• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তিনটি সেঞ্চুরি আর দুটি পাঁচ উইকেট শিকারের গল্প

  অধিকার ডেস্ক    ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:৩৭

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল
জিম্বাবুয়েকে দ্বিতীয় টেস্টে ২১৮ রানে হারাল বাংলাদেশ; (ছবি : আইসিসি টুইটার)

সিলেট টেস্টে হেরে নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে ধন্দে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াল ঢাকা টেস্টে। মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ২১৮ রানের বিশাল জয়ে সমতায় ফিরল টাইগাররা। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তার সঙ্গে ব্যাটসম্যান ও বোলাররা অবদান রাখলেন সমানভাবে।

বৃহস্পতিবার পর্দা নামল জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের মধ্যকার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের। ১-১ সমতায় শেষ হলো সিরিজ। সাদা পোশাকে রানের ব্যবধানে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয় পেল বাংলাদেশ। নিজেদের ফিরে পাওয়া এ জয়ের মূল ভিত্তি দুই ইনিংসে ব্যাটারদের তিনটি সেঞ্চুরি- যার মধ্যে একটি ডাবল এবং বোলারদের দুটি পাঁচ উইকেট শিকারের কীর্তি।

টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৫২২ রানের বিশাল স্কোর গড়ে ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। মহাকাব্যিক ডাবল সেঞ্চুরি করে রেকর্ড বুক ওলট-পালট করে দেন টাইগার ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ মুশফিকুর রহিম। খেলেন টেস্টে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি টেস্ট ইতিহাসের প্রথম উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানোর অনন্য কীর্তি গড়েন তিনি।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি করার কীর্তি গড়েন মুশফিক (ছবি : আইসিসি টুইটার)

মুশি ব্যাট হাতে ক্রিজে ছিলেন ৫৭০ মিনিট যা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে উইকেটে থাকার নজির। তিনি ২১৯ রানের ইনিংসে বল মোকাবেলা করেন ৪২১টি। বলের হিসেবেও এটি বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে দীর্ঘ টেস্ট ইনিংস।

২৬ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর মুশফিক চতুর্থ উইকেটে মুমিনুল হককে সঙ্গে নিয়ে গড়েন ২৬২ রানের রেকর্ড জুটি। এটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। পাশাপাশি এটি টাইগারদের টেস্ট ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের জুটি। পকেট ডিনামাইট খ্যাত মুমিনুল খেলেন ১৬১ রানের ঝকঝকে ইনিংস। ৩১ টেস্টের ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো ১৫০ বা তার বেশি রানের স্কোর গড়েন তিনি।

সতীর্থদের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল তাইজুল সিরিজে নেন ১৮ উইকেট (ছবি : আইসিসি টুইটার)

বাংলাদেশের বড় স্কোরের জবাবে জিম্বাবুয়েকে প্রথম ইনিংসে ৩০৪ রানের মধ্যে গুটিয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন ম্যান অব দ্যা সিরিজ তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনার ৫ উইকেট নেন ১০৭ রানের বিনিময়ে। আগের ম্যাচে সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসেও ৫ উইকেট পাওয়ায় পূরণ হয় তার হ্যাটট্রিক। তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টের টানা তিন ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারের নজির করেন তাইজুল।

২১৮ রানের বড় লিড পেলেও জিম্বাবুয়েকে ফলো-অন না করিয়ে ফের ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে ঘটে ব্যাটিং বিপর্যয়। এবার ২৫ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন চার ব্যাটসম্যান। এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। সাড়ে আট বছর পর সাদা পোশাকে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে সাইলেন্ট কিলার অপরাজিত থাকেন ১০১ রানে। তার কল্যাণে বাংলাদেশ ৪৪২ রানের বড় লিড নিশ্চিত করে ঘোষণা করে দ্বিতীয় ইনিংস।

সিজদাহরত মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে মেহেদী হাসান মিরাজ (ছবি : আইসিসি টুইটার)

রেকর্ড লক্ষ্য তাড়ায় জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা ছিল ঝলমলে। তবে মেহেদী হাসান মিরাজের ভাবনায় ছিল অন্য কিছু। প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেট নেওয়া তারকা অল-রাউন্ডার দ্বিতীয় ইনিংসে অগ্নিমূর্তিতে আবির্ভূত হন। তিনি ৫ উইকেট নেন মাত্র ৩৮ রান খরচায়। ফলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ। ৩৮ রানের মধ্যে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে সফরকারীরা দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ২২৪ রানে।

২১৮ রানেরজয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে টেস্ট সিরিজ শেষ করল বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ফরম্যাটে বাজে পারফরম্যান্সের ধাক্কা কাটিয়ে এই জয় টাইগারদের জন্য যেন কালবৈশাখী ঝড়ের পর এক মুঠো সোনালি রোদ হয়ে আসলো। ২০১৭ সালের আগস্টের পর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে পাওয়া এই জয়ে স্বস্তির সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে যোগ হলো আত্মবিশ্বাসও।