ক্রীড়া ডেস্ক
ব্যালন ডি’অর টা ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকার জন্য বরাদ্দ। যে পুরস্কার জেতা এখন প্রত্যেক ফুটবলারের স্বপ্ন। ব্যক্তিগত অর্জনে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ড এটি। ফুটবল বিশ্বের সব তারকা খেলোয়াড় যাদের শৈল্পিক প্রদর্শনের মাধ্যমে ফুটবল বিশ্বকে মুগ্ধ করে, যাদের অবদানে দেশ কিংবা ক্লাব শিরোপার উল্লাস করে তাদের বিশেষ সম্মান প্রদর্শনে এবং শ্রেষ্ঠত্বের অর্জন হিসেবে দেওয়া হয় এই পুরস্কার।
১৯৫৬ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় এবং এটি এখন অব্দি চলছে। ১৯৫৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্যালন ডি’অর ট্রফিটা দেওয়া হতো শুধুই ইউরোপসেরা ফুটবলারদের। তখন নাম ছিল ‘ইউরোপের বর্ষসেরা ফুটবলার’। পুরস্কারটা দিত উয়েফা ও ‘ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিন’। ২০১০ সালে একটা বড় বাঁক আসে ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারের নামফলকে। ব্যালন ডি’অর ট্রফি ও এর স্বত্বাধিকার ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিনকে যুক্ত করা হয় ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারের সঙ্গে। ২০১০ সাল থেকে পুরস্কারটির নাম হয়ে যায় ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরস্কার।
কিন্তু ফিফার সঙ্গে এই চুক্তির মেয়াদ ছিল ৬ বছর যা ২০১৬ সালে শেষ হয়। এই অ্যাওয়ার্ডটি ফিফা প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার হিসেবেও পরিচিতি পায়। তবে ২০১৬ সালে চুক্তি শেষ হওয়ার পর এই অ্যাওয়ার্ডের ইতিহাসের কথা ভেবে আবার ব্যালন ডি’অর এ প্রত্যাবর্তন করা হয়।
১৯৫৬ সালে ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকীর সম্পাদক গ্যাব্রিয়েল হান্তেরই মস্তিষ্কপ্রসূত ছিল ব্যালন ডি’অর। ব্লাকপুলের স্টানলি ম্যাথিউস ছিলেন ব্যালন ডি’অরের প্রথম বিজেতা। প্রথম দিকে এই পুরস্কারটি পেতে একজন খেলোয়াড়কে দুটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হতো। তাকে ইউরোপীয় হতে হবে, একই সঙ্গে খেলতে হবে ইউরোপের কোনো লিগে।
১৯৯৫ সাল পর্যন্ত শুধুমাত্র ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দের জন্য এই পুরস্কারটি বরাদ্দ থাকায় আর্জেন্টাইন ডিয়েগো ম্যারাডোনা বা ব্রাজিলের পেলে কারোই কখনো জেতা হয়নি ব্যালন ডি'অর। পেলে তো ইউরোপে খেলতেই আসেননি। ম্যারাডোনা ইউরোপ মাতিয়ে গেলেও দক্ষিণ আমেরিকান হওয়ায় এই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হননি।
এরপর ১৯৯৫ সালে এসি মিলানের জর্জ উইহ ছিলেন প্রথম আফ্রিকান যিনি ইউরোপের বাইরের কোনো খেলোয়াড় হিসেবে এই ট্রফি জেতেন। এর দুই বছর পর ব্রাজিলের রোনালদো (ফেনোমেনন) ছিলেন প্রথম সাউথ আমেরিকান প্লেয়ার যিনি এই অ্যাওয়ার্ড জেতেন । বিশ্বের তিনজন প্লেয়ার যাদের তিনবার এই অ্যাওয়ার্ড জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। তারা হলেন— ইয়ুহান ডি ক্রুইফ, আয়াক্সের এবং বার্সার; মিশেল প্লাতিনি, জুভেন্তাসের এবং মার্কো ফন বাস্তেন, মিলানের। একমাত্র সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ও বর্তমান জুভেন্তাস ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো এবং বার্সেলোনার লিওনেল মেসির ঝুলিতে পাঁচবার এই ট্রফি জেতার কৃতিত্ব রয়েছে।
২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত এমন হয়নি যা এরপর ঘটেছে। ২০০৭ সালের আগে হয়তো পৃথক ক্লাবের সেরারা এই পুরস্কারের লড়াইয়ে থাকতেন এবং জিততেন। কিন্তু বর্তমান ফুটবল বিশ্বকে রাজত্ব করা দুই সুপারস্টার লিওনেল মেসি ও রোনালদো টানা ১০ বছর এই পুরস্কারটিতে রাজত্ব করে আসছেন।
২০০৭ সালে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার কাকার পর ব্যালন ডি’অর ও ফিফা বর্ষসেরায় ২০১৭ পর্যন্ত রাজত্ব (দুজনে পাঁচবার করে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন) ছিল আর্জেন্টাইন ও পর্তুগিজ অধিনায়ক মেসি-রোনালদোর। কিন্তু গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে সে বলয় ভাঙেন ক্রোয়েশিয়ান অধিনায়ক লুকা মদরিচ। উয়েফা ও ফিফা বর্ষসেরার পর তিনি জিতে নেন মর্যাদার ব্যালন ডি’অর অ্যাওয়ার্ডও।
তবে এবার দৃশ্যপট কিছুটা আলাদা। ফের ব্যালন ডি’অর জিততে যাচ্ছেন মেসি। ফিফার সেরার পুরস্কারও জিতেছেন এই বার্সা অধিনায়ক। আগের বছর এই পুরস্কার বিজয়ী মদরিচ মেসির ধারে কাছেও নেই। মেসির সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন লিভারপুলের ডাচ ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইক। ধারণা করা হচ্ছে মেসিই পাচ্ছেন ২০১৯ সালের এই ব্যালন ডি’অর; হয়ত দুইয়ে থাকবেন ভ্যান ডাইক আর তিনে রোনালদো।
যদি তাই হয় তবে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ষষ্ঠবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতবেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এর আগে ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৫ সালে এই খেতাব জিতেছেন এলএম টেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রোনালদো পেয়েছেন ২০০৮, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে।
ব্যালন ডি’অর বিজয়ীর নাম কীভাবে ঠিক করা হয় জানেন? ভোটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। সাধারণত ফিফার অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দেশের ক্যাপ্টেন, কোচ আর সাংবাদিকদের ভোটে এই প্লেয়ারদের রেটিং করা হয়। ভোটের পয়েন্ট হয় তিনটি পজিশনের ভিত্তিতে। অর্থাৎ, প্রথম পজিশন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পজিশন। প্রথম পজিশনে সিলেক্টকারী পায় ৫ পয়েন্ট, দ্বিতীয় পজিশনে ৩ পয়েন্ট এবং তৃতীয় পজিশনে ২ পয়েন্ট পায়। এরপর একটি নির্দিষ্ট দিন ঠিক করা হয় যেখানে বিশাল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বের ফুটবল সুপারস্টারদের আমন্ত্রণ করে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হয়।
ব্যালন ডি’অর বিজয়ী ফুটবলার এবং তাদের ক্লাবের লিস্ট (১৯৮০ – বর্তমান):
১৯৮০- কার্ল হেইঞ্জ রুমানিগ, বায়ার্ন মিউনিখ ১৯৮১- কার্ল হেইঞ্জ রুমানিগ, বায়ার্ন মিউনিখ ১৯৮২- পাওলো রসি, জুভেন্তাস ১৯৮৩- মিশেল প্লাতিনি, জুভেন্তাস ১৯৮৪- মিশেল প্লাতিনি,জুভেন্তাস ১৯৮৫- মিশেল প্লাতিনি,জুভেন্তাস ১৯৮৬- ইগোর বেলানভ,ডায়নামো কিয়েভ ১৯৮৭- রুড গাল্ট, এসি মিলান ১৯৮৮- ফন বাস্টেন, এসি মিলান ১৯৮৯- ফন বাস্টেন,এসি মিলান ১৯৯০- লোথার ম্যাথাউস, ইন্টার মিলান ১৯৯১- পিটা পাপিন, মার্সেই ১৯৯২- ফন বাস্টেন, এসি মিলান ১৯৯৩- রবার্তো ব্যাজিও, জুভেন্তাস ১৯৯৪- রিসাতা স্টোরিসকার্, বার্সেলোনা ১৯৯৫- জর্জ উইহ, এসি মিলান ১৯৯৬- ম্যাথিয়াস সামার, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ১৯৯৭- রোনালদো, ইন্টার মিলান ১৯৯৮- জিদান, জুভেন্তাস ১৯৯৯- রিভালদো, বার্সেলোনা ২০০০- লুইস ফিগো, রিয়াল ২০০১- মাইকেল ওয়েন, লিভারপুল ২০০২- রোনালদো, রিয়াল ২০০৩- পাভেল নাদভেদ, জুভেন্তাস ২০০৪- আন্দ্রে শেভচেঙ্কো, এসি মিলান ২০০৫- রোনালদিনহো, বার্সেলোনা ২০০৬- ফ্যাবিও ক্যানাভারো, রিয়াল মাদ্রিদ ২০০৭- কাকা, মিলান ২০০৮- রোনালদো, ম্যানইউ ২০০৯- মেসি, বার্সেলোনা ২০১০- মেসি, বার্সেলোনা ২০১১- মেসি, বার্সেলোনা ২০১২- মেসি, বার্সেলোনা ২০১৩- রোনালদো, রিয়াল ২০১৪- রোনালদো, রিয়াল ২০১৫- মেসি, বার্সেলোনা ২০১৬- রোনালদো, রিয়াল ২০১৭- রোনালদো, রিয়াল ২০১৮- লুকা মদরিচ, রিয়াল ২০১৯- ?
ওডি/এএপি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড