• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ওরা ১১ জন আলোর দিশারী!

  শাকিল মুরাদ, শেরপুর

২৯ এপ্রিল ২০১৯, ১৭:২৩
শেরপুর
ওরা ১১ জন

অভাব যেখানে নিত্য সঙ্গী সেখানে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ খুবই কম। অদম্য এসব মেধাবীদের গল্পের শেষ নেই। সবার জীবনের গল্প প্রায় একই। দিন মজুর, ভ্যান চালক, রিকশা চালক আর শ্রমিকের ঘরের সন্তান এরা। এক বেলা আধ বেলা খেয়ে না খেয়ে নিজে শ্রমিকের কাজ করে এবং বিভিন্ন উৎসবে ওঠেনি তাদের কারোরই গায়ে নতুন জামা।

বছরে এক বার বন্ধু-বান্ধব বা প্রিয়জনদের নিয়ে হয়নি কখনো দেশের দর্শনীয় স্থানে বেড়ানোর সুযোগ। এদের চোখে কেবলই ছিল পড়াশোনা করে নিজেদের অভাব ঘোচানোর স্বপ্ন। সে স্বপ্নের পথেই এগুচ্ছে তারা। কিন্তু মেধা যে সবার ওপর তা ওরা ১১জন বুঝিয়ে দিল।

শেরপুরের দুর্গম পাহাড়ি জনপথ আর প্রত্যন্ত গ্রামের খেঁটে খাওয়া বাবার সন্তান শারমিন, নাসিমা, জনি, বাবুল, শামীম, নুসু, নমিতা রানী, মাহমুদুল, আলী আকবর, ওয়াসিম আকরাম ও আলমগির কবির। ওরা ১১ জন এখন আঁধারে আলোর দিশারী হয়ে উঠেছে। তারা সবাই দারিদ্র্যের কঠোর নির্মমতাকে পেছনে ফেলে কেবলমাত্র নিজেদের উদ্যম, প্রচেষ্টা আর মেধার ওপর ভর করে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।

দৈনিক অধিকার

চার মেধাবী শিক্ষার্থী

তবে এদের সেই ইচ্ছা শক্তি আর উদ্যোমের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন সেনা সদস্য শাহীন মিয়া। জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার নন্নী গ্রামের ক্ষুদ্র মাছ বিক্রেতা অর্থের অভাবে তার মেয়েকে পড়ালেখা বন্ধ করে বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এমনি অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত সৈনিক শাহীন মিয়ার প্রচেষ্টায় শারমিন শিক্ষা জীবনের ফিরে এসে এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পায়। এবার ফিসারিজ বিষয়ে ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পার্শ্ববর্তী নন্নী পশ্চিম পাড়া গ্রামের অসুস্থ ভ্যান চালকের কন্যা মেধাবী নাসিমা খাতুন বাল্যবিয়ের শিকার হতে যাচ্ছিল অষ্টম শ্রেণিতেই। অভাব যেখানে নিত্য সঙ্গী সেখানে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ খুবই কম। তাই ভ্যান চালক বাবা এক পেটের খাবারের বোঝা কমাতে মেয়েকে বিয়ে দিতে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সৈনিক শাহীন মিয়ার কারণে সে যাত্রায় বেঁচে যায় নাসিমা। শুরু হয় নতুন করে শিক্ষা জীবন। এসএসসি, এইচএসসি এবং সর্বশেষ শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে নাসিমা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

শ্রীবরদীর লংগরপাড়া গ্রামের পিতৃহারা শামীম বাবা মারা যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। ঝিনাইগাতীর লয়খা গ্রামের ভাঙগারি বিক্রেতা নূর হোসেন নশুর বাবা অসুস্থ হওয়ায় সেও পড়াশোনা চুকিয়ে বাধ্য হয় বাবার ভাঙগারির ব্যবসা চালিয়ে নিতে কিন্তু শাহীন মিয়ার প্রচেষ্টায় শিক্ষামুখী হয়ে এরা একজন ফিসারিজ আরেকজন অর্থনীতিতে ভর্তি হয়েছেন গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

দৈনিক অধিকার

তিন মেধাবী শিক্ষার্থী

তবে এদের যিনি স্বপ্ন দেখিয়ে এগিয়ে নিচ্ছেন তিনি হলেন শাহীন মিয়া। সেই শাহীন মিয়া দেশ মাতৃকাকে রক্ষায় শপথ নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে নিজের পেশার পাশাপাশি কেবলমাত্র ছুটি’র সময়টাকে বেছে নিয়ে তিনি শুরু করেছেন শিক্ষা নিয়ে আরেক যুদ্ধ। সেটা হলো সমাজের দারিদ্র্যের কষাঘাতে শিক্ষা জীবন থেকে পিছিয়ে পড়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের আলোর পথে নিয়ে আসা। এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি রাষ্ট্রীয় পদকও পেয়েছেন (বিশিষ্ট সেবা পদক)।

শাহীন পেশায় একজন সেনাসদস্য হওয়ায় তার মধ্যে রয়েছে মানব সেবার দৃঢ় মানসিকতা। তার প্রচেষ্টায় নিভে যাওয়া প্রদীপগুলো আলো ছড়াচ্ছে। তিনি আলোকিত করতে চান পরিবার, সমাজ ও দেশ। তার এ প্রচেষ্টা অল্পদিনেই ডানা মেলেছে। সাড়া পড়েছে চারিদিকে। ওই ১১ জনের মতো অনেক নিভে যাওয়া প্রদীপে এখন আলো জ্বলছে। এ যেন আধারে আলোর দিশারী তারা।

এদের মতো জেলায় আরো শতশত স্বপ্নহীন ছেলে মেয়ে এখন দেখছে আলোকিত জীবন গড়ার স্বপ্ন। এই সাহসী সেনাসদস্য শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোড়জান গ্রামের এক মধ্যবিত্ত কৃষকের সন্তান। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন পরোপকারী। কোনো বাধাই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। দরিদ্র অসহায় মেধাবীদের প্রতি বরাবরই ছিল তার হৃদয়ের টান।

দৈনিক অধিকার

চার মেধাবী শিক্ষার্থী

চলতি সেশনে ওই ১১ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নিয়ে যেতে শহীন মিয়ার শ্রম, ঘাম, মেধার পাশাপাশি নিজের বেতনের প্রায় সিংহভাগই ব্যয় হয়ে যায়। তবে সংগ্রামী ওই মেধাবীদের নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ার পর শেরপুরের জেলা প্রশাসকসহ অনেক বৃত্তবান ও হৃদয়বান মানুষের সহযোগিতার হাত শাহীন মিয়াকে অনেকটা হলেও শক্তি জুগিয়েছে।

তবে মূল কাণ্ডারির এখন স্বপ্ন ও ধ্যান আগামীতে তাদের চলার পথ মসৃণ রাখতে যদি সমাজের আরও কোনো সহযোগিতার হাত মিলে তবে সত্যি সত্যি ওরা ১১ জন ভবিষ্যতে দেশের কাণ্ডারি হয়ে উঠবে।

এ বিষয়ে ডপস প্রতিষ্ঠাতা শাহীন মিয়া জানায়, এই এগারো জন সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত রয়েছে মোট ২৬ জন। আরো ১৪ জন আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে ৫২ জনের মতো স্কুল সহ সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে তিন শতাধিক। তাদের সকলের শিক্ষা সহায়ক উপকরণ দেওয়া সংগঠন বা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও সমাজের বৃত্তবান ব্যক্তিদের সহায়তা পেলে ওই এগারো জনসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

ওডি/আরবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড