চম্পক কুমার, জয়পুরহাট
উত্তর অঞ্চলের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা জেলা জয়পুরহাট। এ জেলায় শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে চলছে শীতের পিঠার ধুম। শীতকে উপেক্ষা করে শহর-গ্রামের মানুষেরা পিঠা খেতে ছুটছে পিঠা-পুলির দোকানে। শীতের এই পিঠাকে ঘিরে এক উৎসবের পরিণত হয়েছে । সব মিলিয়ে জেকে বসেছে শীতের এক আমেজ।
সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে বাড়িতে এসব আয়োজন করা নানা রকম বাহারি পিঠা তৈরি থেকে দিন দিন মানুষ বিরত হচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেও এখন আর ঘরে বানানো পিঠা খেতে পারছে না অনেকেই। বেশি ভাগ মানুষ ছুটছে পিঠা-পুলির দোকানে। তাই শহর ও গ্রামগঞ্জের মানুষের রসনা বিলাসে রাস্তার মোড়ে-মোড়ে জমে উঠেছে বাহারি পিঠার পসরা।
নারিকেল ও খেঁজুর গুড়ের তৈরি ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল-মসলা পিঠা, সাদা পিঠা, তেলের পিঠা, দুধ পিঠা, মাশকালাইয়ের রুটি, নানা রকম মসলার তৈরি ধনিয়া পাতার চাটনিসহ বাহারি সব পিঠা। শীতের সকাল আর সন্ধ্যার হাওয়ায় ভাসছে এসব পিঠা ঘ্রাণ।
জয়পুরহাট জেলার প্রতিটি এলাকার ফুটপাতের দোকান, রাস্তার পাশে, অলিতে-গলিতে এবং মোড়ে-মোড়ে জমে উঠেছে এসব শীতের পিঠা-পুলির দোকান। সারা বছর কম বেশি পিঠা চললেও শীত এলেই বেড়ে যায় ক্রেতাদের আনাগোনা। পিঠা প্রেমিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এসব দোকান। শীতের এই মৌসুমে মুখে জল ভরা স্বাদ নিয়ে পিঠা-পুলির দোকানে-দোকানে ভিড় করছে শিশু- কিশোর, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। তারা পিঠা খেতে খেতে মজার মজার গল্পে মেতে ওঠেন।
শহরবাসীর রসনার তৃপ্তি মেটাতে গিয়ে এক শ্রেণির মানুষের উপার্জন হচ্ছে এখান থেকেই। শীতের পিঠা লাভজনক হওয়ায় ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও পিঠা বিক্রি করছে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদেরই পিঠা বিক্রি করতে বেশি দেখা গেছে। যা তাদের জীবনযাপনে সাহায্য করছে।
জয়পুরহাট শহরের পাচুরমোড়, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে, চিত্রারোড, রেলস্টেশন, বাটারমোড়, নতুন হাট, বাসস্ট্যান্ডসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে জেকে বসেছে প্রায় ৩ থেকে ৪শ পিঠার দোকান ।
শহরের চিত্রাপাড়ার বাসিন্দা মেমী পারভিন বলেন, ১০ টাকা করে চিতই পিঠা কিনে দুধ আর গুড় দিয়ে গরম করে ছেড়ে দিলেই আমাদের দুধ পিঠা হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা বাড়তি ঝামেলায় আর যাই না।
শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে পিঠা কিনতে আশা বাসস্ট্যান্ড হাড়াইল এলাকায় রত্না ইসলাম জানালেন, তার পরিবারের সদস্যরা বাজারের পিঠা খেতে বেশ ভালোবাসে। বিভিন্ন কাজের ব্যস্থতার কারণে আমাদের পরিবারের বাসা-বাড়িতে পিঠা বানানো সম্ভব হয় না। তাই প্রায়ই ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ঝাল-মসলা পিঠা খেতে আসি এবং বাসায় নিয়ে যাই।
শহরের দেওয়ানপাড়ার পিঠা ক্রেতা রুবেল হোসেন জানান, আমরা প্রায়ই এখানে পিঠা খাই এবং পরিবারের জন্য বাসায় পিঠা নিয়ে যাই। কর্ম ব্যস্ততার কারণে চাল ভেঙে আটা করে পিঠা বানানোর সময় সুযোগ আর হয় না । ঝামেলা ছাড়াই স্বল্প দামে হাতের নাগালেই এখন পিঠা পাই। তাই পথের ধারের পিঠাই আমাদের ভরসা।
এক সময় সংসারের অভাব অনটনের কারণে অল্প টাকায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ি দিতেন শিউলি বেগম। তারপর প্রায় তের বছর ধরে তিনি পিঠা বিক্রি করছেন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের সামনে।
শিউলি বেগম বলেন, আগে রাজমিস্ত্রি জোগাড়ি করার সময় অল্প আয়ে সংসার চলত না, ছেলে-মেয়েকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারতাম না। কিন্তু এখন নারিকেল কুড়ি ও খেঁজুর গুড় দিয়ে তৈরি করি ভাপা পিঠা। দামও বেশ হাতের নাগালেই। ভাপা পিঠা ১০ টাকা, চিতই পিঠা ১০ টাকা, মাশকালাইয়ের রুটি ১৫ টাকা এবং পিঠার সঙ্গে থাকছে সকলের প্রিয় ধনিয়া পাতা, লবণ, শুকনো ঝাল, কাচা ঝাল, পিষা সরিষা বাটাসহ হরেক রকমের মসলা দিয়ে তৈরি চাটনি। এগুলো পিঠা বিক্রি করে প্রতিদিন ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করে থাকি।
শহরের চিত্রারোডের পিঠার দোকানি রোকনা বেগম বলেন, আমার জন্মস্থান রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জে সেখানে আমি মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতাম। ছেলে-মেয়েদের ঠিকমতো খেতে দিতে পারতাম না। অভাবের তাড়নায় আজ থেকে সতের বছর আগে জয়পুরহাটে চলে আসি। তারপর থেকে এসব পিঠা তৈরি করে বিক্রি করতে থাকি। এখন পিঠা বিক্রি করে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া, খাওয়া-দাওয়াসহ সংসার ভালো মতোই চলে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড