টিকে থাকার লড়াইয়ে ‘অচেনা’ ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টির সঙ্গে ক্রিকেট বিশ্বের পরিচয় দীর্ঘ ১৬ বছরের। টাইগাররা প্রথম এই ফরম্যাটের স্বাদ চেখে দেখে ২০০৬ সালে। অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে। যদিও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই ১৫ বছরে একটিবারের জন্যও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোনো টি-টুয়েন্টি ম্যাচে মাঠে নামেনি বাংলাদেশ।

তবে এবারের বিশ্বকাপে অবশ্য সেই আক্ষেপের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। বুধবার (২৭ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে প্রথমবার কোনো টি-টুয়েন্টি ম্যাচে থ্রি লায়ন্সদের মুখোমুখি হবে টিম টাইগার্স।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইংলিশদের খুব একটা অচেনা প্রতিপক্ষ নয় বাংলাদেশ। প্রায় সময়েই দ্বিপাক্ষিক কিংবা আইসিসির কোনো না কোনো ইভেন্টে একে অপরের বিপক্ষে মাঠে নামতে দেখা যায় দুদলকে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ-ইংল্যান্ডের খেলা আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ও টেস্ট মিলিয়ে মোট ম্যাচের সংখ্যা ৩১টি।

এত কিছুর পরও বাংলাদেশ আজ যেন এক ‘অচেনা’ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নামছে। কেননা টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে ইংলিশদের বিপক্ষে খেলার কোনো অভিজ্ঞতাই যে নেই মাহমুদউল্লাহ বাহিনীর। ইংল্যান্ডের জন্যও অবশ্য সেই একই কথাই প্রযোজ্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ম্যাচে উড়িয়ে দেওয়ার পরও টাইগার ক্রিকেটারদের তাই সমীহ করে দেখছে ইংলিশ শিবির।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে ইংলিশ ওপেনার জস বাটলারের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, বাংলাদেশকে সহজ প্রতিপক্ষ মনে করছেন কি-না? জবাবে বাটলার জানালেন, তা মোটেও তা নয়। তার মতে, বাংলাদেশকে তাদের সেরা চেহারায় দেখার প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রেখেছি।

বিশ্বকাপে থ্রি লায়ন্সদের বিপক্ষে টিম টাইগার্সের দারুণ দুটি অভিজ্ঞতা থেকেই বাটলারের কাছে রাখা হয়েছিল এমন প্রশ্ন। ২০১১ এবং ২০১৫ সালের দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৫ সালের বিশ্বকাপে তো এই টাইগারদের কাছে হেরেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছিল ইংলিশরা।

সেই ম্যাচের স্মৃতি এই লড়াইয়ের আগে আবার এসেছে আলোচনায়। কেননা তা কেবলই সম্ভব হয়েছিল পেসার রুবেল হোসেনের কল্যাণে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সেই ম্যাচে শেষ দুইটা উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের আনন্দে ভাসিয়েছিলেন রুবেল। ওই ম্যাচে তিনি নিয়েছিলেন মোট চার উইকেট।

কাকতালীয়ই কি-না, টাইগার ক্রিকেট প্রেমীদের নস্টালজিয়ায় ভোগার সুযোগ করে দেওয়া সেই রুবেল এই ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ডাক পেলেন বিশ্বকাপ টিমে। পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ইনজুরিতে খুলে দিয়েছে তার বিশ্বকাপ মিশনের দরজা। সাইফউদ্দিনের জায়গায় যদি তাসকিন আহমেদ আবার দলে না ফেরেন, তাহলেই কেবল এই প্রিয় শত্রুর বিপক্ষে আবারও বল হাতে মাঠ মাতাতে পারবেন রুবেল হোসেন।

বাংলাদেশ আজ ম্যাচের ঠিক আগ মুহূর্তে নিজেদের একাদশ ঘোষণা করবে। খেলা আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে হলেও, বাংলাদেশ গতকাল ভ্রমণ ক্লান্তি এড়াতে অনুশীলন করেছে দুবাইয়ের আইসিসি একাডেমী মাঠে। আবুধাবির উইকেট কেমন, গতকাল তাই সেটা পরখ করা হয়নি টিম ম্যানেজমেন্টের।

যদিও বিগত কয়েক ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে, আবুধাবির এই উইকেট স্পিনারদের হয়ে কথা বলবে। কেননা আইপিএলের শেষ যে কয় ম্যাচ এখানে হয়েছিল, সেখানে রান তুলতে ব্যাটারদের হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররাও এখানে খেলতে পারেননি স্বাচ্ছন্দ্যে।

বাংলাদেশ আজও যে তাই, তিন স্পিনার নিয়ে দল সাজাবে সেটা প্রায় নিশ্চিতই। কিন্তু ইংল্যান্ড দল আবার পাওয়ার হিটারে ভরা। তাদের টপ টু বটম সবাই কমবেশি চালাতে পারেন ব্যাট। তাও আবার মারকাটারি ঢঙে। ইংল্যান্ডের এই শক্তিই বাংলাদেশের মনে কাঁপন ধরাতে বাধ্য।

যদিও গতকাল বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসব শুনিয়ে গেছেন, সাকিব-মুস্তাফিজরা ভয় পেলে চলবে না। সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামার আগে গিবসন দাবি করেন, ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই শক্তিশালী। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করাই তাদের স্বভাব। সে জন্য মারতে গিয়ে তাদের উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হবে। তাই তোমাদের ঘাবড়ে গেলে চলবে না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষতার সঙ্গে বোলিং করতে হবে।

আরও পড়ুন : টিভিতে আজকের খেলা

এবার দেখার বিষয়, গিবসনের সেই পরামর্শ মাঠে মেনে চলতে পারেন কি-না টাইগার বোলাররা। যদিও অতীতের মতো এই ম্যাচেও টস ভাগ্য গড়ে দিতে পারে ব্যবধান। আবুধাবিতে হওয়া শেষ পাঁচ টি-টুয়েন্টি ম্যাচের চারটিতে জয় পেয়েছে আগে বল করা দল। টস জিতলে, দুই দলের অধিনায়ক তাই চাইবেন আগে প্রতিপক্ষকে ব্যাটিংয়ে নামাতে।

ওডি/কেএইচআর