• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিশ্বকাপ নয়, রাজধানীবাসীর চাওয়া জিপিএ ফাইভ!

  আল-আমীন পাটোওয়ারী

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:২৩
বিশ্বকাপ নয়, রাজধানীবাসীর চাওয়া জিপিএ ফাইভ!
ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। সেসময় ওয়ানডে ক্রিকেটে এক সঙ্গে ১১ জন ক্রিকেটারের ওয়ানডে অভিষেক হয়। কারণ, ওট‍াই ছিল বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ।

অভিষেক হওয়া ওই ম্যাচের একাদশের ছয়জনই (রকিবুল হাসান, গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, রফিকুল আলম, গোলাম ফারুক, গোলাম নওসের ও সামিউর রহমান) ছিলেন ঢাকায় জন্ম নেওয়া, বেড়ে ওঠা ক্রিকেটার। বাকিদের মধ্যে চারজন চট্টগ্রামের ও একজন মাত্র কুষ্টিয়ার।

২০০০ সাল পরবর্তী সময়েও কিছুদিন জাতীয় দলে আধিপত্য করে গেছেন ঢাকার ক্রিকেটাররা। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার দেশের ক্রিকেটে বড় ভূমিকাও রেখেছেন। যেমন- মোহাম্মদ আশরাফুল, শাহরিয়ার নাফিস, মোহাম্মদ রফিক, খালেদ মাহমুদ সুজন, জাভেদ ওমর, হান্নান সরকার, আতাহার আলী খান ও মেহরাব হোসেন অপির মতো তারকারা।

যারা এখনো ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকলেও ক্রিকেটার গড়ে তুলতে পারছেন না। গর্ব করার মতো ঢাকার ক্রিকেট আভিজাত্য টিকিয়ে রাখা যায়নি। বর্তমান সময়ে পেসার তাসকিন আহমেদ ছাড়া আর কেউই জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন না। এটি ২০১৫ সালের পর থেকেই হচ্ছে।

ঢাকা থেকে কেন উঠে আসছে না জাতীয় পর্যায়ের ক্রিকেট প্রতিভা? এ বিষয়ে দুদিন আগে কথা বলেছিলেন সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান একটি ক্লাবের পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজধানীতে ক্রিকেট মূলত বাণিজ্যিক হয়ে উঠেছে। যার ফলে সিনিয়ররা সবাই ক্লাব গঠনে ব্যস্ত। দেশের ক্রিকেটের মান বাড়াতে কেউই তেমন কাজ করছে না।

এক সময় দেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ক্রিকেটার আসত ঢাকা থেকে। কিন্তু এখন সেটা নেই। পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ক্রিকেটারদের ওপর ভর করতে হচ্ছে ক্রিকেট বোর্ডকে।

উন্নত ক্যারিয়ার, উচ্চ জিপিএ আর অবকাঠামোগত সংকটে মাঠ বিমুখ হয়েছে রাজধানীর কিশোর-কিশোরীরা। ব্যাপারটা একটু খটকা লাগার মতো। তবুও এটাই সত্যি। পরিবার থেকে রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চাপ। ভালো ফলাফল বলতে যেটা বোঝায়, সেই জিপিএ ফাইভ! অর্জনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা এখানে মুখ্য। মুক্ত বাতাস গ্রহণের সময় নেই বদ্ধ এ নগরীতে। আছে সহপাঠী কিংবা প্রতিবেশীর সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। রেজাল্ট একটু খারাপ মানেই জীবন শেষ! এটাই মা-বাবাদের মাথা ব্যথার কারণ।

ঢাকাকে অনেক আগেই পেছনে ফেলে ক্রিকেটে একক আধিপত্য করছে খুলনা বিভাগ। সেখান থেকেই উঠে এসেছেন- মাশরাফি, সাকিব, রুবেল, ইমরুল, এনামুল, সৌম্য, মুস্তাফিজরা। জাতীয় দলের বৃত্তের মধ্যে আছেন রবিউল ইসলাম, আল-আমিন হোসেন, জিয়াউর রহমানরা।

অথচ ক্রিকেটার তৈরির আঁতুড়ঘর ঢাকা থেকে আসছে না কোনো ক্রিকেটার! রাজধানীর বাচ্চাদের ওপর চাপ থাকে অনেক; আর সেটা কেবলই পড়াশোনাকে কেন্দ্র করে! ভালো ফলাফলের জন্য চেষ্টার কোনো অন্ত রাখে না পরিবারের অভিভাবকরা। নামি-দামি স্কুলে ভর্তি করানো, প্রাইভেট টিউটরের কাছে নিয়ে যাওয়া, কোচিং থেকে দৌঁড়ঝাপ করে ফিরে আবার হোম টিউটরের কাছে দু-তিন ঘণ্টা বসে থাকা, ব্যস! এতেই ভালো ফলাফল আশা করেন রাজধানীবাসী। কিন্তু তাতে মরে যায় স্বপ্ন, ফিকে হয় আশা আর জাতি পায় হতাশাচ্ছন্ন প্রজন্ম।

এতকিছুর মধ্যে শুধু ক্রিকেট না কোনো খেলাতেই মনোনিবেশ করা হয় না কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। যার ফলে রফিক, আশরাফুল, নাফিস কিংবা তাসকিনরা আর বেড়ে ওঠেন না!

তার একটা বড় প্রমাণ মিলেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দলে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবার যুব বিশ্বকাপ জেতানো দলে ছিলেন ১৬ জন ক্রিকেটার। যার মধ্যে একজনও ঢাকার ছিলেন না! বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) আঞ্চলিক শাখা দিনাজপুর থেকে ছিলেন ৮ জন। এছাড়া বগুড়া, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও নড়াইলের ক্রিকেটারে ভর করে বিশ্বকাপের শিরোপা পেয়েছে বাংলাদেশ।

পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের প্রতিযোগিতায় নেমে শৈশব কৈশোর হারিয়েছে আমাদের সন্তানরা। সেই সঙ্গে হারিয়েছে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের সোনালি ভবিষ্যতের কিছু তারকা। বই আর রেজাল্টের পিছে ছুটতে গিয়ে মাঠে আর যাওয়া হয় না তাদের। তাই জন্ম হয় না নতুন আশরাফুল, রফিক, আতাহার আলী, নাফিস কিংবা তাসকিন আহমেদদের।

তবে ঢাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ক্রিকেটের প্রতি ঝুঁকতে না দেওয়ার একটা বড় কারণ মাঠের সংকট! জাতীয় কিংবা বয়সভিত্তিক দলে ঢাকা মহানগরের খেলোয়াড় তুলনামূলক কম হওয়ার বড় কারণ মাঠ নেই। ভালো অনুশীলনের সুযোগ নেই ঢাকা শহরে। একজন ভালো বোলারের যেখানে নতুন বলে এক-দুই ঘণ্টা নেটে বোলিং করার কথা, সে হয়তো পুরনো বলে ১০-১৫ মিনিট বোলিংয়ের সুযোগ পাচ্ছে। মফস্বলে এই সমস্যাটা নেই। সেখানে ঢাকার তুলনায় খেলোয়াড়ের সংখ্যাও কম। পর্যাপ্ত মাঠ আছে, চাইলে মফস্বলের খেলোয়াড়েরা অনেক প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারে।

নানা প্রতিযোগিতায় নিয়মিত সাফল্য পাওয়া ক্রিকেট ক্লাবগুলোর চুম্বক অংশই ঢাকার। কিন্তু তা অন্য জেলার ক্রিকেটারদের ধার করে। সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে গলির ক্রিকেটারই হবে একদিন দেশের ক্রিকেটের বড় নাম।

ওডি/এএপি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড