ক্রীড়া ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে মহামারি করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে সাড়ে ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ লাখ ৭৯ হাজার ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশও বাঁচতে পারেনি প্রাণঘাতী করোনার হাত থেকে। দেশে এ পর্যন্ত ৩৩ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া প্রাণ হারিয়েছে তিনজন।
করোনার এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে থমকে গেছে ক্রীড়াঙ্গন। বন্ধ হয়ে গেছে দেশের সব ধরনের ক্রিকেট। দেশকে বাঁচাতে, দেশের মানুষকে সচেতন করতে সরব হয়েছেন ক্রিকেটাররা।
সাকিব, তামিমসহ সব ক্রিকেটাররাই সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এছাড়া মাশরাফিও করোনায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ৪ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তায় এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে মানুষকে নানা পরামর্শ দিয়েছেন সদ্য সাবেক এ অধিনায়ক।
দৈনিক অধিকারের পাঠকদের জন্য মাশরাফির ভিডিও বার্তাটি তুলে ধরা হলো-
‘আসসালামু আলাইকুম, আশা করি, সবাই ভালো আছেন। যদিও এই মুহূর্তে ভালো আছেন বলাটা ঠিক না, কেননা সবাই এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
তারপরও কথা বলতে হবে। করোনা ভাইরাস, আমরা সবাই জানি, অনেকেই কথা বলছে। যেখানেই যাবেন, সামাজিক মাধ্যম বলেন... করোনা ভাইরাস নিয়ে সবাই আতঙ্কিত এবং আতঙ্কিত না হওয়ারও কোনো কারণ নেই।
পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোও শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারা কোনোভাবেই পেরে উঠতে পারছে না। এখন আমাদের করণীয় কী? আমরা যত বড় বড় দেশগুলো দেখছি, ভেঙে পড়ছে। আমাদের দেশ তো এমনিতেই ছোট, মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি।
আমাদের যদি এমন সংকট আসে, আল্লাহ না করুক, কী হতে পারে আমরা সবাই বুঝতে পারছি। তাই এই মুহূর্তে করণীয় অনেক কিছু আছে, যেগুলো আমি মনে করি যে, আমাদের সবারই করা উচিত।
এক হচ্ছে, ঘরে বসে আল্লাহকে ডাকা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া এবং আল্লাহকে বলা যে, আমাদের ওপর রহমত করুন। এই ধরনের দুর্যোগ থেকে আমাদের সহযোগিতা করুন। কারও যেন বিপদ না হয়, সবাই যেন সুস্থ থাকি।
দ্বিতীয়ত, করণীয় যেগুলো আছে আমাদের... সেটা হচ্ছে, অবশ্যই অবশ্যই প্রবাসী ভাই ও বোনেরা যারা বিদেশে থাকেন, এসেছেন দেশে বা বেড়াতে গিয়েছিলেন সেখানে, এসেছেন। আপনাদের অনেক কিছু করার আছে। প্রথম হচ্ছে, অবশ্যই নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলা। কোয়ারেন্টিন শব্দটা ব্যবহার না করে বলব গৃহবন্দি থাকা এবং সেটা আপনার পরিবার নিয়ে না, আপনার ১৪ দিন আলাদা থাকা।
১৪ দিন পার হওয়ার পর যদি আপনি অসুস্থ না হন, তখন আপনার পরিবারকে নিয়ে ঘরে থাকা। যতক্ষণ না কোনো ঘোষণা আসছে, ডাক্তাররা বা সমাজের উচ্চপদস্থরা ঘোষণা না করছে যে, আপনারা নিরাপদ, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার ঘরে থাকা উচিত। এটা হচ্ছে প্রথম ব্যাপার।
এরপরে আমাদের অবশ্যই করণীয় আছে। যেটা হচ্ছে, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া নিয়মিত, নিয়মিত ১৫-২০ মিনিট পর পর পানি পান করা এবং ঘর, পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা। এসব ব্যাপার কিন্তু আছে। আমাদের কিন্তু এইসব নিয়ম-কানুনগুলো মেনে চলতে হবে।
এর থেকে কঠিন অবস্থায় যাওয়ার পর কিন্তু মেনে চলার সুযোগ আমরা পাব না। তাই আমাদের উচিত, এখনই এই জিনিসটাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করা। কারণ এটা একটা রাষ্ট্রীয় সংকট হয়ে যেতে পারে এবং আমরা কেউই জানি না, আমাদের আশেপাশে কার আছে। আমরা বের হচ্ছি, আমরা কার হাত ধরছি, আমরা কী করছি, আমরা কেউই জানি না যে, এই ভাইরাসটা কে নিয়ে চলছে।
কারণ এই ভাইরাসটা ১৪ দিন সময় নেবে আপনার বোঝার জন্য। তাই আমার মনে হয় যে, এটা গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার। আমরা যে এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না, এটা যদি আমাকে, আপনাকে, আমাদের পরিবারকে বা সামাজিকভাবে কাউকে আঘাত করে, তখন কিন্তু সামাল দেওয়া খুব কঠিন হবে।
আগেও বলেছি ইতালির মতো দেশ, বড় বড় দেশগুলো কিন্তু হিমশিম খাচ্ছে। সুতরাং এখানে আমরা কতটুকু পারব, সেটা ভাবার সময় এসেছে। কারণ দেশটা অনেক ছোট, মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই এখানে কিন্তু ভাবার সময় আছে। তো আমাদের যে করণীয় জিনিসগুলো আছে, আমরা করি। এটা করা খুবই প্রয়োজন।
একটা কথা মনে রাখবেন যে, আপনার ঘরের অধিনায়ক কিন্তু আপনি নিজে। আপনি যদি আপনার ঘরের অধিনায়কত্ব ঠিকমতো করতে পারেন, আমি নিশ্চিত যে, এর প্রকোপ কিছুটা হলেও কমাতে পারব। এছাড়া ধ্বংসাত্মক হওয়ার সুযোগ কিন্তু বেশি। তাই আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা দয়া করে ঘরে থাকুন। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
আপনি নিজে সুরক্ষিত থাকুন, আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন, আপনার সমাজকে সুরক্ষিত রাখুন। এটা আপনার, আমার, সবার দায়িত্ব। এই মুহূর্তে কোনোভাবেই বাইরে আসা মেনে নিতে পারি না কিংবা বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়া।
আমরা অনেকসময় বলি যে, আমরা সময় পাই না, কাজের ব্যস্ততা। এ কারণে পরিবারকে সময় দেওয়া হয় না। তো আপনি এখন সময় দেন। এখন আপনার কাজের ব্যস্ততা নাই। আর সবাই দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করুন। যতটুকু না করলেই নয়। তারপরও আমি বলব, ঘরে থাকুন, আপনার সমাজকে রক্ষা করুন। ভালো থাকুন সবাই।’
ওডি/এমএমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড