• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘হালখাতা’ উৎসবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

  আরেফি রিয়াদ, মুন্সীগঞ্জ

১৩ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৯
হালখাতা
হালখাতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বাংলা নববর্ষ সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘হালখাতা’। ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক আরও মধুর করতে উৎসবে অন্যরকম রূপ, মাধুর্য এনে দেয় হালখাতা।

অতীত থেকে জানা যায়, জমিদারকে খাজনা প্রদানের অনুষ্ঠান হিসেবে ‘পুণ্যাহ’ প্রচলিত ছিল। বছরের প্রথম দিন প্রজারা সাধ্য মতো ভালো পোশাক পরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করতেন। তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো।

‘পুণ্যাহ’ বিলুপ্ত হলেও তবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এখনও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন ‘হালখাতার’ মাধ্যমে। বাংলার প্রথম মাস বৈশাখে তাদের পছন্দমাফিক কোনো এক দিন পুরনো হিসাব নিকাস মিটিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন হিসাব হালনাগাদ প্রক্রিয়া পালন করেন।

সেই সূত্র মতে, বাংলা নতুন বছর ১৪২৬ সন (১৪ এপ্রিল) কে সামনে রেখে ইতোমধ্যে মুন্সীগঞ্জের ব্যবসায়ীরা হালখাতার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। পুরানো হিসাব নিয়ে ব্যস্ততার মধ্যে দিন পাড় করছেন তারা। ‘হালখাতার’ নিমন্ত্রণ কার্ড নিয়ে বাড়ি বাড়ি ছুটে বেড়াচ্ছেন।

বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বছরের শেষদিন ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নানা জাতের ফুল, বেলুন, রঙিন কাগজ আর ‘শুভ নববর্ষ’, ‘শুভ হালখাতা’ লেখা ব্যানার-ফেস্টুন, লাইটিংয়ের মাধ্যমে নতুন করে সাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন বছরের জন্য কেনা হয় নতুন খাতা, ক্যালকুলেটর, কলমসহ আরও কতকি। আর নববর্ষের প্রথম দিনে দোকান খুললেই পুরনো হিসাব ঘুচিয়ে নতুন খাতা দোকানের অবয়বে আনা হয় নতুনত্ব। এছাড়াও অনেকে বাহারি কার্ডের ব্যবস্থা করেছেন। কেউ বা মুখে মুখেই সেরেছে দাওয়াতের পর্ব। ‘হালখাতার’ খাবারের আয়োজনে মিষ্টির পাশাপাশি যুক্ত করেছে অন্যান্য খাবার।

দিঘীরপাড় বাজারে ফারিজা ইলেক্ট্রনিক্স এর পরিচালক সোহেল টিটু বলেন, ক্রেতা-বিক্রেতার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হলো ‘হালখাতা’। ‘হালখাতায়’ যে সবাই বকেয়া পরিশোধ করে তাও না। আমরা মনে করি এর মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে হৃদ্যতা বাড়বে।

মা জুয়েলার্সের মালিক বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে ‘হালখাতার’ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যেমন- দোকান পরিষ্কার করা, দোকান মেরামত, গহনা গুলো পরিষ্কার করা, ক্রেতাদের দাওয়াত পৌঁছানো ইত্যাদি একদিনের কাজ নয়। অনেক সময়ের ব্যাপার। এছাড়া দোকান ও ব্যবসার মঙ্গলের জন্য পূজার পর্বতো থাকবেই।

অন্যদিকে ‘হালখাতাকে’ কেন্দ্র করে কার্ড ও টালি খাতা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। ইতোমধ্যে রসিদ হাতে অগ্রিম অর্ডার দেওয়া খাতা সরবরাহ নিতে এসেছেন অনেকেই। তাই দম ফেলার সময় নেই কারিগর এবং টালি খাতা ও নিমন্ত্রণ কার্ড বিক্রেতাদের।

বকশি হাটের টালি খাতার কারিগর ও ব্যবসায়ী অনন্ত ঘোষ জানান, মুন্সীগঞ্জে প্রচুর ‘হালখাতার’ চাহিদা আছে। মুন্সীগঞ্জে টালি খাতা তৈরির তেমন কোনো কারখানা বা কারিগর নেই। তবে অনেকেই আমার দোকান থেকে ‘হালখাতার’ কার্ড ও টালি খাতা পাইকারি ক্রয় করে মুন্সীগঞ্জে খুচরা বিক্রি করেন। তাদের অর্ডার অনুযায়ী টালি খাতা তৈরিতে বেগ পেতে হয়। একটি কারখানা দিয়েছি আমরা। সমস্যা হচ্ছে বাঁধাই শ্রমিকদের মজুরি বেশি আর দিনদিন কাগজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় লাভ কিছুটা কমে গেছে। তবে বছরের এ সময়ে ব্যবসা ভালো হয়।

ব্যবসায়ীরা মনে করেন বাংলা নতুন বছরে ‘হালখাতা’ হল ব্যবসায়ীদের সম্পর্কের সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার প্রতীক। ‘হালখাতাকে’ কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে তৈরি হয় মিলন মেলার। বৈশাখ যেমন সকল ধর্মের সার্বজনীন উৎসব তেমনি ‘হালখাতাও’ সকল ব্যবসায়ীদের সার্বজনীন উৎসব।

ওডি/এএসএল

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড