• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অথচ আকবর আলীর নাম বিশ্বকাপ দলে ছিল না

  ক্রীড়া ডেস্ক

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৩২
আকবর আলী
আকবর আলী (ছবি : সংগৃহীত)

তৃতীয় মোগল সম্রাট জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। ‘আকবর দ্য গ্রেট’ নামেই সুপরিচিত ছিলেন। ভারতবর্ষে মোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় তাকে। এ সম্রাটের নামের সঙ্গে মিল থাকায় ‘আকবর দ্য গ্রেট’ উপাধিই পেয়েছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলী।

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) আকবর আলীর নেতৃত্বে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে বাংলাদেশ। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে হট ফেবারিট ভারতকে হারিয়ে স্বপ্নের শিরোপায় চুমো আঁকলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশের এই জয়ে গোটা দলের ভূমিকাই প্রশংসনীয়। তবে ফাইনাল জয়ের নায়কের ভূমিকায় ছিলেন আকবর আলী। তার নেতৃত্বেই প্রথমবার আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়ল বাংলাদেশ।

পরম ধৈর্য ও দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশকে রূপকথার জয় এনে আকবর আলী কি না ছিলেন না বিশ্বকাপ দলের তালিকাতে! ছিলেন না বিসিবির বিশ্বকাপ দলের রাডারেও। এমনটাই জানিয়েছেন বিসিবির জুনিয়র সিলেক্টর হান্নান সরকার। তবে তার দলে সুযোগ পাওয়ার পেছনে ভূমিকা ছিল হান্নান ও বিকেএসপির প্রধান কোচ হাসানের।

দেশের স্বনামধন্য গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হান্নান সরকার বলেন, ‘আমরা বিকেএসপিতে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু খেলোয়াড় কম ছিল। ফলে বিকেএসপির মতি ভাইকে বলি একজন খেলোয়াড় দিতে। তিনি বিকেএসপি ক্রিকেটের চিফ কোচ হাসান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে আকবরের নাম বলেন। একাদশে নিয়ে নিই তাকে। ছেলেটা ভালো স্কোর করে, সম্ভবত ৯৩ রান হবে। সে কিন্তু আমাদের রাডারে ছিল না। কারণ আমার জানা ছিল না, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার মতো বয়স আছে তার। মতি ভাই আমাকে বললেন, ‘আকবরের তো বয়স আছে, ওকে নিবা না দলে।’ বয়স আছে সেটা তো জানি না। বিকেএসপির কাছ থেকে ওর পাসপোর্টের কপি চেয়ে নিই এবং বোন টেস্ট করাই। তখন দেখলাম ওর বয়স আছে। বোন টেস্টে ১৭ বছরের মতো এসেছে। এরপর দলে নিই। প্রথম দিকে তৌহিদ হৃদয় অধিনায়ক ছিল। দুই ম্যাচ পর আকবরকে অধিনায়ক করি। সে খুব ভালো করে। তার নেতৃত্বেই তো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো।’

ইয়ুথ ক্রিকেট লিগে যে দলে খেলত আকবর, তার ম্যানেজার ছিলেন হান্নান সরকার। ২০১৭ সাল থেকেই এই তরুণের খেলা মুগ্ধ করেছিল ম্যানেজারকে। হান্নান বলেন, ‘আকবরকে গতবারই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম; কিন্তু নির্বাচনে আমি ছিলাম না, তাই নেওয়া হয়নি। এবার আমি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ছিলাম তাই তাকে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।’

আকবরের নেতৃত্বগুণ সহজাত। অনূর্ধ্ব-১৪ দল থেকেই অধিনায়ক তিনি। আকবরের বিকেএসপির কোচ মাসুদ হাসান বলছিলেন আকবরের আকবর আলী হয়ে ওঠার গল্প, ‘ও ছাত্র হিসেবে ভালো। খুব ঠান্ডা মাথার ক্রিকেটার। লেগে থাকলে প্রতিভাবান একজন ক্রিকেটার হতে পারবে দেশের জন্য। অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ এবং অনূর্ধ্ব-১৮ দলের অধিনায়ক ছিল আকবর। বিকেএসপির হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলেছে। লিগে বিকেএসপি দলের অধিনায়কও সে। টানা অধিনায়কত্ব করায় তার নার্ভ শক্ত হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারে ছেলেটা।’

বিকেএসপি থেকে গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন আকবর। ভালো ফল করলেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করেননি। বরং বিকেএসপিতেই থেকে গেছেন ডিগ্রি শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে। আগামী তিন বছর বিকেএসপিতে গ্র্যাজুয়েশন করতে করতে সুশৃঙ্খল প্রশিক্ষণ এবং লিগে খেলার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেকে আরও পরিণত করে তুলতে পারবেন আকবর। নিয়মিত ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। সরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে নিয়মিত ক্রিকেট প্রশিক্ষণ করা যেত না। এ দিক থেকেও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বলতে হবে ক্রিকেটার আকবরকে।

বিকেএসপির কোচ মাসুদ হাসানের বড় স্বপ্ন আকবরকে নিয়ে, ‘ওর যা মেধা এবং একাগ্রতা তাতে সবকিছু ঠিক থাকলে সে ক্রিকেটার হবে। আমার বিশ্বাস, একদিন জাতীয় দলের অধিনায়কও হবে আকবর।’

আরও পড়ুন : বিশ্বকাপের সেরা একাদশে তিন বাংলাদেশি, কাপ্তান আকবর

বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক হওয়ার পরও যে ছেলে আবেগ বশে রেখে মাটিতে পা রাখে এবং আগামী দিনের কথা ভাবে, স্বাভাবিকভাবেই তার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ওডি/এএপি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড