ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
রেলপথে ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুর হয়ে ভৈরব অথবা ময়মনসিংহ থেকে গৌরীপুর হয়ে হাওর অঞ্চল নেত্রকোনা কিংবা ঝাড়িয়া-ঝাঞ্জাইল তিন পথের যেখানেই যান না কেন আপনাকে তারাকান্দা উপজেলার শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী বিসকা রেলওয়ে স্টেশন পার হয়েই যেতে হবে। অথচ শত বছরের পুরনো তারাকান্দা উপজেলার রেলপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বিসকা রেলওয়ে স্টেশনের দাপ্তরিক কার্যক্রম গত ১০ বছর ধরে বন্ধ থাকায় যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের শত বছরের পুরনো এই স্টেশনটি বৃহত্তর ফুলপুরের (বর্তমান তারাকান্দা উপজেলাধীন) একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন। এই রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে বিসকাসহ ফুলপুর, তারাকান্দা, শ্যামগঞ্জ ও আশপাশের এলাকার শত শত লোক ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, ভৈরব ও ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এক সময়ের ব্যস্ততম এই স্টেশনটি এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত।
কৃষি প্রধান তারাকান্দা উপজেলার বিসকাসহ আশেপাশের এলাকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি উৎপাদিত হয়। এসব শাক-সবজির সিংহভাগ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হয়। যা যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে ট্রেনকে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু স্টেশনটি বন্ধ থাকায় মালামাল বুকিং করতেও সীমাহীন দুর্ভাগে পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের।
এখানে ট্রেন চলাচলে নেই কোনো টাইম টেবল বা সংকেত ব্যবস্থা। যাত্রাপথে এ ষ্টেশনে অবস্থান করা যাত্রীরা কখন ট্রেন আসবে তা জানতে পারে না। অনুমান করে তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। যাত্রীদের বসে থাকারও নেই কোন স্থান। একমাত্র বিশ্রামাগারটি কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। টয়লেটগুলো অকেজো। যাত্রীদের টিকিট কাটার কোন কাউন্টার নেই। ট্রেনের শব্দ শুনে নিজ দায়িত্বে যাত্রীদের বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠতে হয়। শুধু তাই নয় বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ে সীট না পাওয়ার বিড়ম্বনাসহ কয়েকগুণ বেশি ভাড়াসহ প্রায় সময়ই জরিমানা গুণতে হয় যাত্রী সাধারণের। এ অবস্থায় একদিকে যাত্রীরা যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি সরকারও লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলেন, স্টেশনটি পুনরায় চালুর দাবিতে বিভিন্ন সময়ে এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে এ ব্যাপারে আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার কোন ফল পাওয়া যায় নি। এলাকাবাসীদের দীর্ঘ দিনের দাবি বিসকা রেলস্টেশনটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হোক।
তারাকান্দা উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি নুরুজ্জামান সরকার বকুল মাস্টার এ বিষয়ে বলেন, তারাকান্দা উপজেলার বিসকা রেলওয়ে স্টেশনটি অকেজো থাকায় এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চরম কষ্টে যাতায়াত করতে হয়। ষ্টেশনটি প্রায় বন্ধ থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য বাজারজাত করতে পারছে না। এতে তারা নানা দুর্ভোগের শিকার হওয়ার পাশাপাশি পণ্যের ন্যায্যমূল্য ও ডিজিটাল সুবিধা থেকেও বিরত হচ্ছে।
তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এড. ফজলুল হক বলেন, বিসকা রেলওয়ে স্টেশনটি আমাদের ফুলপুর-তারাকান্দাবাসির ঐতিহ্যের একটি বড় অংশ। এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বিগত দিনে আমরা মানববন্ধন কর্মসূচীসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছি। কিন্তু কোন কাজ হয় নি।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সুপার মো. জহিরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার এখতিয়ার ভুক্ত নয়, তবে আমি যতদূর জানি, জনবল সংকটের কারণে বিসকা রেলওয়ে স্টেশনসহ এ অঞ্চলের বেশ কিছু রেলওয়ে স্টেশনের একই অবস্থা। নতুন জনবল নিয়োগের পর এ সমস্যা হয়তো আর থাকবে না।
এদিকে বিসকা রেলওয়ে স্টেশনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে পরিবহণ কর্মকর্তা মো. মইনূল ইসলাম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেন নি।
ওডি/এমবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড