• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিশুদের স্বপ্ন ইটভাটায় বন্দি!

  শহিদ রুবেল, কক্সবাজার

০৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৯:২৯
শিশু শ্রমিক
ইটভাটায় কাজ করছে শিশু শ্রমিক (ছবি : দৈনিক অধিকার)

৩০ জনের মতো ৮ থেকে ১৫ বছরের শিশু। থরে থরে সাজাচ্ছে ইট। কিছু শিশু ট্রলিতে ভরছে ইট। আবার কিছু শিশু ট্রলিতে করে পরিবহন করছে ইট। কাজ আর কাজ। কাজের জন্য কথা বলা বারণ। একজন আরেকজনের সঙ্গে কথা বললে বেতন কর্তন। মালিকের কঠোর নির্দেশ রয়েছে কারও সঙ্গে কথা বলা যাবে না।

মালিকপক্ষ ইটভাটায় ৫০ জনের অধিক শিশুর লেখাপড়া বাদ দিয়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করাচ্ছে। ইটভাটায় শিশুদের দিয়ে কঠোর পরিশ্রম করালেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব-উল-করিমসহ স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।

(ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্কুল যাবার বয়সে শিশুরা কাজ করছে ইটভাটায় (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বন্দি এসব শিশুর স্বপ্ন পুড়ছে পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের নাপিতখালী এলাকার আহমদ নবীর মালিকানাধীন এবিএম ইটভাটায়।

এবিএম ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, ভাটা শ্রমিকের সঙ্গে শিশুরাও কাজ করছে। ওদের বয়স ৮ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। কয়লার পরিবর্তে সংরক্ষিত বনের কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। ফসলি জমি গভীরভাবে খনন করে সেই মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। মাটি ব্যবহার করা হলেও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নীরব বলে জানায় স্থানীয়রা। নির্বিচারে ফসলি জমি কাটার ফলে পরিবেশ ভারসাম্যও হারাচ্ছে।

এ সময় কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব শিশুর কেউ কেউ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে পড়ছে। আবার কেউ কেউ এখন আর বিদ্যালয়ে যায় না। কেউ নিজে থেকেই, আবার কেউ মা-বাবার সঙ্গে ইটভাটার কাজে এসেছে। কাঁচা ইট রোদে শুকানো, ইট তৈরি, ট্রলিতে করে ইট টেনে ভাটাস্থলে পৌঁছানো, মাটি বহন করাসহ সব কাজেই নিয়োজিত এসব শিশু।

কাজ করা কয়েকজন শিশুর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা সরাসরি বলেন, মালিক ও তাদের সর্দারের বারণ রয়েছে। বেতন কত জানতে চাইলে কাজ করা শিশুরা বলেন, ৬ মাসে প্রতি জনকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।

বড় মিয়া নামের শ্রমিকদের সর্দার বলেন, এসব শিশু তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে। তারা ইটভাটায় কাজ করে না। তবে পিতা-মাতাকে কাজে সহযোগিতা করে থাকে।

(ছবি : দৈনিক অধিকার)

ভ্যানে ইট সাজাচ্ছে শিশু শ্রমিক (ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্থানীয় কয়েকজন জানান, বিগত ২ বছর আগেও এবিএম ব্রিকসে অভিযান চালিয়ে ২৫ শিশু শ্রমিককে উদ্ধার করেছিল তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা। শিশু শ্রম বন্ধ করতে মালিক আহমদ নবীকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিলেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে। এছাড়াও প্রশাসনের নীরব ভূমিকাও সন্দেহের চোখে দেখছে পরিবেশবিদরা।

এবিএম ব্রিকসের মালিক আহমদ নবী বলেন, আমার ইটভাটাতে শিশুদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় না। পিতা-মাতার সঙ্গে তারা আমার ইটভাটায় থাকে। সেখানে হয়তো বা পিতা মাতার কাজে তারা সহযোগিতা করে থাকে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব-উল-করিম বলেন, শিশু দিয়ে কাজ করার ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, শিশু শ্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোনো ইটভাটায় শিশু শ্রম ব্যবহার হলে তা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড