ক্রীড়া ডেস্ক
লিভারপুলকে শুধু জিতলেই হতো না, গড়তে হতো ইতিহাস। তার ওপর আবার আক্রমণভাগের দুই তারকা মোহামেদ সালাহ ও রবার্তো ফিরমিনো ইনজুরিতে ছিটকে গেছেন ম্যাচের আগেই। ‘অল রেড’দের দুই সেরা তারকা না থাকার স্বস্তিতেই কি না ফিরতি লেগে অনেকটা নির্ভার হয়েই খেলতে নেমেছিলেন লিওনেল মেসিরা। কিন্তু এই ভুলের কি নিদারুণ পরিণতি অপেক্ষা করছিল বার্সেলোনার জন্য, তা হয়তো তারা কল্পনাও করতে পারেনি! শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনাকে রীতিমত উড়িয়ে দিয়ে অবিশ্বাস্য জয়ে ফাইনালে উঠেছে লিভারপুল।
মঙ্গলবার (৭ মে) রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নদের হতবাক করে দিয়ে ৪-০ গোলে তথা দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে পা রেখেছে লিভারপুল। ২টি করে গোল করেছেন ডিভোক ওরিগি ও জর্জিয়ানো উইনালডাম।
এই অবিশ্বাস্য জয়ের মাধ্যমে ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় দল হিসেবে ইউরোপীয় শীর্ষ প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ৩ গোলে পিছিয়ে থেকেও দ্বিতীয় লেগের বীরত্বে ফাইনালে পা রাখল লিভারপুল। এর আগে ১৯৭০-৭১ মৌসুমে প্যানাথিনাইকোস আর ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে বার্সেলোনা একই কীর্তি গড়েছিল।
ম্যাচের মাত্র সাত মিনিটেই গোলের দেখা পেয়ে যায় সালাহ-ফিরমিনোবিহীন ইংলিশ জায়ান্টরা। লিভারপুলের অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসনের প্রচেষ্টা থেকে বল পেয়ে গোলবারের একদম কাছ থেকে লক্ষ্যভেদ করেন লিভারপুলের বেলজিয়ান স্ট্রাইকার ডিভোক ওরিগি। গোল খেয়ে কিছুটা গা ঝাড়া দেয় বার্সেলোনা। একটা অ্যাওয়ে গোল পেতে তখন মরিয়া মেসিরা। কিন্তু মেসি-কুতিনহোদের গোলবঞ্চিত করেন লিভারপুলের ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন। কিন্তু প্রথমার্ধে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে দেননি তিনি। একাই প্রায় ৪টি নিশ্চিত গোল থেকে মেসি-সুয়ারেজদের বঞ্চিত করেন তিনি।
খেলার দ্বিতীয়ার্ধে যেন আরও বেশি আগ্রাসী হয়ে ওঠে অল রেডরা। মাত্র দুই মিনিটের ব্যবধানে ২ গোল করে বার্সার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেন জর্জিয়ানো উইনালডাম। ৫৪তম মিনিটের গোলটির পেছনে অবশ্য বার্সার ডিফেন্ডার জর্ডি আলবার ভুলই বেশি। তার ভুলেই বল পেয়ে টের স্টেগানকে পরাস্ত করেন রবার্টসনের বদলি হিসেবে নামা লিভারপুলের ডাচ তারকা । পরের গোলটি আসে জেরদান শাকিরির অসাধারণ ক্রস থেকে। ডি-বক্সে ওই ক্রস থেকে পাওয়া বলে দুর্দান্তভাবে হেড করে টপ কর্নার দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন উইনালডাম। এতে করে লিভারপুলের সমতায় ফেরা নিশ্চিত হয়ে যায়।
ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে বার্সার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন ডিভোক ওরিগি। আলেক্সান্ডার-আর্নল্ডের বুদ্ধিমত্তামিশ্রিত কর্নার কিক ঠেকানোর কোনো প্রস্তুতিই ছিল না বার্সা রক্ষণের। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রথম টাচেই সবাইকে অবাক করে দিয়ে গোল করে বসেন ওরিগি। মেসি-সুয়ারেজরা বিশ্বাসই করতে না পেরে বোকার মতো তাকিয়ে রইলেন শুধু! এছাড়া কিছু যে করার আর নেই।
প্রথম লেগে জোড়া গোল করে তার দল বার্সাকে দুর্দান্ত এক জয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড মেসি। ফিরতি লেগে তিনি শুধু বেদনাহত হয়ে দেখলেন তার অর্জন তার দলের ডিফেন্ডারদের ভুলে কীভাবে ডুবল!
ওডি/এএস