জাহাঙ্গীর আলম, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে শত শত সাগর উপকূলের ঝাউগাছ। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের আদলে গড়ে উঠা দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর কর্ণফুলী, বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর কোল ঘেঁষে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সমুদ্র সৈকতে গত এক দশকে ভাঙন ও নিধনের শিকার হয়েছে প্রায় অর্ধ লাখেরও বেশি গাছ।
ভাঙন অব্যাহত থাকায় একদিকে সমুদ্র সৈকত সৌন্দর্য হারাচ্ছে অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটক এবং উপকূলীয় মানুষ। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের জীব বৈচিত্র্য।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, পারকী সমুদ্র সৈকত থেকে রায়পুর ইউনিয়নের পরুয়াপাড়া, গহিরা উঠান মাঝির ঘাট, বাইগ্যার ঘাট, বার আউলিয়া, সাঙ্গু নদীর মোহনা পর্যন্ত সমুদ্র তীরের প্রায় শতাধিক ঝাউগাছ গোড়া থেকে বালি-মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়েছে। এছাড়া পরুয়াপাড়া এলাকায় গত তিন বছর আগেও যেখানে ঝাউগাছের সারি ছিল সেখানে ঝাউগাছের চিহ্নও নেই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ওসমান চৌধুরী জানান, পারকী থেকে গহিরা পর্যন্ত অব্যাহত ভাঙনে গত দুই বছরে স্থানভেদে এক কিলোমিটারেরও বেশি বালিয়াড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে সাগরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পরুয়াপাড়া এলাকায় গড়ে উঠা ঝাউবন।
বন বিভাগের নিয়োজিত জিম্মাদার ও সাবেক ইউপি সদস্য ছালেহ আহমদ জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপড়ে পড়া গাছগুলো বন বিভাগ সদর রেঞ্জে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান ভিন্ন কথা, সাগরের ঢেউয়ে উপড়ে পড়ার নামে ভালো গাছগুলোও কেটে নিলামে নামেমাত্র দামে বিক্রি করে দেয় বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এছাড়া আশপাশে বসবাসকারীরা রাতের আঁধারে ঝাউগাছ কেটে পাচার করে আসার অভিযোগও রয়েছে। এমন অবস্থায় গাছ চুরি ঠেকাতে না পারলে এ ঝাউবন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ‘জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো ট্যুরিজম’ প্রকল্পের আওতায় গহিরা সমুদ্র পাড়ের পাঁচ হেক্টর এলাকায় ঝাউগাছ লাগানো হয়। গত সাত বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাগানটি বিলীন হতে হতে আধা হেক্টরে এসে দাঁড়িয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়ায় ঝাউবনটি রক্ষা করা যাচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানান, গত দুই বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জোয়ারের ঢেউয়ে প্রায় ৫০০ মিটার জায়গার ঝাউগাছ বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু নতুন করে ঝাউবাগান তো দূরের কথা ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগ সদর রেঞ্জের বন্দর বিট কর্মকর্তা মো. হান্নানুজ্জামান বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। পূর্বে কী হয়েছে জানি না। তবে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় জোয়ারের ঢেউয়ে প্রতিনিয়তই বিলীন হচ্ছে ঝাউবাগান। বর্ষা মৌসুমে ভাঙন বেশি দেখা দেয়। প্রাকৃতিক কারণে এ ভাঙন রোধ করার কোনো সুযোগ বন বিভাগের নেই। পড়ে যাওয়া গাছ সংগ্রহ করে নিয়ম মোতাবেক নিলামে বিক্রি করা হয়।
ওডি/এমবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড