• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কেঁচো সার তৈরি করে স্বাবলম্বী দিনাজপুরের নারীরা

  সুবল রায়, দিনাজপুর

১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৮
কেঁচো সার
কেঁচো সার তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

নারীদের অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় রামচন্দ্রপুর গ্রামে তৈরি হচ্ছে কেঁচো সার। এই সার তৈরি করে ওই গ্রামের নারীরা মাসে ৩-৪ হাজার টাকা আয় করছেন। এতে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা উন্নয়নের পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। কেঁচো সার তৈরি করা লাভজনক দেখে আশপাশের অনেক নারী উৎসাহিত হয়ে এই কাজ করছেন।

রামচন্দ্রপুর গ্রামের নিপা রানী নিজে কেঁচো সার তৈরির উদ্যোগ নেন। নিপা রানী বিরল কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ঋণের মাধ্যমে নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন একটি কেঁচো সার তৈরির খামার। সেখানে নারীরা কাজ করে প্রতি মাসে আয় করেন প্রায় চার হাজার টাকা।

উদ্যোক্তা নিপা রানী জানান, তার প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো। বাড়ির সকল কাজ কর্ম করে অবসর সময়ে কেঁচো সার তৈরি করা যায়। এতে যেমন বাড়তি আয় হয় তেমনি নারীদের সংসারে ফিরে আসে সচ্ছলতা।

তিনি আরও বলেন, সরকার থেকে বিনা সুদে ঋণ পেলে তিনি আরও বড় আকারে কেঁচো সার তৈরির খামার গড়তে পারবেন। যেখানে শতশত নারীরা কাজ করে তাদের ভাগ্য উন্নয়ন ঘটাতে পারবে।

(ছবি : দৈনিক অধিকার)

তৈরিকৃত কেঁচো সার (ছবি : দৈনিক অধিকার)

কেঁচো সার তৈরি খামারের নারী কর্মীরা এখানে এসে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা সংসারের হাল ধরতে পারছেন। নিজের আয়ের টাকা দিয়ে সন্তানদের অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করানোর স্বপ্ন দেখেন এখানকার নারী কর্মীরা। ধীরে ধীরে আশপাশের অনেক নারীই এখানে কাজের জন্য আসছেন।

সরকারি সহায়তা পেলে রামচন্দ্রপুরসহ আশপাশের গ্রামে ধারাবাহিকভাবে কেঁচো সার তৈরির খামার গড়ে উঠবে। অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কেঁচো সার তৈরির খামার গড়ে তোলার জন্য অনেকেই সঠিক পথ খুঁজছেন। কিন্তু এলাকার মানুষ বিশেষ করে নারীরা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। কেঁচো সার ব্যবহার করে আলু ও নানা শাক-সবজি ফলন দ্বিগুণ হচ্ছে। এ কারণে দিনদিন কেঁচো সারের চাহিদা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে কমে গেছে রাসায়নিক সারের চাহিদা।

বিরল এলাকার নারীদের ভাগ্য উন্নয়ন ও কৃষি ক্ষেত্রে আরও উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বিরল উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম। তিনি প্রথমে পাঁচজন নারীকে কেঁচো সার তৈরির প্রশিক্ষণ দেন। তার প্রচেষ্টায় বিরল এলাকায় কেঁচো সারের সঙ্গে মানুষের পরিচিতি ঘটে। কেঁচো সার তৈরির মাধ্যমে এলাকার অনেক নারী এখন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতা অর্জন করেছে। এ দেখে এলাকার নারীরা প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য দলেদলে ছুটে আসছেন তার দপ্তরে। তিনি যথাসাধ্য তাদের পরামর্শ দিচ্ছেন এবং কেঁচো সার তৈরিতে আগ্রহী করে তুলছেন।

তিনি জানান, যাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তারা এখন অন্যদের প্রশিক্ষণ দিতে পারবে। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মাত্র পাঁচজন। কিন্তু বিরল উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে কেঁচো সার তৈরি করে প্রায় ১০০ জনের উপরে। পারস্পরিক সহযোগিতায় এখন রামচন্দ্রপুর গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় কেঁচো সার তৈরি ছড়িয়ে পড়ছে। তারই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীর পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের সহায়তা পেলে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে গড়ে উঠবে কেঁচো সার তৈরির খামার। এতে শুধু নারীরাই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হবে না, কৃষি ক্ষেত্র থেকে কমে যাবে রাসায়নিক সারের চাহিদা। বাড়তি খরচ করে সরকারকে বিদেশ থেকে রাসায়নিক সার কিনে আনতে হবে না। তাই কেঁচো সার তৈরিতে গুরুত্ব দিয়ে কৃষি বিভাগ গড়ে তুলবে খামার। আর কৃষকদের আগ্রহী করতে কৃষি ঋণসহ প্রশিক্ষণের প্রসার ঘটাবে কৃষি বিভাগ। এমনটাই প্রত্যাশা করেন বিরল উপজেলার কৃষকরা।

ওডি/এএসএল

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড