• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিবগঞ্জে দেড়শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে দমমিষ্টি ও রসগোল্লা

  মো.তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

১৩ জুলাই ২০১৯, ১৭:২২
মিষ্টি
মিষ্টি ও রসগোল্লা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

পঞ্চাশ বছর আগে মিষ্টি (রসগোল্লা) ছিল এক থেকে দুই টাকা কেজি। এ পঞ্চাশ বছরে যেমন পাল্টেছে মিষ্টির প্রকারভেদ তেমনি বেড়েছে দাম। বর্তমান শিবগঞ্জের কয়েকটি বাজারে ১৪০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা দামে পাওয়া যাচ্ছে কয়েক পদের মিষ্টি। এসবের মধ্যে রয়েছে লালমন, শাহী চমচম, ঐতিহ্যবাহী আসল ও সাবেক আদি চমচম, দুধসর, রসমালাই, রাজভোগ, দমমিষ্টি, রসগোল্লাসহ ১০ থেকে ১২ পদের মিষ্টি। তবে শিবগঞ্জের ৬ থেকে ৭টি মিষ্টির দোকান ছাড়াও কানসাট, মনাকষা, চককির্তী ও সোনামসজিদ এলাকার মিষ্টির রেকর্ড ভাঙতে পারেনি কেউ। এসব এলাকার মধ্যে সোনামসজিদ এলাকার দোকানের মিষ্টি, মনাকষা ও সাহাপাড়া এলাকার দমমিষ্টি ও চককির্তী ত্রিমোহনী এলকার টুলুর সাদা রসগোল্লা এখনো সর্বসেরা।

দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ শিবগঞ্জে আসলেই বিখ্যাত আদি চমচমের প্যাকেট ছাড়া বাড়ি ফেরাটাই ছিল যেন বেমানান। তাই হাতে একটা চমচমের প্যাকেট থাকতোই। যা এখনও তা চলে আসছে। তবে সেই কারিগর না থাকায় খ্যাতিতে কিছুটা দাগ পড়েছে চমচমের।

ভোক্তার কাছে মনাকষা ও সাহাপাড়া এলাকার প্রয়াত সুধির ও হাবল শাহ, জাব্বার ও কালি পদ এবং কালুর দোকানের দমমিষ্টি এবং ত্রিমোহনী এলাকার টুলুর দোকানের সাদা রসগোল্লা কয়েক বছর ধরেই সুনাম ধরে রেখেছে। তবে এক বছর থেকে কিছু নতুন পদের মিষ্টি তৈরি হচ্ছে শিবগঞ্জ বাজারের নুরুল হোদার রেস্টুরেন্টে । এছাড়া সদরের নবাব মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের তৈরি কয়েক পদের নতুন ও পুরাতন মিষ্টি শিবগঞ্জের অন্যান্য মিষ্টিকেও হার মানায়।

অর্ডার দিলে বালিশ মিষ্টি বা দুই থেকে পাঁচ কেজি ওজনের একটি চমচম বানিয়ে দিতে পারেন শিবগঞ্জের মিষ্টির দোকানদার শ্রী রিপন সাহা ও করুন কুমার সাহাসহ কয়েকটি মিষ্টির দোকানিরা। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী ছোট চমচমের পাশাপাশি শিবগঞ্জে পাওয়া যায় ২০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের বাম্পার একেকটি চমচম।

জানা যায়, শিবগঞ্জে প্রায় দেড়শ বছর আগে শ্রী অনন্ত লাল সাহার হাতে শুরু হয় মিষ্টির দোকান। এরপর তার ছেলে শ্রী নরেন্দ্র নাথ সাহা প্রায় একশ বছর আগে বাবা শ্রী অনন্ত লাল সাহার মিষ্টির দোকানের হাল ধরেন সংসারের পাশাপাশি। একই সময় শিবগঞ্জে আরও এক মিষ্টির দোকান ছিল মদন লাল সাহার। সেটি বর্তমানে চালাচ্ছেন তার মৃত গোস্ট বিহারীর সন্তান শ্রী কার্তিক ও শ্রী কৃষ্ণ। শ্রী নরেন্দ্র নাথ সাহার ছয় ছেলের মধ্যে চার ছেলে তাবল সাহা, হাবল সাহা, বিজয় সাহা ও ইন্দ্রভূষন সাহা শিবগঞ্জ ও মনকষায় এলাকায় বংশ পরম্পরার ব্যবসা ধরে রাখতে তাদের ছেলে ও নাতি-পোতাদের হাত ধরে চলে আসছে মিষ্টির ব্যবসা।

শিবগঞ্জ মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক হোসেনুল হায়দার ও ত্রিমোহনী এলাকার রেজাউল করিম বুলবুল জানান, সাহাপাড়া বাজারে প্রয়াত জাব্বার এর দোকানের দমমিষ্টি এবং ত্রিমোহনী এলাকায় টুলুর সাদা রসগোল্লা এখন পুরানো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে, স্বাদে এখনও ছেদ পড়েনি।

শ্রী নরেন্দ্র নাথ সাহার পৌত্র ও শ্রী তাবল সাহার ছেলে শ্রী করুন কুমার সাহা ও বিজয় সাহার ছেলে শ্রী রিপন সাহা জানায়, শ্রী নরেন্দ্র নাথ সাহার মৃত্যুর পর তার ছেলে তাবল সাহা তার বাবার চমচম ও মিষ্টির দোকান পরিচালনা করত। তাবল সাহার মৃত্যুর পর এক দোকান থেকে তার দুই ভাই ও ছেলেরা পৃথক তিনটি দোকান করে নাম দেন ‘ঐতিহ্যবাহী আসল ও সাবেক-আদি চমচম ও মিষ্টির দোকান’। এ সময় তারা বলেন, তাদেরসহ অপর চাচা ইন্দ্রভূষন সাহার ‘ঐতিহ্যবাহী আসল ও সাবেক আদি চমচম’ দোকানে দিনে অন্তত পাঁচ মন চমচম বিক্রি হয়।

শিবগঞ্জের স্থানীয়রা মিষ্টি খেলে রসগোল্লা ও দমমিষ্টিকে প্রথম তালিকায় রাখেন। এছাড়া দুই ঈদ মৌসুমে চলে মিষ্টির রমরমা ব্যবসা। ফুরসত থাকেনা কারিগর ও দোকানির। কয়েকজন স্থানীয়রা জানান, বেশির ভাগ দোকানে আসল দুধের খিরসা ও ম্যাওয়া (দুধ থেকে তৈরি মিষ্টি কাঁচামাল) দিয়ে মিষ্টি না বানিয়ে কম দামে মিষ্টির উপকরণ কিনে মিষ্টি বানানোর ফলে মিষ্টির স্বাদ আর আগের মত মিলছেনা। তবে দেশের অন্যান্য জেলায় তৈরি মিষ্টির এখনও প্রতিদ্বন্দ্বী শিবগঞ্জের মিষ্টি, দমমিষ্টি ও চমচম।

এদিকে মিষ্টি দোকানিরা জানান আগের মত আসল দুধের ছানা, ম্যাওয়া ও খিরসা পাওয়া যায়না। এছাড়া অনেক ভাল কারিগরদের মধ্যে অনেকেই মিষ্টি বানানো বাদ দিয়েছেন আবার কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন।

ওডি/আইএইচএন

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড