• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

টেস্ট নিয়ে আইসিসির নতুন ভাবনায় ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড়

  নজরুল ইসলাম

০২ জানুয়ারি ২০২০, ১৫:৫১
আইসিসি
আইসিসি কার্যালয় (ছবি : সংগৃহীত)

আইসিসি ইতোমধ্যেই চিন্তা-ভাবনা করে ফেলেছে, ২০২৩ সাল থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত যে ক্রিকেট ক্যালেন্ডার তৈরি করা হবে, সেখানে পাঁচদিনের বদলে টেস্ট হবে চারদিনের এবং সেটা হবে বাধ্যতামূলক। কিন্তু কেন এমন ভাবনা আইসিসির? তাদের ব্যাখ্যা, ক্রিকেটের অবিরত চাপ কমাতেই টেস্টে একদিন কমিয়ে ফেলার কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে ক্রিকেটাররাও ক্লান্ত না হয়। ঠাসা ক্রীড়াসূচির মধ্যে সারা বছরই খেলতে হয় ক্রিকেটারদের।

সেখান থেকে একটু মুক্তির পাশাপাশি, আইসিসি মনে করে, টেস্ট চারদিনের হলে আকর্ষণও বাড়বে। তা ছাড়া, আইসিসি এমনও বলেছে, এখন অনেক টেস্টই চারদিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। পাঁচদিন পর্যন্ত যাচ্ছে না। অতএব এটা নিয়ম হয়ে গেলে কোনো ক্ষতি হবে না।

বিষয়টি সামনে আনেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী কেভিন রবার্টস। চলতি সপ্তাহের শুরুতে তিনি বলেন, আইসিসির অনুমোদন পেলে ২০২৩ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত নতুন এফটিপিতে আসতে পারে চারদিনের টেস্ট। তবে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন সঙ্গে সঙ্গে এর বিরোধিতা করে।

এ দিকে, ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) এ বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড এখনো এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। আর বিসিবি বলছে এ বিষয়ে তেমন কিছু জানে না তারা। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এখন যে মাত্রায় আলোচনা হচ্ছে, আমার কাছে জানতে চাইলে বলব, আমাদের আসলে তেমন কিছু জানা নেই।’

এ দিকে, অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের ক্রিকেট কর্তারা রাজি থাকলেও সাবেক ও বর্তমান খেলোয়াড়রা এ বিষয়ে বিপরীত অবস্থানে। নতুন বছরের এ নিয়ে মুখ খুলেছে অস্ট্রেলিয়া দল। অফস্পিনার নাথান লায়ন মন্তব্য করেছেন, চার দিনের টেস্টের ভাবনা হাস্যকর। অস্ট্রেলিয়ার কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারও এই ভাবনার বিপক্ষে।

সিইও রবার্টস এমনও বলেছিলেন যে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে তারা চার দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারেন। তবে লায়ন বলেন, ‘আমি পুরোপুরি এর বিরুদ্ধে। আশা করব, আইসিসি এমন কিছু করার কথা চিন্তাতেও আনবে না,’ সোজাসাপটা ভঙ্গিতে বলেন লায়ন। তার ব্যাখ্যা, ‘বিশ্বে সব বড় টেস্ট ম্যাচগুলো আপনারা দেখুন। দারুণ সব টেস্ট ম্যাচ একেবারে শেষ দিন পর্যন্ত যায়। আমি নিজেই কত সে রকম টেস্ট দেখেছি।’

কোচ ল্যাঙ্গার কিছুটা সংশয়ে আছেন। তার মতে, চার দিনের টেস্ট ম্যাচ করার ভাবনা পরখ করে দেখা যেতে পারে। কিন্তু তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই বদল চান না। ‘আমি প্রথাগত টেস্ট ক্রিকেটের ভক্ত। আমাকে যারা চেনেন, তারা জানেন, কখনোই বেশি বদলের পক্ষে আমি নই। আমি তাই পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচ দেখলেই বেশি খুশি হব।’

তবে লায়ন ভেবে দেখতেও রাজি নন। তিনি ২০১৪ সালের অ্যাডিলেডে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার রুদ্ধশ্বাস টেস্ট ম্যাচের কথা টেনে এনেছেন। যে টেস্ট একেবারে শেষ ঘণ্টায় গিয়ে জেতে অস্ট্রেলিয়া। ‘২০১৪-তে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া সেই টেস্টের কথা মনে করুন। পঞ্চম দিনের শেষ আধ ঘণ্টায় গিয়ে নিষ্পত্তি হলো। ২০১৪ সালে কেপ টাউনের কথা ধরা যাক। মাত্র দু’ওভার বাকি থাকতে রায়ান হ্যারিস বোল্ড করল মর্নি মরকেলকে আর আমরা জিতলাম। সেই ম্যাচটা তো শেষ দশ মিনিটে গিয়ে নিষ্পত্তি হলো।’ তার পরেই স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমি চার দিনের টেস্টের ভক্ত নই। আমার তো মনে হয়, এর ফলে ড্র আরও বেড়ে যাবে।’

আবহাওয়ার বিষয়টিও টেনে আনেন লায়ন। চার দিনের টেস্ট হলে প্রত্যেক দিন ৯৮ ওভার করে হয়। পাঁচ দিনের টেস্টে যেখানে প্রত্যেক দিনে হয় ৯০ ওভার। অস্ট্রেলিয়ায় গত দশ বছরে যে ৪৩টি টেস্টের ফয়সালা হয়েছে, তার ৩৮টি ম্যাচ শেষ হয়েছে ৩৯২ ওভারের মধ্যে অর্থাৎ চার দিনের খেলা হলে যেমন হতো, তার মধ্যে। তবু লায়ন পুরনো রীতির পক্ষে।

অস্ট্রেলিয়া সফরে থাকা নিউজিল্যান্ডের তারকা পেসার নিল ওয়াগনারও চার দিনের টেস্টের বিপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘যেসব ম্যাচ পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে গড়িয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ম্যাচ।’ এর আগে প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিও চার দিনের টেস্টের বিপক্ষে মতামত তুলে ধরেন।

তবে চার দিনের টেস্টের পক্ষে মাইকেল ভন। টেলিগ্রাফে লেখা একটি কলামে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক বলেন, ‘দুই বছর ধরে আমি বলে আসছি, আমাদের চার দিনের টেস্ট নিয়ে ভাবতে হবে। না হলে টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে।’

ভন টুইটারে একটি পরিসংখ্যানও উল্লেখ করেছেন।যেখানে দেখা যাচ্ছে, একবিংশ শতাব্দীতে টেস্ট ম্যাচের ফল পেতে গড়ে লেগেছে ৩১৮ ওভার। ২০১৯ সালে ৩৯ টেস্টের মধ্যে মাত্র ১৩টি গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মানছি, কিছু কিছু টেস্টে শেষ দিনে অনেক নাটক দেখা গিয়েছে। দারুণ সব ইনিংস খেলা হয়েছে ম্যাচ বাঁচানোর জন্য। পাশাপাশি বৃষ্টির আশঙ্কাও আছে। কিন্তু সবকিছু মাথায় রেখেও বলব, বেশিরভাগ টেস্ট এখন চার দিনেই শেষ হয়ে যায়।’

তবে ভনের সঙ্গে একম নন পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা। তার মতে, মূলত সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য টেস্ট ক্রিকেটের ক্ষতি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘চার দিনের টেস্ট নিয়ে এমসিসি বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছিল, তাতে দেখা গিয়েছে, বেশির ভাগ সদস্যই পাঁচ দিনের টেস্টের পক্ষে। আসল ব্যাপারটা হলো সাদা বলের ক্রিকেটের জন্য ক্রীড়াসূচিতে আরও সময় বের করতে হবে। যে কারণে টেস্ট ক্রিকেটকে ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে। সম্পূর্ণ ভুল কারণের জন্য টেস্ট ক্রিকেটকে এভাবে বঞ্চিত করাটা কি ঠিক?’

এমনকি টেলিগ্রাফের বর্ষীয়ান সাংবাদিক শিল্ড বেরিও ভনের বিপক্ষে। ৫০ বছর ধরে ক্রিকেট সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত বেরির মতে ক্রিকেটের সবচেয়ে ক্ষতিকর সিদ্ধান্তটি নিতে যাচ্ছে আইসিসি। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে কিছু চারদিনের টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল। সেসব ম্যাচের ইতিহাস টেনেই বেরি বলেন, চারদিনের টেস্ট আবার ফিরিয়ে আনা ঠিক হবে না। ‘১৯৫০-এর দশকে চারদিনের টেস্টকে কোনো কারণ ছাড়াই বাদ দেওয়া হয়নি। ১৯৫৪-৫৫ মৌসুমে ভারতের পাকিস্তান সফরের পাঁচটি টেস্টই ছিল চারদিনের। সব ম্যাচ ড্র হয়েছিল। ইংল্যান্ডে আপনাকে বৃষ্টির কথা মাথায় রেখেই পঞ্চম দিন রাখতে হবে। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, চার দিনের টেস্ট ফিরিয়ে আনলে তা ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর হবে।’

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত চার দিনের টেস্টে অংশ নিয়েছে চারটি দেশ। ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়ে এবং ২০১৯ সালে ইংল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড নিজেদের মধ্যে চার দিনের টেস্ট খেলেছে।

আরও পড়ুন :-চার দিনের টেস্ট ম্যাচ; দুই মেরুতে ভন-রমিজ

ওডি/এনএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড