• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাড়ি থেকে পালানো এক কিশোরীর গল্প

  খালিদ হাসান, বগুড়া

২৮ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:৫৫
বাবা-মেয়ে
হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পেলেন বাবা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

সৌখিন মিয়া। বগুড়া-ময়মনসিংহ রুটের যুগান্তর বাসের একজন সুপারভাইজার। বগুড়া সদরের নুনগোলা এলাকার বাসিন্দা তিনি।

বাড়ি থেকে পালানো এক মেয়েকে বাসে একা পেয়ে নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। অবশেষে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীর হস্তক্ষেপে রবিবার (২৭ জানুয়ারি) মেয়েকে ফিরে পায় তার বাবা।

সৌখিন জানান, তার জীবনের এক নাটকীয় অভিজ্ঞতার কথা। বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) তার বাস ময়মনসিংহ থেকে ছাড়ার সময় ১৩-১৪ বছর বয়সী একটি মেয়ে উঠেছিল পাবনা যাবার নাম করে। মেয়েটির হাটিকুমরুল চাররাস্তা (সিরাজগঞ্জ রোড) মোড়ে নামার কথা ছিল। আসার পথে এলেঙ্গা এবং অন্যান্য এলাকায় যানজটের কারণে গাড়ি সিরাজগঞ্জ রোডে আসতে রাত ১১টা বেজে যায়। নামার সময় মেয়েটা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। সে নামতে রাজি না হওয়ায় সুপারভাইজার সৌখিন তাকে জিজ্ঞেস করেন যে তার সঙ্গে যাবে কি না। মেয়েটা রাজি হয়ে তার সঙ্গে তার বাড়িতে চলে আসে।

সুপারভাইজার সৌখিনের ২ মেয়ে ১ ছেলে। ছেলেটা প্রতিবন্ধী। বড় মেয়ে সন্তানসম্ভবা হওয়ায় তার স্ত্রী ব্যস্ত ছিলেন বাড়ির কাজে। মেয়েটি সেই বাড়িতে গিয়ে বাড়ির মেয়ের মতো মিশে গেল। রান্নাবান্না ঘরকন্যা সবই করছিল। বিষয়টা যে থানাতে অবগত করা উচিত তা সুপারভাইজার বা তার পরিবারের কারও মাথাতেই আসেনি। ১০ দিন পর মেয়েটিকে নিয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তীর শরণাপন্ন হন সৌখিন মিয়া।

সনাতন চক্রবর্তী জানান, আমি মেয়েটির সঙ্গে কথা শুরু করলাম। খুবই লাজুক, কথাই বলতে চায় না। কোনো রকমে তার মুখ দিয়ে বের করালাম তার নাম, পিতার নাম। তার বাড়ি ময়মনসিংহের আরোংবাজ। সঙ্গে সঙ্গে ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানার ওসির সঙ্গে কথা বললাম। তিনি খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, এই নামে ময়মনসিংহ সদরে কোনো জায়গা নাই। ফুলবাড়ি ফাঁড়ির ইনচার্জ আমবারকে বললাম খোঁজ নিতে। সে অনেকদিন সেখানে ছিল। সেও খোঁজ খবর নিয়ে বলল এই নামের কোনো জায়গা ময়মনসিংহে নাই।

মেয়েটির সঙ্গে আবার কথা শুরু করলাম। এবার তার কাছ থেকে জানলাম সে একটা মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। মাদ্রাসার নাম নারায়ণহর। জিজ্ঞাসা করলাম আশেপাশে বড় কোনো বাজার আছে। সে বলল পূর্বধলা বাজার আছে। গুগল ম্যাপের সহযোগিতায় নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা থানার পাশে নারায়ণহর পাওয়া গেল। পূর্বধলা থানার ওসিকে ফোন করে খুলে বললাম ঘটনা। তিনি একটু সময় নিলেন। কিছুক্ষণ পর ফোন করে বললেন ১৯ জানুয়ারি একটা মিসিং জিডি হয়েছে। ভিক্টিমের নাম মিলে গেল কিন্তু বাবার নাম মিলল না।

পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী মেয়েটিকে আবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এবার জিজ্ঞাসাবাদে যোগ দিলেন ওসি জনাব এসএম বদিউজ্জামান। ২ জনের সম্মিলিত জিজ্ঞাসাবাদে সে বাবার নামের কথা স্বীকার করল, কেন বাড়ি থেকে পালিয়েছে তাও বলল। আবার ফোন করলাম পূর্বধলা থানার ওসিকে। জানালাম সবকিছু। তিনি মেয়েটির বাড়িতে খবর দিলেন।

রবিবার (২৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় মেয়েটির বাবা তার সঙ্গে ২ জন লোক নিয়ে থানায় এসে হাজির। বাবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি গাজীপুরে একটা ছোট চায়ের দোকান চালান, তার স্ত্রী গার্মেন্টসে কাজ করেন। মেয়েটা তার দাদার সঙ্গে গ্রামের বাড়ি লাউজানা, পূর্বধলায় থাকে। দাদা বকা দেওয়ায় সে অভিমান করে মা বাবার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে ভুল করে বগুড়ার গাড়িতে উঠে পড়ে। বাবার ভাষ্য অনুযায়ী মেয়েটা হারানোর পর থেকে তাদের বাড়িতে রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে মানবেতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড