কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ
নাম আব্দুল মজিদ। বয়স আশি ছুঁই ছুঁই। তিন ছেলের বাবা। বাড়ি নওগাঁ জেলার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর এলাকায়।
এই বয়সে ঝুড়িতে কয়েক টোপলা বাদাম আর মোটর ডাল ভাজা বিক্রি করছেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহারে তাও আবার প্রশাসনের ভয়ে কিছুটা চুরি করেই। দিনে বিক্রি দেড়শ থেকে দুইশ এর মধ্যেই লাভ লোকসান।
ঝুড়ির সামনে দিয়ে গেলেই মুখের দিকে তাকিয়ে বলে 'বাবা বাদাম নেন'।
এর মধ্যে তাকানো ও বলার মধ্যে এক ধরনের আবেদন রয়েছে। কেউ আবেদনটা বুঝে কিনছে, আবার কেউ এক নজর তাকিয়েই গন্তব্যে মন দিচ্ছে।
বিষয়টা কিছুক্ষণ ধরে দেখার পর কৌতূহলী হয়ে কাছে গিয়ে মুরব্বিকে জিজ্ঞাসা করলাম চাচা এই দিনে কয়ে টাকা বিক্রি আর লাভ ক্যামন?
আমাকে দেখেই বাদাম বিক্রির আগ্রহ দেখাল কিন্তু আমি প্রসঙ্গ তুললাম অন্যদিকে প্রথমে একটু মন খারাপ করল কিন্তু পরে একটু সহজ হয়ে আমার প্রশ্নের উত্তর দিল।
বলল, ‘যা বিক্রি হয় তা দিয়ে দু-এক সের চাল আর কিছু তরকারি হয় তা দিয়েই দিনের খাবারটা চলে যায়।’
তার এই উত্তরের মধ্যে কোনো হতাশা বা আফসোস না দেখে আমি কিছুটা অবাক হলাম। চাচা এত কম টাকা দিয়ে হয়? সদুত্তর হলো ‘এই দিয়ে বুড়া-বুড়ির সমস্যা হয় না।’
চাচা ছেলে মেয়ে কয়টা? তারা কি করে? আপনাকে দ্যাখে না?
বেশ কটা প্রশ্ন করলাম। আশা করেছিলাম চাচা আবেগের সঙ্গে আফসোস করে কিছু বলবে কিন্তু না, তার কাছ থেকে একদম প্রচ্ছন্ন জবাব- ‘তিন ছেলে, ছেলেরা কষ্টে আছে, ওদেরই চলে না, আমাকে কী দেখবে! আমি চলতে পারিত। ওদের দোয়া করি ওরা যেন ভালোভাবে খেতে পারে।’
আবার জিজ্ঞাসা করলাম তবুও তিন ছেলে সংসার করে আর বাবা মাকে দেখবে না ক্যান?
চাচা এবার তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলল, ‘বাবা আমার ছেলেরা বলেছে- যখন তুমি একদম চলতে পারবে না তখন দেখব। বাবা আমি তাতেই খুশি।’
এবার সুযোগ পেয়ে চাচাকে বন্ধু মনে করে জিজ্ঞাসা করলাম চাচা একটা সিগারেট খাবেন নাকি?
আমার অফার শুনে চাচার মুখে হাসির ঝিলিক। জবাব দিল ‘কি সিগারেট?’
বললাম, ব্যানসন, চলবে? চাচা বলে ‘দেখি দু টান দিয়ে।’ আমার যেহেতু সিগারেটে অভ্যাস নাই কিন্তু চেইন স্মোকারের মতো ভাব নিয়ে সহকর্মীর কাছ থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে চাচাকে দিলাম। চাচা রাজ্যের সব হাসি মুখে নিয়ে সিগারেটের ধোয়া গ্রহণ করছে। আমি বললাম চাচা আস্তে, মজা আছে? জবাব, ‘না গলা ছ্যান ছ্যান করছে। বেশি দামের সিগারেট তো গলা ধরছে।’
বললাম, চাচা-আরও আসতে টানতে হবে মজা পাবেন। আরও কতক্ষণ কথা হলো বেশ ভালোই জমেছিল সময়ের তাগাদায় উঠতে হলো সেদিন।
বিদায় লগ্নে তাকে শুধু এটুকুই বললাম ভালো থাকুন বাবা। স্যালুট আপনাকে।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড