• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নিজ সাম্রাজ্যে এখন নারীই সম্রাজ্ঞী

  নিশীতা মিতু

০৮ মার্চ ২০১৯, ১০:০৮
নারী
ছবি : প্রতীকী

নারী দিবস, নারীদের জন্য বিশেষ একটি দিন। এই দিবসটি উদযাপনের পেছনের ইতিহাস জুড়ে রয়েছে নারী শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের গল্প। ১৯১৪ সাল থেকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ এই দিনটি উদযাপন করে আসছে। বাংলাদেশেও ১৯৭১ সাল থেকে দিবসটি পালিত হচ্ছে। নারীদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে দিবসটির জন্য হয়েছিল তার কতখানি তাৎপর্য আজও বজায় রয়েছে?

নারী দিবস এলেই সেমিনার হয়, আলোচনা সভা হয়। সব জায়গায়ই যে বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় তা হলো ‘নারী স্বাধীনতা’। ২০১৯ সালে এসেও কী নারীরা সত্যিই পরাধীন হয়ে আছেন? নিজের ইচ্ছামতো কাজ করতে গেলে কি আজও তাদের পায়ে শেকল বেধে দেওয়া হচ্ছে? কেবল নারী বলেই কি হেনস্তার শিকার হচ্ছেন তারা?

সবগুলো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কথা হয়, সমাজের বিভিন্ন পেশার নারীদের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হয় তাদের চলার পথের অভিজ্ঞতা। কী বলেন তারা? চলুন জেনে নিই তাদের ভাষ্যমতেই-

পেশায় একজন ডাক্তার সাকিয়া হক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের সম্পর্কে এক লাইনে লিখে রেখেছেন, “একজন ডাক্তার, যে ভ্রমণ ভালোবাসে”। ভ্রমণপ্রেমী এই নারী দাপিয়ে বেড়িয়েছেন দেশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। ডিঙিয়েছেন পাহাড়, হেঁটেছেন সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে।

কেবল দেশ নয়, ভারত, নেপাল, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভিয়েতমানও ঘুরে ফেলেছেন তিনি। দেশ আর বিশ্বকে কাছ থেকে দেখা এই নারীকে দমিয়ে রাখেনি কেউ। বাংলাদেশে নারী ভ্রমণকারীদের প্রথম ও বৃহত্তম সংগঠন ‘ট্রাভেলেটস অব বাংলাদেশ’ এর একজন কর্ণধারও তিনি। কেবল নারীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করেছেন অগণিত বার।

সাকিয়া বলেন, ‘নারীদের ভ্রমণের ব্যাপারে সমাজ এখন অনেক স্বাধীন। তারা যে ব্যাপারটি কেবল সহজভাবে নিচ্ছে তাই নয় বরং অবাক হয়ে দেখছে। দলবেঁধে মেয়েরা ভ্রমণে যাচ্ছে এখন। দু-তিনজন নারী কোথাও গেলে হ্যারেজমেন্টের শিকার হয় হয়ত কোথাও কোথাও কিন্তু আমরা যেখানেই যাই বিশাল দল নিয়ে যাই আর নিরাপত্তার দিকে মনোযোগ রাখি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কখনো বাজে পরিস্থিতিতে পড়িনি।’

মালয়েশিয়া প্রবাসী নারী শাহ নেওয়াজ সুমী। প্রবাসী নারী কি স্বাধীনতা পান? স্বামী কি বোঝেন দেশ থেকে, কাছের মানুষ থেকে থাকা একজন নারীর মন? জানতে চাইলে সুমী বেশ গল্পের স্বরেই বলেন, ‘আমার বিয়ে হয় এইচএসসির’র পর। ভীষণ আহ্লাদী মেয়ে ছিলাম তখন। রান্না করা শিখেছি স্বামী থেকে। তার ইচ্ছায় গ্র্যাজুয়েশন করেছি। তারপরও তার প্রশান্তি হচ্ছিল না। দেশ বিদেশ মিলিয়ে আমাকে যতটুকু পারা যায় সমৃদ্ধ করেছেন।

আমি মাস্টার্স করেছি, নিউট্রিসিয়ানের ওপর ডিপ্লোমা করেছি, মেকআপ এর কোর্স করেছি, কালিন্যারি বেকারি শিখেছি। আর সবকিছুর জন্য আমাকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দেওয়া মানুষ হলেন আমার স্বামী।

এইচএসসি শেষ করা সদ্য বিবাহিতা মেয়েটির পড়াশোনা শেষ করা থেকে শুরু করে সব কাজ শেখানো সবকিছুই করেছেন তিনি। একজন নারী হিসেবে এমন স্বামী পেয়ে আমি গর্ববোধ করি। কেননা তিনি সবসময় নিজের চাইতেও বেশি ভালো রাখতে চেষ্টা করেন আমাকে, বোঝেন আমি কী চাই।’

নারী ঘরের কাজ করবে, নারীর বাইরে যাওয়ার কী প্রয়োজন?- এমন ভাবনা সত্যিকার অর্থে এখন খুব কম মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের লেকচারার হানিয়্যুম মারিয়া খান। শিক্ষকতা পেশার বাইরে তার আরেকটি পরিচয় হলো আলোকচিত্রী। মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দি করেছেন অসংখ্যবার। ২০০৬ সাল থেকে ছবি তোলার সঙ্গে জড়িত থাকা এই নারী বলেন, ‘আমি গল্প বলতে ভালোবাসি আর সেই গল্পের ভাষা হলো ফটোগ্রাফি। ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন মানুষের কথা শুনি, তাদের জীবনের গল্প তুলে ধরতে গিয়ে যেন নিজেই কখন তার একটা অংশ হয়ে যাই।

সবচেয়ে ভালো লাগে যখন নারী ফটোগ্রাফার বলে কোনো অযাচিত ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় না, বরং সম্মানের সাথে নিজের কাজটুকু শেষ করতে পারি। আমি মনে করি একজন নারী ফটোগ্রাফারের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তার ইচ্ছাশক্তি এবং কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ।’

সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, এই ২০১৯ সালে এসে কোনো নারীই পিছিয়ে নেই। নিজের ইচ্ছা, নিজের স্বপ্ন সবকিছু নিয়ে তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নিজের সাম্রাজ্য। নারী বলে তাদের চলার পথে বাধা হচ্ছে না কোনোকিছুই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড