারণ কষ্ট হবে।’

খেলা থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে কি করেছেন? জীবন জানালেন, ‘সব টাকা বাবা ও মাকে দেই। তারা আমাকে জমি কিনে দিয়েছেন। কিছু জমি বন্ধক ছিল সেগুলো ছাড়িয়েছি। শহরে ৫ শতক জমি কিনে দিয়েছেন। কিছু ধানি জমিও কিনেছেন। সব মিলিয়ে আড়াই বিঘার মতো জমি হবে। আমি নিজের নামে জমির দলিল করতে চাইনি। বাবা-মায়ের নামে কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাবা-মা বলেছেন, তোর কষ্টের টাকা, তোর নামেই জমি থাক। আমরা মারা গেলে ভাই-বোন সবার দাবি থাকবে এই জমিতে। তাই তারা আমার নামেই জমি কিনে দিয়েছেন। তারা বলেছেন- পরে যদি ভাই-বোনদের দিতে ইচ্ছে হয় দিস। আমার আম্মা অনেক ধার্মিক মানুষ। যে কারণে ছোট সময়ে আমাকে মাদ্রাসায় দিতে চেয়েছিলেন।’

ফুটবল না খেললে কি হতেন নাবিব নেওয়াজ জীবন? ‘মা চাইতেন আমাকে মাদ্রাসায় পড়াতে। আলেম করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু আমি যাইনি। কারণ, ফুটবল। আমি ফুটবল ভালোবাসতাম। যদি ফুটবল না খেলতাম তাহলে হয়তো মাদ্রাসার লাইনেই চলে যেতাম’-জানালেন নাবিব নেওয়াজ জীবন।

ঢাকার ফুটবলে নাবিব নেওয়াজ জীবন নজর কেড়েছিলেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকেই। উত্তর বারিধারা যে বছর প্রিমিয়ার লিগে ওঠে তখন বড় ভূমিকা ছিল জীবনের। ১০ ম্যাচে ১৩ গোল করে বড় ক্লাবগুলোর কর্মকর্তাদের দৃষ্টিতে এসেছিলেন। যদিও বাইন্ডিংসের কারণে প্রিমিয়ারে ওঠায় পুরনো ক্লাবেই খেলতে হয় তাকে।

আরও পড়ুন : ফুটবলকে বিদায় জানালেন আর্জেন্টাইন তারকা মাচেরানো

ওই বছর বড় দলে যেতে না পারায় ক্যারিয়ারে অনেক পিছিয়ে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে জীবন বলেন, ‘বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ আমি যখন উত্তর বারিধারায় প্রতি ম্যাচেই গোল করেছি। ফেডারেশন ১০ জনের একটা বাইন্ডিংস করে। যে কারণে বড় ক্লাবে যেতে পারিনি। আবাহনী, মোহামেডান, শেখ রাসেল, ব্রাদার্স ও বিজেএমসিসহ অনেক ক্লাবের অফার ছিল। আমার পছন্দ ছিল বিজেএমসি। কারণ, আমি জয় ভাইকে (আরিফ খান জয়) আগে থেকেই পছন্দ করতাম। বিজেএমসিতে খেলতে পারিনি। আমার সঙ্গে এমন অন্যায় করা হয়েছে। মোহামেডান যে বছর সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় সে বছর আমার খেলার কথা ছিল। কথাবার্তাও হয়েছিল। কিন্তু বারিধারার কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আমাকে খেলতে দেয়নি।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড