নাজির আহমেদ, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার অপার সম্ভাবনাময় শিল্প হলো ইস্পাতের তৈরি মালবাহী নৌকা অর্থাৎ বলগেট নির্মাণ ও মেরামত। মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন পয়েন্টে বেশ কয়েক বছর ধরে এ শিল্প গড়ে উঠেছে। এরই মধ্যে এ কাজে কয়েকশ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। লাভজনক হওয়ায় নতুন নতুন উদ্যোক্তারা এ শিল্পে বিনিয়োগ করছেন।
বর্তমানে এখানকার ১০ থেকে ১২টি স্থানে এ বলগেট তৈরি হচ্ছে। আকার ভেদে একেকটি বলগেট বানাতে ২০ থেকে ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়। একেকটি বলগেট বছরে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়ায় খাটানো যায়। কাটিং, ওয়েল্ডিং, ফিটিংস, রং ইত্যাদি কাজে ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক দুই থেকে তিন মাস সময়ের মধ্যে নির্মাণ করতে পারেন একটি বলগেট।
ভৈরবের বলগেট শিল্প
নির্মাণ শ্রমিক নবী হোসেন ও শাহআলম জানান তাদের ভাল রোজগার হয়। এ কাজের দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিকরা প্রতি মাসে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন।
কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোণা, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বিশাল হাওরাঞ্চলের প্রবেশপথ বলে পরিচিত নদীবন্দর ভৈরব। বিশাল এই হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার পণ্য নদীপথে ভৈরব হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে পরিবহন করা হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন কৃষিপণ্য, বালু, পাথর, কয়লাসহ নিত্য প্রয়োজনীয় নানা সামগ্রী পরিবহনে এই বলগেটের তুলনা হয় না।
অধিক পণ্য ধারণ ও মজবুত বাহন হওয়ায় এখন এই নৌপরিবহনটি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আর ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি বছরই নতুন নতুন উদ্যোক্তারা বলগেট নির্মাণ ও মেরামত খাতে পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তাই বাড়ছে এর পরিধি।
ভৈরবের বলগেট শিল্প
কালিপুর এলাকার মিশন ডক ইয়ারের মালিক শফিকুল ইসলাম জানান এই বলগেটের কদর সারা বছর থাকবে। তাই আমাদের ইনকামও ভাল। তিনি আরও জানান, বছর বছর ইস্পাতসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তাদের মুনাফা ভালোই হয়। তাঁর এই ওয়ার্কশপ থেকে বছরে তিন থেকে চারটি বলগেট তৈরি এবং আরো সাত-আটটি মেরামত করা হয়। ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক তার কারখানায় কাজ করে জীবন চালাচ্ছে, এটাও তাঁকে বেশ তৃপ্তি দেয় বলে জানালেন।
রানী বাজার এলাকার জুয়েল পাওয়ার ডক ইয়ার্ডের মালিক জুয়েল বলেন, সরকারি উদ্যোগে ভৈরবের যেকোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ডক ইয়ার্ড নির্মিত হলে এখানে এই শিল্পের আরো প্রসার ঘটত। বহু লোকের কর্মসংস্থানসহ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটত।
ভৈরবের বলগেট শিল্প
জগন্নাথপুর এলাকার মেসার্স সততা ডক ইয়ার্ডের পরিচালক সালাহ উদ্দিন বিরু দাবি করেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র সেতু থেকে উত্তরে শম্ভপুর রেলক্রসিং এবং দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ পর্যন্ত নদের তীর ঘেঁষে একটি রাস্তা রেকর্ডভুক্ত আছে বহু আগে থেকেই। সেই রাস্তাটা যদি সরকার নির্মাণ করে তবে সম্ভাবনাময় এই শিল্পটির অভাবনীয় উন্নতিসহ সম্প্রসারণ ঘটবে। তিনি দ্রুত এই রাস্তাটি নির্মাণের দাবি জানান।
ভৈরবে বলগেট নির্মাণ শিল্প গড়ে ওঠা, শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি হওয়া এবং হাওরাঞ্চলের পণ্য পরিবহনে এই নৌযানের চাহিদার কথা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত সাদমীন জানান, এই শিল্পের উন্নয়নে যদি কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়, তবে তিনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
ওডি/আরবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড