• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

খাল না থাকলেও আছে ৩২ কালভার্ট!

  হেলাল হোসেন, মাগুরা

২৬ মে ২০১৯, ১৪:৩৪
মাগুরা
অযথা নির্মিত কালভার্ট (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মাগুরা-ঝিনাইদহ জেলা সড়কে ৩৯.৫ কিলোমিটার পুনর্নির্মাণ কাজ চলছে। এ সড়কে মাগুরা অংশেই ২৪.৫ কিলোমিটারের মধ্যে অযথা ৩২টি কালভার্ট নির্মাণ করায় এলাকাবাসীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। খাল নেই অথচ অর্থ অপচয় করে বিনা প্রয়োজনে কালভার্ট নির্মাণ কাজ চলছে। এলাকাবাসীদের ক্ষতি ও বাধার মুখেও নির্মাণ কাজ থেমে নেই। ৩২টি কালভার্টের পাশাপাশি আরও ৩টি নতুন কালভার্ট সেখানে আবার নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চুকিনগর গ্রামের সাহেব আলীর বাড়ির ধানের চাতাল সংলগ্নে কালভার্ট নির্মাণ হচ্ছে। অথচ এখানে খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। নির্মাণ শেষ করতে চাতালের একাংশ খুঁড়তে হয়েছে। এছাড়া চাতালের চার পাশেই অসংখ্য বসতবাড়ি রয়েছে। পূর্বে এখানে কোনো কালভার্টের অস্তিত্ব ছিল না।

তেমনই আরেকটি দৃশ্য চোখে পড়ে উজগ্রামের সখিনা খাতুনের বাড়ি সংলগ্ন উঠানের সাথে কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। তার ঘর থেকে নির্মাণাধীন কালভার্টের দূরত্ব মাত্র ৮মিটার। এখানেও খালের কোনো অস্তিত্ব নেই। এই কালভার্টের উভয় পাশেও অসংখ্য বসতবাড়ি রয়েছে।

সখিনা খাতুন জানান, ‘তিনি কালভার্ট নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করেও ঠেকাতে পারেন নি। কাজ বন্ধ করাতে তিনি অফিসে দৌড়াদৌড়ি করেছেন, গ্রামের লোকেরা নির্মাণ কাজে বাধা প্রদান করেন কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকেরা জানান কালভার্ট না করতে পারলে তাদের অনেক টাকা ক্ষতি হবে’।

চুকিনগর গ্রামের বিমল মিত্রের বাড়ির সামনে আরও একটি কালভার্ট নির্মাণ হচ্ছে। অথচ কালভার্টের উভয় পাশে মাটি ভরাট করে বহুতল ভবনের নির্মাণ চলছে। কালভার্টের কোনো পাশে দিয়েই বন্যা-বৃষ্টির পানি চলাচলের জন্য কোনো খাল বা নালা নেই।

বিমল মিত্র জানান, অযথাই কালভার্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কালভার্ট দিয়ে বন্যার কোনো পানি যাবে না বা সুযোগও নেই। অযথা কালভার্টের এখানে কোনো প্রয়োজন ছিল না।

অনেক স্থানে আগে কালভার্টের প্রয়োজন ছিল কিন্তু এখন অনেক স্থানে আর প্রয়োজন নেই। এছাড়া সড়ক নির্মাণেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

নির্মাণাধীন সড়কের পাশে হেজিং (সড়কের পাশে ইট দিয়ে জাম দেয়া) দেয়া হচ্ছে না। ফলে রাস্তা খুব সহজেই ভেঙে যাবে। তাছাড়া রাস্তা নির্মাণেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ, কালভার্ট নির্মাণের নামে তারা সরকারের টাকা হরিলুট করছে । সরকারে টাকা সরকারি লোকে খায় আমরা তো আর বাধা দিতে পারি না। অযথা এতো কালভার্টের কোনো প্রয়োজন ছিল না বলেও জানান তারা।

মীর হাবিবুল আলম ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাইড ইঞ্জিনিয়ার মাছুম বিল্লাহ জানান, নকশা অনুযায়ী শতভাগ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ বাকি থাকায় ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময়ের আবেদন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, পুরাতন নকশা অনুযায়ী নির্মাণ কাজ হচ্ছে। স্থানীয় এমপি ও এলাকাবাসীর অনুরোধে আরও নতুন তিনটি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মাগুরা-ঝিনাইদহ জেলা সড়কের ৩৯.৫ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণে বরাদ্দ রয়েছে ১০৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে মাগুরা জেলায় ২৪.৫ কিলোমিটার নির্মাণের জন্য ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ। এর মধ্যে ৬৪ কোটি টাকায় মীর হাবিবুল আলম, নাটোর নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। মাগুরার অংশে ৩২টি কালভার্ট পূর্ণ নির্মাণের জন্য ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রতিটি কালভার্ট নির্মাণ ব্যয় ৩৭ লাখ ৫০হাজার টাকা। জুন-২০১৯ মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না।

ওডি/এমবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড