হারুন আনসারী, ফরিদপুর
পৃথিবী ও মহাশূন্য পর্যবেক্ষণ এবং পরিমাপ গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ গবেষণাগারকে মানমন্দির বলা হয়। এই সংজ্ঞাটি বইপুস্তকে পাওয়া গেলেও ফরিদপুরের প্রত্যন্ত জনপদ ভাঙ্গা উপজেলার নুরুল্লাগঞ্জবাসীর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর অনেকের কাছেই এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না।
তবে সম্প্রতি মানমন্দির নিয়ে আলোচনার প্রাণকেন্দ্র সৃষ্টি হয়েছে এই প্রত্যন্ত জনপদকে ঘিরেই। পৃথিবীর ভৌগলিক চিহ্নরেখা কর্কটক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি দ্রাঘিমার ছেদ বিন্দুস্থল এই ভাঙ্গা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে স্থাপিত হতে যাছে অনন্য ভৌগলিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘বঙ্গবন্ধু মানমন্দির ও পর্যটন কেন্দ্র’। ভূগোল, ইতিহাস ও বিজ্ঞান গবেষণা তথা সকল বিবেচনায় বৈশ্বিক গুরুত্ব বহনকারী এই ভূ-খণ্ডটুকু দেশ ও জাতির কাছে নতুন করে পরিচিত হয়ে ওঠার বিষয়টি দারুণভাবে আন্দোলিত করেছে ওই এলাকার সাধারণ মানুষকে। জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে ভাঙ্গা উপজেলার নূরুলাগঞ্জ ইউনিয়নের ভাঙ্গারদিয়া গ্রামের বিল ধোপাডাঙ্গা মৌজার এক টুকরো আবাদি কৃষি জমির ওপর বিশ্বের অন্যতম ভৌগলিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কর্কটক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি দ্রাঘিমার ছেদ বিন্দুটি ঘিরে সরকারি পর্যায়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়।
সম্প্রতি বিজ্ঞান লেখক ড. জাফর ইকবালের ‘একটি স্বপ্ন’ শিরোনামের নিবন্ধটি প্রকাশিত হবার পর এ নিয়ে সারা দেশে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়। এরপর এই স্থানটি নিয়ে সরকারের ব্যাপক এই পরিকল্পনার বিষয়টি উন্মোচিত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষ শাস্ত্র, জলবায়ুবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণার জন্যই সাধারণত মানমন্দির স্থাপন করা হয়ে থাকে। মিশর, গ্রেট বিট্রেন, কম্বোডিয়া, মেসিডোনিয়া ও জার্মানিতে রয়েছে আরও কয়েকটি মানমন্দির। এর পাশাপাশি এবার বাংলাদেশেও নির্মাণ করা হচ্ছে একটি মানমন্দির।
ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন মানমন্দির (ছবি- সংগৃহীত)
আরও জানা যায়, পৃথিবীতে তিনটি পূর্ব-পশ্চিম বিস্তৃত রেখা আছে, সেগুলো হলো কর্কটক্রান্তি, মকরক্রান্তি ও বিষুব রেখা। ঠিক এরকম চারটি উত্তর-দক্ষিণ বিস্তৃত রেখা আছে, সেগুলো হলো শূন্য ডিগ্রি, ৯০ ডিগ্রি, ১৮০ ডিগ্রি এবং ২৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমা। চারটি উত্তর-দক্ষিণ রেখা এবং তিনটি পূর্ব-পশ্চিম রেখা, সব মিলিয়ে বারো জায়গায় ছেদ করেছে। এরমধ্যে দশটি বিন্দুই যেসব স্থানে রয়েছে সেসব হয়তো সাগর কিংবা মহাসাগরে রয়েছে। যেখানে মানুষের সচরাচর যাতায়াত নেই। মাত্র দুটি বিন্দু রয়েছে স্থলভাগে। যার একটি রয়েছে সাহারা মরুভূমিতে। যেখানে সচরাচর মানুষের আনাগোনা নেই।
শুধুমাত্র এই একটি বিন্দু পড়েছে জনবহুল স্থল ভূমিতে যেটি এই ভাঙ্গা উপজেলার ভাঙ্গারদিয়া গ্রামে। সেখানে বিল ধোপডাঙ্গা মৌজায় প্রায় ৫ একর কৃষি জমিকে প্রাথমিকভাবে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান মানমন্দির প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
মানমন্দিরের ভেতরে থাকা টেলিস্কোপ (ছবি- সংগৃহীত)
ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর স্বপন কুমার হালদার বলেন, ফরিদপুরের মানুষ সৌভাগ্যবান। কর্কটক্রান্তি এবং ৯০ ডিগ্রি দ্রাঘিমার ছেদ ফরিদপুরে রয়েছে। এই ছেদ বিন্দুকে ঘিরে সরকার বড় বড় প্রকল্প গ্রহণ করলে এই দেশকে যেমন পৃথিবীর মানুষ আরো চিনবে, তেমনি এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
স্থানীয় গ্রামবাসী বারেক মাতুব্বর, ইকবাল মাতুব্বর সহ অন্যরা জানান, এই বিখ্যাত জায়গাটির পরিচিতি যাতে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য এলাকার সকলেই আমরা সরকারকে জমি লিখে দিতে রাজি আছি। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির হোক। তাতে এখানে দেশবিদেশের মানুষ আসবে। আমাদের জীবনমানও বদলে যাবে।
মানচিত্রে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা (ছবি- সংগৃহীত)
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার নিশ্চিত করেছেন যে, সম্প্রতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান মানমন্দির স্থাপন করার জন্য একটা প্রকল্প প্রণয়ণের কাজ শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে একাধিকবার নূরুলাগঞ্জ ইউনিয়নের ভাঙ্গারদিয়া গ্রামেরবিল ধোপাডাঙ্গা মৌজার ওই জমি এলাকা সরকারি লোকজন পরিদর্শন করেছেন। আন্তর্জাতিক মানের এই মানমন্দির ও পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণ করতে বেশ কয়েক একর জায়গার প্রয়োজন হবে। এরইমধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানমন্দির’ স্থাপন করার জন্য একটা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে। কারিগরি কমিটি তৈরি করে এরইমধ্যে একটি সভাও হয়ে গেছে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড