ফরিদ মিয়া, টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে তিন দিনব্যাপী জামাই মেলা শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার(২৫এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা। চলবে আজ শনিবার(২৭এপ্রিল) পর্যন্ত।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংস্কৃতির সাথে মিশে আছে বাঙালির প্রাণ। তারই ধারাবাহিকতায় শত বছর ধরে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ‘জামাইমেলা’।
এ মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এ মেলায় দূর দূরান্ত থেকে জামাইয়েরা আসেন তাদেও শ্বশুর বাড়ি। মেলাকে সামনে রেখে ছোট ছেলেমেয়েদের জন্য আয়োজন করা হয় নানা বিনোদনের ব্যবস্থা।
মেলায় থাকে ছোট-বড় প্রচুর স্টল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, খাবারের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় ব্যবসা করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয় এই মেলার। তিনদিনে রসলপুরসহ আশেপাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের লাখো মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়।
প্রশ্ন জাগতে পারে জামাইমেলা নাম হলো কেন? এর উত্তরে রসুলপুরের অনেকেই বলেন, এই মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার সব মেয়ের বর শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন, তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। এ কারণেই মেলাটি জামাইমেলা হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন দোকানিরা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আছে, অপরদিকে ক্রেতারা তা কিনছেন। এছাড়া মেলায় মিষ্টি জাতীয় দোকানের সংখ্যা বেশি লক্ষ করা গেছে।
এ ব্যাপারে রসুলপুরের বাসিন্দা কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রহমান বলেন, এই মেলার উৎপত্তি কবে সেটা কেউ জানে না। যুগ যুগ ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই এলাকার মানুষের কাছে ঈদ আর পূজাপার্বণের থেকেও এই মেলা বেশি উৎসবের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসাবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও এখন এটি জামাইমেলা হিসেবে পরিচিত।
মেলায় বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান
মেলাকে সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের বরকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর মেয়ের জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেবার জন্য শ্বশুড়-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নেন নানা প্রস্তুতি।
মেলার দিন জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন শাশুড়িরা। আর সেই টাকার সাথে আরও টাকা যোগ করে জামাইয়েরা মেলা থেকে চিড়া, মুড়ি, আকড়ি, মিষ্টি, জিলাপিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনেন।
মেলায় কথা হল মো. আজিজ নামের এক বৃদ্ধের সাথে। তিনি বলেন, জন্মের পর থেকেই আমি এ মেলা দেখে আসছি। এটি জামাইমেলা হিসাবে অনেক পরিচিত। শ্বশুড়-শাশুড়িরা এ মেলা উপলক্ষে জামাইদেরকে টাকা দেয়, আর জামাইয়েরা এর সাথে কিছু টাকা যোগ করে মেলা থেকে বিভিন্ন কিছু কিনে আনেন।
তিনি আরও জানান, আমরা একটি মেয়ে রয়েছে, তাকে বিয়ে দিয়েছি। মেয়ের জামাইকে আমি দাওয়াত দিয়েছি। তিনিও এখানে এসেছেন।
রসুলপুর গ্রামের হামিদ মিয়া নামের এক জামাই বলেন, আমি প্রতিবছরই এই মেলায় এসেছি। মেলায় এসে আমার খুব ভালো লাগছে। শ্বশুড় বাড়ির লোকজন আমাদেরকে দাওয়াত দেন। তখন আমরা আসি।
কথা হয় সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মানিক মিয়া নামের এক আকড়ি ব্যবসায়ীর সাথে। তিনি বলেন, আমি এই মেলায় প্রায় ১৫ বছর ধরে আসছি। এখানে বিক্রি করে আমি লাভবান হই। এই মেলাটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত। এবার প্রায় ৫০ মন আকড়ি নিয়ে এসেছি। আমার বেচা বিক্রি ভালই করছি আশা করছি লাভবান হবো। গতবছর মেলায় ১ লাখ টাকার মতো বিক্রি হয়েছিল। আর এতে প্রায় ২৫ হাজার টাকার মতো লাভ হয়েছিল।
অজিত দাশ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি বিভিন্ন স্থানে মেলায় যাই। তবে বিগত ১২ বছর ধরে রসুলপুরের জামাইমেলায় আসছি। আমার সংসারের যাবতীয় খরচ এর উপর নির্ভর করে। মেলার কমিটির লোকজনও আমাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করেছেন।
এ ব্যাপারে রসুলপুরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নব প্রজন্ম সাহিত্য গোষ্ঠীর সভাপতি মারুফ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোবাইদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই মেলা ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে দারুণ একটা প্রাণচাঞ্চলের সৃষ্টি হয়। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করি। এ কাজ করে আমরা প্রচুর আনন্দ পাই।
এ ব্যাপারে মেলার আহবায়ক ফজলুল হক বলেন, আমাদের এ মেলায় প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে ৩ শতাধিক দোকান বসেছে। এই মেলা টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী মেলা। এই মেলায় শুরু হওয়ার আগেই গ্রামের জামাই এবং বউয়েরা আসেন। তারা বিভিন্ন ভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন। এটি জামাই মেলা হিসেবে পরিচিত।
ওডি/আরবি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড