নজরুল ইসলাম শুভ, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ
দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারের অভাবে বিলীন হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাঁওয়ের ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক বাহক আব্দুল খয়রাত মৌলভীর জমিদার বাড়ি।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার বড়নগর এলাকার পুরনো এই জমিদার বাড়িটি ও একটি বৈঠক খানা কালের নিদর্শন হিসেবে এখনও ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মোঘল আমলে ১৮৭০-৮০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জমিদার আব্দুল খয়রাত মৌলভী বড়নগর এলাকায় জমিদার বাড়িটি ও একটি বৈঠক খানা তৈরি করেছিলেন।
বাড়িটিতে জমিদার আব্দুল খয়রাত মৌলভী দীর্ঘ ৪০-৪৫ বছর বসবাসের পর স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী শ্রী মাহেন্দ্র বাবু ও শ্রী মথুরা বাবু নামের দুই ভাইয়ের কাছে জমিদার তার বাড়িটি বিক্রি করে পুরান ঢাকায় চলে যায় এবং সেখানেই তিনি স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে থেকে যান।
সেই আমলে বড়নগর এলাকায় জমিদার বাড়ির পাশাপাশি কিছু সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করেছিলেন দৃষ্টিনন্দন আরও কয়েকটি বাড়িতে।
পরবর্তীতে ১৯২০-৩০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে শ্রী মাহেন্দ্র বাবু ও শ্রী মথুরা বাবুর পরিবারের লোকজনও তাদের অতিথি আপ্যায়ন করার জন্য বৈঠক খানাটি ব্যবহার করেছিলেন। পরে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তারা দুই ভাই তাদের পরিবারের লোকজন নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান।
সেই থেকে তারা আর ফিরে আসেননি জমিদার বাড়িতে। সেই থেকে পুরনো এই জমিদার বাড়িটিতে কিছু হিন্দু পরিবারের লোকজনসহ স্থানীয় বড়নগর এলাকার কয়েকটি ছিন্ন মূল পরিবারের লোকজন বসবাস করতে থাকেন।
তারপর ১৯৬৯ সালে মোগরাপাড়া এলাকার ফুলবাড়িয়া গ্রামের সাজেদ আলী মোক্তার নামে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি তার অধীনে সোনারগাঁও উপজেলার ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জমিদার বাড়ির পাশে সোনারগাঁও ডিগ্রী কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন।
সেই পুরনো জমিদার বাড়ি ও বৈঠক খানাটিতে হিন্দু পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি কলেজের প্রফেসর ও কিছু শিক্ষক বসবাস করতে থাকেন। সাজেদ আলী মোক্তার মারা যাওয়ার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ বসবাসরত অবস্থায় জমিদার বাড়িটি ও বৈঠক খানাটিতে থাকার জন্য এবং সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান।
কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষের অযত্ন ও অবহেলার কারণে পুরনো ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি ও বৈঠক খানাটির সংস্কার কাজ এখন পর্যন্ত করা হয়নি।
স্থানীয় বড়নগর এলাকার মাহবুব আলম জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থায় এই পুরনো জমিদার বাড়িটি ও বৈঠক খানাটি ধীরে ধীরে তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে।
ঐতিহাসিক সোনারগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী অনেক নিদর্শন দেখার জন্য দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থী বড়নগর এলাকায় আসেন। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলো যদি কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে সোনারগাঁওয়ের মানচিত্র থেকে জমিদার বাড়ির নামটি একসময় হারিয়ে যাবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা ও কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট বড়নগর এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি তারা যেন ঐতিহ্যবাহী পুরনো জমিদার বাড়িটি ও বৈঠক খানাটির অতি দ্রুত সংস্কার করে পুরনো সেই ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনেন।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড