• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাওয়ালপিন্ডিতে ‘টেস্ট দল’ হিসেবে দাঁড়াতে পারবে বাংলাদেশ?

  আল-আমীন পাটোওয়ারী

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১০:০৪
বাংলাদেশ-পাকিস্তান
ভারতের বিপক্ষে টেস্টে চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাচের মুহূর্ত (ছবি : সংগৃহীত)

২০০০ সালে প্রথম টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। ২০ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটে বিচরণ করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অথচ এখনো উন্নতি ঘটেনি। এখন পর্যন্ত ১১৭ টেস্ট খেলেছে টিম টাইগার্স। ৮৮টিতেই হেরেছেন তারা। এর মধ্যে ৪২টিতে ইনিংস ব্যবধানে হার। জিতেছে ১৩, ড্র ১৬টিতে। তবে কোনো টাই নেই।

ঘরের মাঠে টেস্ট বাংলাদেশ যতটা না সফল তার ঠিক উল্টো পিঠ দেশের বাইরে। মাত্র ৪টি সিরিজ জিততে পেরেছে বাংলাদেশ দল, সবই দেশের মাটিতে। বিদেশের মাটিতে সেরা সাফল্য বলতে ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ে ও ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে ১-১ সমতায় সিরিজ ড্র করা। আর ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলেও স্বাগতিকদের সেই দলটি ছিল দ্বিতীয় সারির, নিয়মিতরা খেলেননি।

এ দিকে, বাংলাদেশের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যাত্রার শুরুটাও ভালো হয়নি। যেখানে এই প্রতিযোগিতায় সব দল একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। বাস্তবতার কথা চিন্তা করলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনুমান করা খুবই সহজ ব্যাপার। টেস্ট জয় বাংলাদেশের জন্য অঘটনের জন্ম দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

তবে সেই আর যাই হোক, দীর্ঘদিনের আক্ষেপ ভুলতে চান বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। জিততে চান দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ। সেই সুযোগ এখনো টাইগারদের সামনে। দুই পর্বের প্রথম দফায় মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তান সফরে যাবে বাংলাদেশ। যেখানে হবে একটি টেস্ট। পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে একটি টেস্ট জেতাই কঠিন, এরপরও শিষ্যদের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যটা বেঁধে দিয়েছেন ডোমিঙ্গো।

টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের ৯ নম্বর দল বাংলাদেশ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুটাও ভাল হয়নি। ভারতের মাটিতে লজ্জায় ডুবেছে মুমিনুল হকের দল। সিরিজের দুই টেস্টই শেষ হয়েছে ৩ দিনের মাথায়। এর আগের সিরিজে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের কাছে হেরেছে। তার আগে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে হোয়াইটওয়াশ। সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ ২০১৮ সালে জিতেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে টেস্ট জয় থেকে দূরে থাকা বাংলাদেশের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ১৭ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে ২ টেস্টের সিরিজ।

পাকিস্তানে গিয়ে জেতার ব্যাপারে আশাবাদী ডোমিঙ্গো। যদিও এবার দলে কয়েকজন অপরিহার্য ক্রিকেটার নেই। মুশফিকুর রহীম নিজেকে আগেই সরিয়ে নিয়েছেন এ সফর থেকে। সাকিব আল হাসান নেই বলে মিডল-অর্ডারে আগে থেকেই একটা শূন্যতা ছিল, এবার মুশফিকের শূন্যস্থানটাও পূরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। এছাড়া ইনজুরির কারণে মোসাদ্দেক হোসেন, সাদমান ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ নেই এবং অফফর্মের কারণে বাদ পড়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এর সঙ্গে আবার প্রস্তুতির ঘাটতি তো আছেই।

পাকিস্তান সিরিজের জন্য ১ ফেব্রুয়ারি ১৪ সদস্যর দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। দলে জায়গা পেয়েছেন তরুণ ক্রিকেটাররা। এই দল নিয়েই এবার বাংলাদেশের হতাশা দূর করতে চান ডোমিঙ্গো। বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়ের লক্ষ্য স্থির করেছেন এই প্রোটিয়া। তাইতো ম্যাচের আগে নিজেই ব্যাটিং অর্ডার ঠিক করে রেখেছেন। ব্যাটিং অর্ডারে মোটামুটি একটা পরিবর্তন আসছে, ডোমিঙ্গো একটা রূপরেখাও তৈরি করে রেখেছেন।

ভারত সফরে দুই টেস্টেই চার ও পাঁচে ব্যাটিং করেছেন মুশফিক ও মিঠুন। মিঠুন স্কোয়াডে আছেন, আগের জায়গাতে অর্থাৎ পাঁচ নম্বরেই মিঠুনকে পাঠানোর পরিকল্পনা বাংলাদেশের। চার নম্বরে তাই (মুশফিকের জায়গাতে) পাঠানো হতে পারে অধিনায়ক মুমিনুল হককে, দেশ ছাড়ার আগে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে এমনটি জানিয়েছেন হেড কোচ।

ডোমিঙ্গো জানিয়েছেন, ‘এই মুহূর্তে মুমিনুল চারে। আমি শান্তকে ম্যাচে খেলাতে চাই। সে হয়তো তিনে খেলবে। মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ পাঁচ ও ছয়ে। এরপর লিটন হয়তো সাত নম্বরে। এটাই হতে পারে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের ব্যাটিং লাইনআপ।’

এখন আসল কথা হচ্ছে, টেস্টের জন্য যে দল দিয়েছেন কোচ; তাদের সাম্প্রতিক পারফম্যান্স কেমন ছিল তার দিকেই একটু খেয়াল করা যাক- শুরুতেই ওপেনিংয়ের কথায় আসি; দেশসেরা ওপেনার তামিমের সঙ্গে এবার হয়তো দেখা যাবে তরুণ সাইফ হাসানকে। গত বছরের নভেম্বরে ভারত সফরের টেস্ট দলে প্রথমবার ডাক পেয়েছিলেন সাইফ। তবে প্রথম টেস্টে সুযোগ মেলেনি খেলার।

ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ইমরুল কায়েস ও সাদমান ইসলাম অনিকের ব্যর্থতায় প্রায় নিশ্চিতই হয়ে যায় ডানহাতি ওপেনার সাইফের অভিষেক হতে যাচ্ছে। সেভাবেই প্রস্তুত করা হচ্ছিল তাকে। কিন্তু কলকাতার ইডেনে ঐতিহাসিক দিবারাত্রির টেস্ট শুরুর একদিন আগে অনুশীলনে নেমে ডান হাতের আঙ্গুলে আঘাত পান তিনি। শেষ পর্যন্ত আর খেলা হয়নি তার। তবে এবার অভিষেকের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ দল। ডোমিঙ্গো সরাসরিই বলে দিয়েছেন, এই টেস্টে অভিজ্ঞ তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিং করতে নামবেন সাইফ। অর্থাৎ টেস্ট দিয়ে সাইফের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের নিয়মিত খেলার ঘটনা বিরল। ৬ বছর পর প্রথম শ্রেণির আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) খেলতে নেমেছিলেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম। আর খেলতে নেমেই ‘ট্রিপল’ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। দেশের মাটিতে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে তার ইনিংসের চেয়ে বড় ইনিংস আর কারও নেই। পাকিস্তান সফরের আগে তামিমের এমন ফর্ম বাংলাদেশকে ভালো কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

কোচের দেওয়া একাদশে আরেক ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তও দীর্ঘদিন পর টেস্ট দলে ফিরেছেন। অনেকদিন পর জায়গা পাওয়া শান্তর জন্যও এটা বড় সুযোগ দলে নিজের জায়গা পাকা করার জন্য। তামিম-সাইফের পরই হয়তো মাঠে নামবেন শান্ত। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দুর্দান্ত সময় পার করা শান্ত বিসিএলে মধ্যাঞ্চলের হয়ে প্রথম ইনিংসে তেমন কিছু করতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংস খেলেছেন ৫৪ রানের ইনিংস। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অভিষেক হয় তার; ওই টেস্টের পর ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুবছর আগে সবশেষ টেস্ট খেলেছেন তিনি। টেস্টে তেমন একটা সুযোগ না পাওয়া শান্তকে পাক সফরে শুরুর দিকেই দেখতে চান কোচ ডোমিঙ্গো।

চার নম্বরে পাঠানো হতে পারে অধিনায়ক মুমিনুল হককে, এমনই জানিয়েছেন হেড কোচ। চার নম্বরে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ২০১৪ সালের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম তিনে উঠিয়ে আনা হয় মুমিনুলকে, নয় টেস্ট পর। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট, আর গত বছর একই ভেন্যুতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ছাড়া মুমিনুল ব্যাটিং করেছেন তিন নম্বরেই। অবশ্য মুমিনুল শুরুর চার নম্বরেই ছিলেন বেশি স্বচ্ছন্দ, ১৯ ইনিংসে তার গড় এখানে ৬০, যেখানে তিনে ব্যাটিং করে গড়টা নেমে এসেছে ৩৩.৯৭-এ। মুমিনুলের চারে ফেরার সঙ্গে সাইফ হাসানের অভিষেকের কথাও বলেছেন ডমিঙ্গো, ‘আপাতত মুমিনুলকে চারে ব্যাটিংয়ে নামানোর কথা ভাবা হচ্ছে। আমি হয়তো শান্তকে তিনে খেলাব।’

ভারত সফরে দুই টেস্টেই পাঁচে ব্যাটিং করেছেন মিঠুন। মিঠুন স্কোয়াডে আছেন, মুশফিকের জায়গায় তাকে পাঁচ নম্বরেই পাঠানোর পরিকল্পনা বাংলাদেশের। ৭ টেস্টে ২২৮ রান করা মিঠুন টেস্টে এখনো নিজেকে চেনাতে না পারলেও কোচ তাকে নতুন করে সুযোগ দিতে চান। দুই একটি টেস্ট দেখে মিঠুনকে বিচার করার পক্ষে নন ডোমিঙ্গো। সুতরাং এই সফরটি তার জন্য একটি বড় সুযোগ নিজেকে প্রমাণ করার।

মাহমুদউল্লাহকে ছয়ে দেখা যাবে; শেষ দিকে দলের হালতো তাকেই ধরতে হয়! সদ্য শেষ হওয়া বিসিএলে সেঞ্চুরি পেয়েছেন রিয়াদ। ৪৮টি টেস্ট খেলা এই অলরাউন্ডার ৩৩.২২ গড়ে রান করেছেন ২৭৩৯! যেখানে ১৬টি ফিফটি ও ৪টি সেঞ্চুরি করেছেন। টেস্টে রিয়াদ সবশেষ ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন; এরপর অবশ্য একবার সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও হয়নি। পাকিস্তান সফরের আগে বিসিএলের দুর্দান্ত সেঞ্চুরি হয়তো তাকে উজ্জীবিত করবে।

সাধারণত ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে খেলা লিটনকে এই সফরে দেখা যাবে সাত নম্বরে। শেষ দিকে রিয়াদের সঙ্গে লিটনকেই গুরু দায়িত্ব সামলাতে হবে। রিয়াদের মতো সদ্য শেষ হওয়া বিসিএলে লিটনও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। পাকিস্তান সফরে সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে তেমন কিছুই করতে না পারা লিটনকে টেস্টে নতুন করে সুযোগ দিচ্ছেন কোচ। শেষ দিকে হয়তো দায়িত্ব নিয়ে তিনি কোচের ভরসার মূল্য দেবেন। এখন দেখার বিষয় ১৮ টেস্টে ৭৪৪ রান করা লিটন লেয়ার অর্ডারে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন কি না।

যেহেতু পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের বেশিরভাগই বাঁহাতি; ফলে এই টেস্টে ডানহাতি নাঈম হাসানের জায়গাতে সুযোগ পাতে পারেন বাঁহাতি অফস্পিনার তাইজুল ইসলাম। যদিও পাকিস্তানের উইকেট কেমন আচারণ করবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না; তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের সিরিজে নজর করলে দেখা যায় পেস বান্ধব উইকেট করলেও স্পিনাররা সফল হয়েছেন। ২৭ টেস্টে ১০৬টি উইকেট শিকারি তাইজুল হয়তো পাক ব্যাটসম্যানদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারেন।

সৌম্য সরকারকে যেহেতু একাদশে রাখা হচ্ছে না; সেহেতু তিনজন পেসার নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ। জায়গা পেতে পারেন রাহী-আল আমীন ও ইবাদত। তবে বোলিংয়ে কোচ নিজের পরিকল্পনার কথা জানাননি। ধারণা করা হচ্ছে তিন পেসার নিয়েই খেলবে বাংলাদেশ, এ ক্ষেত্রে রুবেল হোসেনেরও সুযোগ মিলতে পারে।

আরও পড়ুন : প্রস্তুতি ছাড়াই মাঠে নামবে বাংলাদেশ; হতাশ ডোমিঙ্গো

উল্লেখ্য, প্রথম টেস্টের জন্য আজ বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে পাকিস্তানে। সিরিজ জয়ের জন্যই পাকিস্তানে পা রাখবে টাইগাররা। অধিনায়ক মুমিনুল ১৪ সদস্যর এই দল নিয়েই মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। এখন দেখার বিষয় টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের কাছে পয়েন্ট হারানো বাংলাদেশ পাকিস্তানকে হারিয়ে পয়েন্ট কুঁড়াতে পারে কি না!

প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সম্ভব্য একাদশ : তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন কুমার দাস, তাইজুল ইসলাম, আবু জায়েদ রাহী, আল-আমিন ও ইবাদত হোসেন।

ওডি/এএপি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড