নাটোর প্রতিনিধি
অকাল বন্যায় ফলন বিপর্যয়ে টানা দুই বছর জমির পাকা ধান কেটে গোলায় তুলতে পারেনি শস্য ভাণ্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার কৃষকরা। তবে কয়েক দফা ভারী বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টি ব্যতীত চলতি মৌসুমে ঘটেনি বড় ধরনের কোনো ফসলহানির ঘটনা। তাই এবার যথাসময়েই বোরো ধান কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। ঘোড়া, গরু এমনকি মহিষের গাড়িতে চাপিয়ে কাটা ধান গোলায় নিচ্ছেন কৃষকরা।
প্রায় দুই বছর পর নির্বিঘ্নে বোরো ধান ঘরে তুললেও আনন্দ নেই কৃষকদের চোখেমুখে। পাকা ধান ঘরে তোলার ঠিক আগেই শীষ মরা রোগে চিটা হয়েছে ধান। প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা থেকে আগেই যেসব কৃষক কিছু ধান কেটে ঘরে তুলেছেন তাদেরও ফলন হয়েছে গতবারের চেয়ে ৫ থেকে ৬ মণ কম। গত বছর যে জমিতে ধান হয়েছে ২৪ থেকে ২৬ মণ সেই জমিতে এ বছর ধান পাওয়া যাচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ মণ। এর পরেও মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে মজুরির বদলে ধান নেয়া।
কৃষকরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চলনবিলে বোরো ধান কাটতে আসা শ্রমিকরা এখনো না আসার কারণে ধান নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে তাদের। স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটা শুরু হলেও জেলার বাহিরে শ্রমিক না আসার কারণে দেখা দিয়েছে সঙ্কট। মণ প্রতি ১০ থেকে ১২ কেজি করে ধান দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে জমির মালিকদের।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছর নাটোরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৬১ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে, যা থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সিংড়া উপজেলার ১ পৌরসভা ও ১২ টি ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫ শত ৮৫ মেট্রিক টন ধান।
সম্প্রতি সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম, ডাহিয়া, বেড়াবাড়ি ও তেলীগ্রামের মাঠ ঘুরে কৃষকদের এই দুর্দশার কথা জানা গেছে। ধানের এই ফলন বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে যে সময় ধানে ফুল ফোটে ঠিক তখনই এখানে শিলাবৃষ্টিসহ বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। ফলে ধান পরিণত হয়েছে কালো চিটায়। তাদের হিসেবে, ধান চাষের শুরু হতে প্রতি বিঘা জমিতে ধানের চারা বাবদ চারশ থেকে পাঁচশ টাকা, জমি চাষ করা আটশ টাকা থেকে এক হাজার টাকা, দিনমজুর বাবদ এক থেকে দেড় হাজার টাকা, পানি সেচ বাবদ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা, সার (ইউরিয়া, পটাশ, ডেপ, জিপ, কীটনাশক) বাবদ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা ও কাটা-মাড়াই বাবদ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে ধানের বাজার দর ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ। তাই ধানের দর ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ না থাকলে কৃষক লাভের মুখ দেখতে পারবে না।
বেড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন জানান, তার ১০ বিঘা জমির মধ্যে ৫ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১৬ মণ। অথচ গত বছর এই জমিতে ফলন পেয়েছিলেন ২৩ মণ করে। এখন খরচের টাকাই উঠছে না।
চৌগ্রাম মাঠের কৃষক জয়নুল সরকার জানান, তার ৮ বিঘা জমির মধ্যে ২ বিঘা জমির ধানই চিটা হয়ে গেছে। বাকি ৬ বিঘা জমির ধান কাটা শুরু করেছেন তিনি। এই ধান থেকেও মণপ্রতি ১২ কেজি দেয়ার চুক্তিতেই ধানে কাঁচি দিয়েছে শ্রমিকরা।
ডাহিয়া গ্রামের আলহাজ উদ্দীন জানান, তার ৩০ বিঘা জমির ধান জমিতে পেকে আছে। অথচ শ্রমিক পাচ্ছেন না। স্থানীয় শ্রমিকরা মণ প্রতি ১২-১৫ কেজি করে ধান চাচ্ছেন। তাই বিদেশি (বাইরের) শ্রমিকদের অপেক্ষায় আছেন তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চলতি বোরো মৌসুমের মাঝখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আগাম জাতের কিছু জমির ধান চিটা হয়েছে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য একক ও দলীয় আলোচনাসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এবার আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে তা অর্জিত হবে বলে আশা করছি।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড