জমে উঠেছে প্রিমিয়ার লিগে শেষ চারে টিকে থাকার লড়াই

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে চতুর্থ স্থানটির জন্য এখনো শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে চেলসি। আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে ফিরে আসার জন্য ব্লুজরা ছাড়াও আরও কয়েকটি ক্লাব নিজেদের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের দল নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যানইউ, টটেনহ্যাম ও আর্সেনালের মতো দলগুলোর ইউরোপের সর্বোচ্চ আসরে ফিরে আসার দরজাও খোলা রেখেছে। এছাড়াও উল্ভস ও শেফিল্ড ইউনাইটেডের মতো দলগুলোও প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নেওয়ার জন্য জায়ান্ট দলগুলোর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

মৌসুমের শেষ ১৫টি ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে ছয়টি দলের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক

চেলসি : ৪০ পয়েন্ট

পঞ্চম স্থানে থাকা ম্যানইউর থেকে এখনো ছয় পয়েন্ট এগিয়ে টেবিলের চতুর্থ স্থানটি ধরে রেখেছে চেলসি। তবে এই স্থানটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যে মোটেই সহজ নয় তা ইতোমধ্যেই ব্লুজরা উপলব্ধি করে ফেলেছে। শেষ ১২টি লিগ ম্যাচের মধ্যে মাত্র চারটিতে জয়ী হয়েছে ল্যাম্পার্ডের দল। এর মধ্যে তলানির দল বোর্নমাউথ, ওয়েস্ট হ্যাম, সাউদাম্পটন, নিউক্যাসেল ও এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে পরাজয় ছিল দারুণ হতাশাজনক। আগামী কয়েক দিনে আর্সেনাল, লেস্টার সিটি, টটেনহ্যাম ও ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে চেলসির ভাগ্য অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যাবে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড : ৩৪ পয়েন্ট

শীর্ষ চারে ইউনাইটেডের টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ অনেকটাই নির্ভর করছে জানুয়ারি ট্রান্সফার উইন্ডোতে তাদের পরিকল্পনার ওপর। পিঠের ইনজুরির কারণে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা মার্কাস রাশফোর্ড অন্তত ছয় সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে চলে গেছেন। পল পগবা ও স্কট ম্যাকটমিনের দীর্ঘদিনের ইনজুরিতে ইতোমধ্যেই রেড ডেভিলসদের মধ্যমাঠ দুর্বল হয়ে পড়েছে। মার্চে আন্তর্জাতিক বিরতির পর শেষ সাতটি ম্যাচে ইউনাইটেড সম্ভবত সবচেয়ে সহজ প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। রাশফোর্ডের ফেরার আগ পর্যন্ত উল্ভস, চেলসি, ম্যানসিটি, টটেনহ্যাম ও শেফিল্ড ইউনাইটেডের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাই এখন ইউনাইটেডের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ।

উল্ভস : ৩৪ পয়েন্ট

ইন-ফর্ম সাউদাম্পটনের বিপক্ষে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলের জয় ছিনিয়ে নিয়ে উল্ভস তাদের অবস্থান আরও সুসংহত করেছে। ২৩-জানুয়ারি মৌসুমের ৪০তম ম্যাচে নুনো এসপিরিতো সান্তোর দল টেবিলের শীর্ষে থাকা লিভারপুলের মোকাবিলা করবে। স্বাভাবিক পারফরম্যান্সের থেকে একেবারে বাইরে এসে এবার উল্ভস যেভাবে নিজেদের প্রমাণ করেছে তাতে ইউরোপা লিগে ফিরে আসাটা তাদের প্রাপ্য ছিল। ম্যানসিটিকে দুবার পরাজিত করে ও গতমাসে লিভারপুলের বিপক্ষে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে তারা নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে। নিজেদের দিনে উল্ভস যে কোনো প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে। মৌসুমের শেষ সপ্তাহে অলরেডদের মাঠে ফলাফল নির্ধারক হয়ে দাঁড়াতে পারে।

শেফিল্ড ইউনাইটেড : ৩৩ পয়েন্ট

প্রিমিয়ার লিগে ক্লাবের ১৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ লিগে দারুণভাবে লড়াই করে টিকে রয়েছে ব্লেডসরা। তারপরও শেফিল্ড ম্যানেজার ক্রিস ওয়াইল্ডার তার খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু প্রত্যাশা করছেন। লিগ ওয়ান থেকে প্রিমিয়ার লিগে উন্নীত এবং এবারের মৌসুমে টেবিলের সপ্তম স্থানে টিকে থাকার পিছনে ওয়াইল্ডারই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। শনিবার আর্সেনালের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে আরও এগিয়ে গেছে শেফিল্ড।

টটেনহ্যাম : ৩১ পয়েন্ট

নভেম্বরে চার বছরের চুক্তিতে কোচ হিসেবে হোসে মরিনহোকে পাওয়ার পর স্পার্সরা ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ খুঁজে পায়। যদিও সম্প্রতি বেশ কিছু ইনজুরিতে ক্লাবের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বিশেষ করে তারকা স্ট্রাইকার হ্যারি কেনের অনুপস্থিতিতে দলে গোলখরা দেখা দিয়েছে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে সম্ভবত পুরো মৌসুমের জন্য ছিটকে গেছেন হ্যারি কেন। গত চার ম্যাচে মরিনহোর দল মাত্র দুই পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। ২৩ ম্যাচে ৩১ পয়েন্ট নিয়ে বর্তমানে অষ্টম স্থানে রয়েছে টটেনহ্যাম। গত মৌসুমে এই সময় স্পার্সরা ২০ পয়েন্ট বেশি সংগ্রহ করেছিল। গত চার মৌসুম ধরে চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলছে টটেনহ্যাম। কিন্তু এবার তাদের এগিয়ে নিয়ে যাবার পিছনে মরিনহোর একটি শক্ত ভূমিকা সকলেই আশা করছে।

আর্সেনাল : ২৯ পয়েন্ট

বুধবার (২১ জানুয়ারি) স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে সফরের ম্যাচটিকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন আর্সেনালের নতুন বস মিকেল আর্তেতা। কিন্তু ফল হয়নি তাকে। নাটকীয়তায় শেষ হওয়া ম্যাচটি ড্র হয়। স্প্যানিয়ার্ড এই কোচ আর্সেনালের দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই পারফরম্যান্সের উন্নতি হয়েছে। যদিও আর্তেতার অধীনে পাঁচটি লিগ ম্যাচে মাত্র একটিতে জয়ী হয়েছে গানার্সরা। এবারের মৌসুমে আর্সেনালের পিছিয়ে পড়ার পেছনে বোর্নমাউথ, ক্রিস্টাল প্যালেস ও শেফিল্ড ইউনাইটেডের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র হওয়া ম্যাচগুলো দায়ী।

ওডি/এএপি