• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

একজন খলনায়কের নায়ক হওয়ার গল্প

  ক্রীড়া ডেস্ক

১৬ জুলাই ২০১৯, ১৭:১৬
বেন স্টোকস
ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস (ছবি: সংগৃহীত)

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে ইংলিশরা। নিজের জন্মভূমিকে হারিয়ে ইংলিশদের বিশ্বকাপ উপহার দেয়া স্টোকস এখন ইংল্যান্ডের নায়ক। ফাইনালে অপরাজিত ৮৪ রান ও সুপার ওভারে ৮ রান সংগ্রহ করে ফাইনালের সেরা ক্রিকেটার তিনি।

স্টোকস বিভিন্ন সময় বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েই আলোচনায় ছিলেন বেশি। ২০১৬ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে চার বলে চার ছয় খেয়ে বনে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের খলনায়ক। এছাড়া তিনি পানশালার সামনে মারামারি করে ক্রিকেট থেকে বেশ কিছুদিনের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় তার জেলে যাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল। এরপর মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে হয়েছিলেন সমালোচিত। এখন সে স্টোকসই ইংল্যান্ডের নায়ক। পাচ্ছেন নাইটহুড উপাধি।

স্টোকসের পুরো নাম বেঞ্জামিন এন্ড্রু স্টোকস। ১৯৯১ সালের ৪ জুন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইসচার্চে জন্ম নেন তিনি। তবে বাবা-মায়ের হাত ধরে মাত্র ১২ বছর বয়সে পাড়ি জমান উত্তর ইংল্যান্ডের কামব্রিয়ায়। বাবা জেরার্ড স্টোকস ছিলেন রাগবি খেলোয়াড় ও কোচ। ১২ বছর বয়সী ছেলের ক্রিকেট প্রতিভায় মুগ্ধ বাবা ছেলেকে ক্রিকেটার বানানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। কামব্রিয়ার নিজস্ব কোনো কাউন্টি ক্লাব না থাকায় ছেলেকে ভর্তি করলেন অখ্যাত ক্রিকেট ক্লাব ককারমাউথ সিসিতে। সে নাম না জানা ক্লাব থেকে উঠে আসা তরুণের হাত ধরেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেল ক্রিকেটের জনকরা।

২০০৬ সালে সিনিয়র ক্রিকেটে উত্তর ল্যাঙ্কাশায়ার ও কামব্রিয়া লিগ জিতল ককারমাউথ সিসি। সিনিয়রদের সে খেলায় ককারমাউথের হয়ে দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন ১৫ বছরের তরুণ স্টোকস। লিগেরই এক ম্যাচে শক্তিশালী এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মাত্র ১৩০ রানে গুটিয়ে যায় স্টোকসরা। মামুলি পুঁজিতে বড় হারের প্রহর গুনছিল ককারমাউথ। হার নিশ্চিত জেনেই ১৫ বছরের কিশোরের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক। সে ম্যাচে মাত্র ১৫ রানে বিপক্ষ দলের ছয় উইকেট তুলে নিয়ে নিজের ক্লাবকে জয় উপহার দেন স্টোকস। স্টোকসের সে দিনের হার না মানা মানসিকতা মুগ্ধ করেছিল ক্লাবের সবাইকে।

নিজের প্রথম সবকিছুর প্রতি মানুষের ভালোবাসাটা অন্যরকম থাকে। তাই কৈশোরে ছেড়ে আসা ক্লাবটির প্রতি স্টোকসের ভালোবাসা এখনো রয়েছে আগের মতোই। ২০০৯ সালে বন্যায় ভেসে গিয়ে অস্তিত্ব বিলীনের সঙ্কটে পড়েছিল স্টোকসের প্রথম ক্লাব ককারমাউথ। আর তখনই ক্লাবকে বাঁচিয়ে তুলতে আর্থিক সাহায্য করেন স্টোকস। প্রতিদানে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিজ ক্লাবের খেলোয়াড়ের খেলা দেখতে জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন করে ক্লাবটি।

ছোটবেলা থেকেই ব্যাটিংয়ে অসাধারণ পারদর্শী ছিলেন স্টোকস। মাত্র ১২ বছর বয়সে তার কাভার ড্রাইভ মুগ্ধ করেছিল সবাইকে। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই ডারহামের নজরে আসেন তিনি। ডারহাম তাদের একাডেমিতে নিয়ে আসে স্টোকসকে। এরপরই ক্যারিয়ারের উত্থান ঘটে স্টোকসের। ২০০৯ সালে ডারহামের হয়ে পেশাদার লিগে অভিষেক ঘটে তার। পরে জায়গা করে নেন ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।

দুই বছর পর ২০১১ সালে জাতীয় দলে ডাক পান এ ক্রিকেটার। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে মাঠে নামেন তিনি। এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের হয়ে ৯৫টি ওয়ানডে, ৫২টি টেস্ট ও ২৩টি টি-টুয়েন্টি খেলেন তিনি।

বিশ্বকাপ জয়ের পর শচীন টেন্ডুলকারের সাথে বেন স্টোকস

ফাইনালে খেলার অভিজ্ঞতা এই প্রথম নয় স্টোকসের। এর আগে ২০১৬ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা চার বলে ছয় হজম করে তিনি বনে গিয়েছিলেন খলনায়ক। সে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ইংলিশরা। সে ম্যাচে ২৬ রানে তিন উইকেট শিকার করে ইংল্যান্ডকে ফাইনালে উঠান তিনি। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফাইনালে শেষ ওভারে বোলিং আসেন তিনি। শেষ ওভারে উইন্ডিজদের দরকার ছিল ১৯ রান। স্টোকসের টানা চার বলে চার ছয় মেরে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। তিন বছর পর তিনিই বনে গেলেন ইংল্যান্ডের নায়ক। আবারও বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে নামেন স্টোকস। এবার আর ভুল করেননি তিনি। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বিপর্যয়ে জস বাটলারকে নিয়ে দলের হাল ধরেন এ ক্রিকেটার। খেলেন ৮৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। ম্যাচ টাই হলে সুপার ওভারে গড়ায় ফাইনাল। সুপার ওভারে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮ রান করেন স্টোকস। সুপার ওভারও টাই হলে বেশি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পায় ইংলিশরা। আর ২০১৬ সালের ফাইনালের দুঃখ ঘুচিয়ে খলনায়ক থেকে নায়ক বনে যান স্টোকস।

ওডি/এমএমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড