ক্রীড়া ডেস্ক
টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পায় বাংলাদেশ। রাজকোটে ম্যাচ জিতলেই ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ নিশ্চিত করত টাইগার শিবির। তবে রাজকোটে সে সুযোগ হাতছাড়া করল তারা। অথচ দুর্দান্ত শুরু করেছিলেন দুই ওপেনার। এরপরও কেন ম্যাচ হারল মাহমুদউল্লাহ বাহিনী তার কারণ তুলে ধরা হলো-
ক্রিকেটে ছন্দে থাকার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। তা সে ব্যক্তিগতই হোক বা দলগত, ছন্দে থাকলে নিজের দিনে অনেক অঘটনই ঘটানো সম্ভব। তবে রাজকোটে সেই ছন্দই যেন দেখা গেল না বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে।
বাংলাদেশের ওপেনার জুটি লিটন দাস ও নাঈম শেখ শুরুটা বেশ ভালোভাবে করেছিলেন। তবে তার রেশ ধরে রাখতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। কোনো উইকেট না খুইয়েই পাওয়ার প্লেতে লিটন-নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ রান। কিন্তু তার উপর বড় রানের ভিত গড়তে ব্যর্থ হন দুজনেই। অন্তত এক জনকে এখানে থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতেই হতো।
দিল্লিতে খলিল আহমেদের শেষ চার বলে টানা চার হাঁকিয়েছিল বাংলাদেশ। রাজকোটেও খলিলের প্রথম তিন বল থেকে তিনটি চার তুলে নেন নাঈম। তবে সেই দাপট ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ৩১ বলে মাত্র ৩৬ রান করেই ফেরেন নাঈম। যেহেতু নাঈম সবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। আরও দায়িত্ব নেওয়া উচিত ছিল লিটনের।
নাঈমের মতোই দলকে বড় রানের পথে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হন অন্য ওপেনার লিটন দাস। চারটি চার মারলেও ২১ বলে ২৯ রান করেন তিনি। জীবন ফিরে পেয়েও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন লিটন। যুজবেন্দ্র চাহালের গুগলি লেগ সাইডে পাঠাতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান তিনি। ফলে শুরুতে চমক দেখালেও তা ধরে রাখতে পারেননি কোনো ওপেনারই।
আইসিসির শাস্তির কারণে বাংলাদেশ দলে নেই সাকিব আল হাসান। নেই তামিম ইকবাল, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও। তা সত্ত্বেও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে প্রথম ম্যাচে জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে রাজকোটে প্রথম ম্যাচের মতো জ্বলে উঠতে পারেননি তিনি। এ ম্যাচে মাত্র চার রান করেন মুশফিক।
মুশফিকের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরতাও বাংলাদেশের হারের একটা বড় কারণ। রাজকোটে দলের অন্য ব্যাটসম্যানেরাও তেমন কিছু করে উঠতে পারেননি। ওপেনারদের পরে একমাত্র মাহমুদউল্লাহ ছাড়া বাকিদের স্কোর দুঅঙ্কও পার হয়নি। শেষমেশ রান উঠেছে ১৫৩, যা ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
মুশফিক ছাড়াও মাহমুদউল্লাহর দিকেও তাকিয়ে ছিল এই বাংলাদেশ টিম। রাজকোটে শুরুটা ভালো করলেও ২১ বলে ৩০ রান করে ফিরে যান তিনি। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে বড়সড় রান না আসাটাও বাংলাদেশের হারের একটা ফ্যাক্টর।
টি-টুয়েন্টিতে অনেক সময় শেষ কয়েক ওভার বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ডেথ ওভারে চার-ছয়ের বন্যা তো দূরের কথা, ১৮ ওভার ৩ বলে মাহমুদউল্লাহর আউটের পর বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ ৯ বলে মাত্র ১১ রান ওঠে। একটাই মাত্র বাউন্ডারি পায় তারা। যা ভারতকে চাপে ফেলার জন্য যথেষ্ট নয়।
ভারতের বিপক্ষে যে রানের পুঁজি নিয়ে বল করতে নামে বাংলাদেশ, তাতে প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে উইকেট তুলে নিতে হতো। তবে রোহিত শর্মা বা শিখর ধাওয়ানের বিপক্ষে সে সুযোগ তৈরি করতে পারেননি মুস্তাফিজরা।
রাজকোটে মুস্তাফিজের ইকোনমি রেট ৯ দশমিক পাঁচ চার আর শফিউলের ১১ দশমিক পাঁচ শূন্য। তারা কোনো উইকেট না পাওয়ায় এ ম্যাচে সমস্যায় পড়ে বাংলাদেশ। যে কোনো ম্যাচে পেসাররা শুরুতে ব্রেক থ্রু পেলে দল বাড়তি আত্মবিশ্বাস পায়।
দিল্লিতে রোহিত শর্মার ব্যাটকে থামিয়ে দিতে পেরেছিলেন বাংলাদেশিরা। তবে রাজকোটে সে সুযোগ তৈরি করতে পারেননি কোনো বোলার। মুস্তাফিজের ব্যর্থতার ফলে এমনিতেই চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে রোহিত শর্মাকে দ্রুত না ফেরাতে পারাটাও এক্স ফ্যাক্টর হয়ে ওঠে।
পেসারদের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্পিনাররাও ব্যর্থ হন। একমাত্র আমিনুল ইসলাম ছাড়া কেউই উইকেট পাননি। ভারতের দুই ওপেনারকে আমিনুল তুলে নিলেও আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেনের নির্বিষ বল কাবু করতে পারেনি কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে।
রাজকোটে কোনো সময়ই ভারতকে চাপে ফেলতে পারেনি মুশফিকুর রহিমরা। বিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি না করতে পারলে ম্যাচের দখল নিজেদের দিকে আনাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আর এ কাজটাই করতে পারেনি বাংলাদেশ।
ওডি/এনএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড