ক্রীড়া ডেস্ক
ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের যুবারা। নাটকীয় ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে জিতেছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা। এটি বাংলাদেশের প্রথম কোনো বিশ্বকাপ শিরোপা জয়।
এর আগে, মেহেদী মিরাজ-সাইফউদ্দিনদের হাত ধরে ২০১৬ সালে নিজ দেশে যুব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল যুবারা। দক্ষিণ আফ্রিকায় চলমান বিশ্বকাপে এবার সে সাফল্যকেও ছাড়িয়ে গিয়ে শিরোপাই উঁচিয়ে ধরল আকবর আলীরা।
১৭ জানুয়ারি যুব বিশ্বকাপের পর্দা উঠলেও বাংলাদেশের মিশন শুরু হয় ১৮ জানুয়ারি। যুব বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ ছিল সি গ্রুপে। একই গ্রুপে বাংলাদেশ ছাড়াও ছিল জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড ও শক্তিশালী পাকিস্তান। তাদের টপকে গ্রুপ সেরা হয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ছোট টাইগাররা। এরপর কোয়ার্টারে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ও সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে নিশ্চিত করে ফাইনাল। আর ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে তো ইতিহাসই রচনা করে জুনিয়র টাইগাররা।
বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ মাঠে নামে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। জুনিয়র টাইগারদের প্রথম ম্যাচেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় বৃষ্টি। তবে সে বাধাকে উপেক্ষা করে আফ্রিকান দলটিকে উড়িয়ে দিয়ে শুভ সূচনা করে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের চাপের মুখে পড়ে জিম্বাবুয়ে। ২৮.১ ওভারে জিম্বাবুয়ে ১৩৬ রান তুলতেই তারা হারায় ৬ উইকেট। এরপরই নামে বৃষ্টি। পরে বৃষ্টি থামলেও জিম্বাবুয়ে আর ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায়নি। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২২ ওভারে ১৩০। ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডবে ১১.২ ওভারেই ১ উইকেট হারিয়ে সে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় যুবারা। ৩৩ বলে ৫৮ রান করে ম্যাচসেরা হন পারভেজ হোসেন।
দ্বিতীয় ম্যাচেও বড় জয় তুলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডকে ৭ উইকেটে উড়িয়ে দেয় আকবর আলীর দল। এ ম্যাচেও পরে ব্যাট করে বাংলাদেশ। টাইগার বোলারদের তোপে ৩০.৩ ওভারে মাত্র ৮৯ রানেই গুটিয়ে যায় স্কটল্যান্ড। আর ৯০ রানের মামুলি লক্ষ্য ১৬.৪ ওভারে ৭ উইকেট হাতে রেখেই টপকে যায় বাংলাদেশ। হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন রকিবুল।
তৃতীয় ম্যাচে গ্রুপসেরা হওয়ার লড়াইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামে যুবারা। এ ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। পাক বোলারদের তোপে ২৫ ওভারে মাত্র ১০৬ রানেই ৯ উইকেট হারায়। বৃষ্টিতে শেষরক্ষা হয় যুবাদের, ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় দুই দলকে। তবে রান রেটে এগিয়ে থেকে গ্রুপ সেরা হয় বাংলাদেশ।
কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। তাদের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে তামিম, শাহাদাত ও হৃদয়ের হাফসেঞ্চুরিতে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৬১ রান জমা করে আকবর আলীরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের তাণ্ডবে ভেঙে পড়ে প্রোটিয়া ব্যাটিং লাইনআপ। ১৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। ফলে ১০৪ রানের দাপুটে জয় পায় বাংলাদেশ। ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন রকিবুল।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পচেফস্ট্রুমে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় টাইগার যুবারা। টস জিতে কিউইদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান আকবর আলী। এরপর দাপট দেখায় বাংলাদেশি বোলাররা। শরিফুল-শামিমদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২১১ রান সংগ্রহ করতে পারে নিউজিল্যান্ড। শরিফুল সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেন। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩২ রানে দুই উইকেট হারালেও মাহমুদুল হাসান জয়ের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচসেরা মাহমুদুল করেন ১০০ রান।
ঐতিহাসিক ফাইনালে রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) মুখোমুখি হয় ভারত ও বাংলাদেশ। ফাইনালের আগে বিশ্বকাপে অপরাজিত ছিল ভারত। এছাড়া সর্বোচ্চ চারবার যুব বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ডও তাদের। শক্তিশালী সে ভারতকেই ধরাশায়ী করে বিশ্বকাপ জিতে নেয় টাইগার যুবারা। টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান আকবর আলী। ভারতের যশস্বী জয়সওয়াল ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যানই দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশের বোলারদের সামনে। যশস্বী জয়সওয়ালের ৮৮ রানের ওপর ভর করে ৪৭.২ ওভারে মাত্র ১৭৭ রানে অলআউট হয় তারা। সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়ে ভারতকে ধসিয়ে দেন অভিষেক দাস। এছাড়া শরিফুল ইসলাম ও তানজীম হাসান সাকিব নেন দুটি করে উইকেট।
জবাব দিতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তানজীদ হাসান ও পারভেজ হোসেন ইমন গড়ে তোলেন ৫০ রানের জুটি। তবে এরপরই পথভ্রষ্ট হয় বাংলাদেশ। ১০৬ রান তুলতেই হারায় ৬ উইকেট। ব্যথা পেয়ে মাঠ ছাড়া পারভেজ এরপর বাধ্য হয়েই আসেন ব্যাটিংয়ে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আকবর আলীর সঙ্গে গড়ে তোলেন ৪১ রানের দুর্দান্ত জুটি। এরপর পারভেজ আউট হলে রকিবুলকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন আকবর। অধিনায়কের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে অপরাজিত দল হিসেবে শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় হন আকবর।
ওডি/এমএমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড