• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিলুপ্তির পথে বুনো তিতির

  আল-মামুন, খাগড়াছড়ি

১৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:৪৭
বুনো তিতির
বিলুপ্ত প্রায় বুনো তিতির (ছবি : দৈনিক অধিকার)

পাহাড়ে এখন আর চোখে পড়ে না বুনো তিতির। পাহাড়, গভীর বন, জলপ্রপাত আর সবুজ উপত্যকা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম। বৃহত্তর এই সবুজ অরণ্যে এক সময় নানা প্রাণীর বিচরণ ছিল। অতীতে এখানে বুনো তিতির, ভাল্লুক, সাম্বার হরিণ, হাতি, বন মোরগ, শিয়াল, গুইসাপসহ বিভিন্ন প্রাণী ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে গভীর অগভীর অরণ্যে। কিন্তু ‘ক্রমাগত বন ধ্বংস, বৃক্ষ নিধন এবং জুম চাষের জন্য পাহাড় পোড়ানোর কারণে ইতোমধ্যে হারিয়ে গেছে অনেক বনের পশু পাখি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন পাবলাখালী অভয়ারণ্যে এক সময় সাম্বার হরিণ, গন্ডার, হাতি, বানরসহ বিভিন্ন পশু থাকলেও এখন কেবল দেখা মেলে বানর আর বুনো হাতির।

বন্য প্রাণী বিলুপ্তির জন্য শুধু বন ধ্বংস আর জুমের আগুনই দায়ী নয় বরং বাজারের চড়া মূল্যের কারণে শিকারিরা বন থেকে পশু শিকার করাও এর জন্য দায়ী। শিকারিদের উৎপাতের কারণে আশঙ্কাজনকভাবে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য অঞ্চল বন্যপ্রাণীর দ্রুত কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে মানুষের খাদ্য তালিকায় থাকা বন্য প্রাণীগুলো শিকার করছে শিকারিরা। বন ধ্বংসের কারণে পাহাড়ের গভীর অরণ্যের বাঘ, ভাল্লুক, হাতি, গয়াল, সাম্বার হরিণ হারিয়ে গেলেও সজারু, হরিণ, বন মোরগসহ প্রভৃতি বন্য প্রাণী জঙ্গলে টিকে আছে। তবে শিকারিদের উৎপাতে দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে বুনো তিতির। পাহাড়ের হাঁটে প্রকাশ্যে চলছে এসব বন্যপ্রাণীর বেচাকেনা। বন্যপ্রাণী বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলে বন বিভাগের উদাসীনতার কারণে শিকারিরা ইচ্ছে মতো বন্যপ্রাণী শিকার ও বিক্রি করছে।

স্থানীয় এক শিকারি জানান, গভীর জঙ্গল থেকে এক জোড়া বুনো তিতির শিকার করে বাজারে নিয়ে এসে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করি। মাংস সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে তিতিরের চাহিদা অনেক বেশি। এছাড়া খাগড়াছড়ির শহরের মধুপুর বাজার, স্বনির্ভর, মাটিরাঙ্গা, দিঘীনালা, মাচালং সহ বিভিন্ন হাটে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় বন্যপ্রাণী ও বন্যপ্রাণীর মাংস।

স্থানীয়রা বলেন, এক সময় হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী থেকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রাণীজ আমিষের অভাব পূরণ হতো। কিন্তু বর্তমানে বাজারের সঙ্গে স্থানীয়দের যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় হরিণ, বুনো তিতির, বনমোরগ শিকার করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। অনেকে শিকার করাকে জীবিকার মাধ্যম হিসেবে নিয়েছে।

কালো তিতির বনে থাকে। এরা মূলত উভচর পাখি। প্রতিটির ওজন প্রায় ১ কেজি পর্যন্ত হয়। এদের দৈর্ঘ্য ৩৪ সেন্টিমিটার। এরা দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়। বুনো তিতির পাখির পুরুষ ও স্ত্রী চেহারা আলাদা। তিতিরের রঙ ঘন কালচে। পুরুষের তিতির পিঠে ছোপ ছোপ সাদা রঙ থাকে। এদের ঝুটি লালচে। কালো তিতির ঘন ঝোপের পাহাড়ে বিচরণ করে বেশি। শিকারিরা গভীর জঙ্গলে ফাঁদ পেতে এদের শিকার করে। এরা সাধারণত জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। শিকারিদের হাত থেকে বাঁচার জন্য এরা পালকের সাহায্যে উড়ে বেড়ায়। শিকারিদের উৎপাতের কারণে কমে যাচ্ছে বুনো তিতিরের প্রজনন। মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম।

স্ত্রী তিতির ডিম দেওয়ার পর ১৮-২০ দিন পর বাচ্চা জন্মায়। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় হরিণ, বনমোরগ, বানরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ খুব জরুরি। তা না হলে একদিন প্রাণী শূন্য হবে পার্বত্য অঞ্চল। পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা বলেন, ‘মানুষের রুচির পরিবর্তন হলে বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ হবে না বরং একই সঙ্গে বন্য প্রাণী রক্ষা ও শিকার নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ ঘটাতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড