• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ওষুধেই নেশা!

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ২১:৫৭
প্রতীকী
ছবি : প্রতীকী

ঘুম ও ব্যথানাশক ট্যাবলেটের আবরণে ভয়াবহ নেশার জগতে ঢুকে গেছে সাতক্ষীরার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। যার ফলে ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে তাদের শারীরিক সক্ষমতা, নিস্তেজ হয়ে পড়ছে তাদের কর্মক্ষমতা ও চিন্তা শক্তি। প্রিয় সন্তানদের এই ভয়াবহতার হাত থেকে বাঁচাতে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হচ্ছে অভিভাবকরা। কিন্তু মরণ নেশার ছোবল থেকে বাঁচাতে পারছেন না কাউকেই।

ডাক্তারের কোনো ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এসব ওষুধ বিক্রি করছে ফার্মেসি মালিকরা। ফলে সহজেই নেশার ওষুধ হাতে পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানদের ব্যবহৃত ট্যাবলেটের খালি পাতা নিয়ে গত রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চাইতে আসেন। তাদের কাছে ছিল কয়েক শত ট্যাবলেটের খালি পাতা।

এ সময় তারা তাদের সন্তানদের শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, এ ট্যাবলেট খেতে বাধা দিলে সন্তানেরা আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।'

বিভিন্ন ওষুধের পাতা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

সাতক্ষীরার পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে নেশার ট্যাবলেট গ্রহণের নানা তথ্য পাওয়া গেছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য-আবর্জনার স্তূপে বিপুল সংখ্যক ট্যাবলেটের খালি পাতা পড়ে থাকতে দেখা যায়। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এসব তথ্য জানালেও আসক্ত ছাত্রছাত্রীরা তা অস্বীকার করেছে।

এ প্রসঙ্গে তারা বলেছে নেশার জন্য নয়, লেখাপড়ার কারণে তাদের ঘুম আসে না। তাই ঘুমের জন্য এবং শারীরিক ক্লান্তি দূর করার জন্য তারা এমন সব ট্যাবলেট খেয়ে থাকে। তবে অভিভাবকদের দাবি তাদের ছেলেমেয়েরা আসক্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু তা জেনেও সন্তানের ওপর কঠোর আচরণ করতে পারছেন না তারা।

পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিকার চাইতে আসা অভিভাবকদের তথ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ছয় ধরনের ট্যাবলেট সেবন করছে। এর মধ্যে রয়েছে মাইলাম ৭.৫ (MILAM 7.5), সিন্টা ৫০ (SYNTA 50), পেন্টাডল ৫০ (PENTADOL 50), ডর্মিকাম ৭.৫ (DORMICUM 7.5), ডিসোপান ২ (DISOPAN 2), ট্যাপেন্টাডল ৫০ (TAPENTADOL 50)।

ভুক্তভোগী অভিভাবকরা এসব ট্যাবলেটের খালি পাতা তাদের সংগ্রহে রেখেছেন। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের দপ্তরে নিয়ে আসা হয় এসব পাতা।

ভুক্তভোগী অভিভাবকরা জানান তারা এ বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন দীর্ঘদিন এসব ট্যাবলেট খেলে তাদের সন্তান মৃত্যুর দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে। তাদের ছেলেমেয়েরা দৈনিক এক সঙ্গে ৭/৮ টিরও বেশি ট্যাবলেট খেয়ে ফেলে।

অভিভাবকরা আরও জানান, কখনো কয়েকজন বন্ধু-বান্ধবী এক সাথে এসব ঔষধ সেবন করে। আবার কখনও পৃথক-পৃথক ভাবে সেবন করে। ঔষধ সেবনে বাধা দিলে তারা আত্মহননের হুমকি দেয়। বাসা বাড়িতে বসে সবার সামনেই এসব ট্যাবলেট গ্রহণ করে। এতে তাদের হতাশা দূর হয়, ভাল ঘুম হয়, বলে দাবি তাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সাতক্ষীরা শহরে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সিটি কলেজ, দিবা নৈশ কলেজ এবং সরকারি পলিটেকনিক কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৩০ হাজারের কম নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের মেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রায় ৫০ শতাংশ এই নেশার জগতে ঢুকে গেছে।

শিক্ষার্থীদের সেবনকৃত বিভিন্ন ওষুধ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ছাত্রদের মধ্যে এই ট্যাবলেট গ্রহণের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম লক্ষণীয়। বিশেষ করে যারা গ্রাম এলাকা থেকে জেলা শহরে এসে ভাড়া কিংবা মেসে অবস্থান করে লেখাপড়া করে তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে। তারা অভিভাবকদের কাছ থেকে নিয়মিতভাবে টাকা নিচ্ছে। সেই টাকায় কিনছে এসব ট্যাবলেট। রাতে ঘুম হয়না এমন যুক্তি দেখিয়ে বাবা মার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা এসব ট্যাবলেট ব্যবহার করে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে। এতে স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় অভিভাবকরা তাদের নিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার সব কিছু জেনে বুঝে ওষুধও দিচ্ছেন। একই সাথে এসব ট্যাবলেট ব্যবহার না করার পরামর্শ দিলেও তারা তা মানছে না।

এদিকে সাতক্ষীরা শহরের সব ফার্মেসিতে চিকিৎসকের কোনো ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই এসব ট্যাবলেট বিক্রি হচ্ছে। ফলে এসব ট্যাবলেট সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। এবং শিক্ষার্থীরা তা গ্রহণ করছে। অভিভাবকরা এভাবে ট্যাবলেট বিক্রির ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব ট্যাবলেট ঘুম, ব্যথানাশক এবং শারীরিক উপশমের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এক নাগাড়ে দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে তা তার জীবনের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ব্যবস্থাপত্র ছাড়া ছাড়াই ওষুধ বিক্রি অপরাধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'এ ব্যাপারে সরাসরি আমাদের নজরদারী করা জরুরি হয়ে পড়েছে'।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড