ফয়সাল আহমেদ, সিলেট
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের সাক্ষী সিলেটের জকিগঞ্জের সাজিদ রাজার বাড়ি। উনিশ শতকের প্রথম দিকে নির্মিত সাজিদ রাজার বাড়িটি এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়ের বসবাস ধ্বংসস্তূপের মতো দাঁড়ানো, এ বাড়িটি এলাকার লোকদের কাছে সিলেটের আলী আমজদের ঘড়ির মতো বিখ্যাত। কিন্তু অযত্নে আর অবহেলায় বিখ্যাত এ বাড়িটি ধ্বংসের পথে।
সিলেটের সীমান্ত উপজেলা জকিগঞ্জের কাজলসার ইউনিয়নের সুরমা নদীর তীরবর্তী চারিগ্রামের বিখ্যাত মিরাসদার সাজিদ রাজার স্মৃতিবাহী বাড়িটি এখন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। বাড়িটি সংস্কার করে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। দুই শত বছরের অযত্নের চিহ্ন গায়ে মেখে এখনো দাঁড়িয়ে আছে সাজিদ রাজার প্রিয় বাস ভবনটি। বন-জঙ্গলের ভেতর থেকে উঁকিঝুঁকি মারা ধ্বংস প্রায় ভবনটি এখনো ভ্রমণ পিপাসুদের দৃষ্টি এড়ায় না।
প্রায় শত ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের সাজিদ রাজার শখের প্রাসাদটির ভেতরে এখন সাপ, ব্যাঙ ও পোকামাকড়ের নিরাপদ আবাস আর বাইরে ক্ষয়ে যাওয়া ভবনে গজিয়েছে নানা প্রজাতির পরগাছা। বাড়ির আঙিনায় চরানো হয় গরু-ছাগল। সাজিদ রাজার বাড়িতে রয়েছে ১৩ চালার দৃষ্টিনন্দন টিনের ঘর। সাজিদ রাজার দানকৃত জায়গায় গড়ে উঠেছে আটগ্রাম বাজার, আটগ্রাম ইউনিয়ন হাসপাতাল, ডাকবাংলো, মাদ্রাসা, স্কুলসহ রাস্তাঘাট।
সাজিদ রাজার বিচারালয় (ছবি : দৈনিক অধিকার)
ঐতিহ্যবাহী এ ঘরটির নির্মাণকাল সঠিকভাবে কেউ বলতে পারেন না। ধারণা করা হচ্ছে, উনিশ শতকের প্রথম দশকে ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। ঘরের পাশেই রয়েছে দুই শতাধিক বছরের পুরোনো একটি ঐতিহাসিক মসজিদ ও জঙ্গলাকীর্ণ সাজিদ রাজার বসতঘর। এ বাড়িতে জমি রয়েছে প্রায় ১৩ একর। বাড়ির দুই পাশে রয়েছে দুটি দিঘি। অবহেলায় আর অযত্নে পড়ে থাকা ১৩ চালা ঘরটি দেখার জন্য প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে দর্শনার্থীরা।
দর্শনার্থী আহসান হাবিব বলেন, আমার দাদার কাছ থেকে সাজিদ রাজার বাড়ির গল্প শুনেছিলাম। তখনকার দিনে জকিগঞ্জের মধ্যে একমাত্র পাকাবাড়ি ছিল এটি। এখানে কোনো ভালোমানের রেস্টুরেন্ট না থাকায় দর্শনার্থীদের খাবার-দাবারের অসুবিধা হয়। বিখ্যাত এ বাড়ি ও জমিদার সাজিদ রাজার কীর্তির ইতিহাস যদি লিপিবদ্ধ থাকত তবে দর্শনার্থীরা অনেক কিছু জানতে পারত।
এনজিও কর্মী নাজিম উদ্দিন জানান, আমাদের এলাকার মধ্যে বিখ্যাত এ স্থাপনাটি হওয়া সত্ত্বেও এলাকার অনেক লোকজন এটি সম্পর্কে জানেনা। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ঐতিহ্যবাহী এ স্থাপনাটির ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা।
১৮ শতকের শুরুর দিকে সাজিদ রাজার মির্মিত মসজিদ (ছবি : দৈনিক অধিকার)
সেভ দ্যা চিলড্রেন সিলেটের ম্যানেজার পলি বেগম বলেন, আমি সিলেটে আসার পর সাজিদ রাজার বাড়িটির কথা শুনেছিলাম। তারপর একদিন বাড়িটি দেখতে গেলাম। ঐতিহ্যবাহী এ বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দর্শনার্থীরা ঠিকভাবে বাড়িটি দেখতেও পারে না। অসংখ্য পোকামাকড়, সাপ, বিচ্ছুদের বসবাস। তাই যত দ্রুত সম্ভব এটির সংস্কার করা জরুরি।
স্থানীয় কমিউনিটি নেতা ফারুক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সাজিদ রাজার বাড়ি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসেন। মাঝে মধ্যে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। পর্যটকদের জন্য সিলেট শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় পর্যটকদের আনাগোনা কম। সরকার যদি সাজিদ রাজার বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় এবং এর বিকাশের জন্য পর্যটকদের গাড়ি পার্কিং, রেস্ট হাউসসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যায় তবে পর্যটনের জন্য সাজিদ রাজার বাড়িটি বিখ্যাত হয়ে উঠবে।
সীমান্তিকের চেয়ারপার্সন অধ্যক্ষ মাজেদ আহমদ বলেন, জকিগঞ্জের সাজিদ রাজার বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, বরাকের উজান ঢলে গোটা জকিগঞ্জ উপজেলা ভেসে যেত। তখন বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানুষ খুব কষ্টে ছিল। জনগণের এ দুর্দশা লাঘবের জন্য তিনি তার বাড়ির সামনে খনন করেন বিরাট দিঘি। উনিশ শতকে খননকৃত এ দিঘি এখনো আশপাশের লোকজন ব্যবহার করছেন।
ওডি/এমবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড