• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শেরপুরে ‘জয়িতা’ সম্মাননায় ভূষিত ৫ নারী

  শেরপুর প্রতিনিধি

০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ১৬:২৮
সম্মাননা
সম্মাননা অর্জনকারী পাঁচ জয়িতা নারী (ছবি : দৈনিক অধিকার)

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসহায় পাঁচ নারী সমাজের সব বাধা অতিক্রম করে এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছেন। সাফল্য অর্জনকারী ওই পাঁচ নারীকে মহিলা অধিদপ্তর দিয়েছে জয়িতার সম্মাননা। তারা হলেন- অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী শিউলী বেগম, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে তৃষ্ণা আগাথা ম্রং, সফল জননী শ্রেণিতে রোকেয়া খাতুন, সংগ্রামী নারী হিসেবে জাকিয়া ও সমাজ উন্নয়নে মমতাজ বেগম।

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী শিউলি বেগমের বাবার নুন আনতে পানতা ফুরাত। সংসারে অভাবের কারণে জ্বালানি কাঠ বিক্রেতা এক পাত্রের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। খুব কষ্ট করতেন, ঠিক মতো সংসার চলত না। সমাজেও কোনো মর্যাদা ছিল না। ২০১৩ সালে বেসরকারি সংস্থা কারিতাস ও ওয়ার্ল্ড ভীষণ বাংলাদেশের মাধ্যমে কেঁচো থেকে জৈব সার তৈরির বিষয়ে জানতে পারেন। তার তৈরি জৈব সার বিক্রি করাই এখন জেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এখন তিনি স্বাবলম্বী , তার দেখাদেখি উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐ গ্রামের আরও ২৫ নারী কেঁচো থেকে জৈব সার তৈরির কাজ শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে শিউলী বেগম বলেন, একসময় সমাজেও কোনো মর্যাদা ছিল না আমার। কিন্তু কেঁচো সার বিক্রি করে এখন আমি স্বাবলম্বী নারী।

জীবন সম্পর্কে বুঝার আগেই তৃষ্ণা আগাথা ম্রং এর পরিবারকে দারিদ্রতা গ্রাস করে। মা ও বাবা দিন মজুরি কাজ করতেন। এ অভাব-অনটনের মধ্যেও ডিগ্রি পাস করার পর বিয়ে হয় তার। প্রবল ইচ্ছা ও আর্থিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও স্বামীর সহযোগিতায় এমএসএস ডিগ্রি অর্জন করে। সকল বাঁধা অতিক্রম করে এখন তিনি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। এ প্রসঙ্গে তৃষ্ণা আগাথা ম্রং বলেন, লেখাপড়া শিখে স্বপ্ন পূরণ করতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

৬ষ্ঠ শ্রেণিতে থাকাকালীন বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছিলেন রোকেয়া খাতুন। স্বামী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু শিক্ষকতার আয় দিয়ে সংসার চলত না। সে জন্য পিতার বাড়ি থেকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা নিয়ে সংসার চালাইতেন। সংসারের টানাপোড়নের মধ্যেও পড়ালেখা করে নিজে শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমানে তার মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও ছেলে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি একজন সফল নারী। তার মতে, সন্তানদের এ কৃতিত্বের জন্যই আমি সফল মা হওয়ার স্বীকৃতি পেলাম। এটা আমার জীবনের পরম প্রাপ্তি।

পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন জাকিয়া। কিন্তু মনোবল হারাননি। ঘুরে দাঁড়িয়ে সমাজে নিজ যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন। স্বামীর কাছ থেকে তালাকের পর ১৪ বছর ধরে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজেকে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জয়িতা পুরস্কার প্রাপ্তিতে জাকিয়া বলেন, এভাবে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জয়িতাদের চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ সম্মান, স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা সমাজের অসহায় নারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করছে। যা সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এতে করে তৃণমূল, পিছিয়ে পড়া, নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা যেসব নারী করছেন তারা উৎসাহ পাবেন।

মমতাজ বেগমের সংসারে সচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে কখনো পিছু হটেননি তিনি। সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত থেকে তিনি বাল্যবিয়ে বন্ধ, সালিশ, সঠিক পরামর্শ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাউন্সিলিং ও সমাজ সেবামূলক কাজ করেছেন এখনও। এ সম্পর্কে সাহিদা বেগম বলেন, নারী উন্নয়নে গতি বৃদ্ধি, নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পর্যায়ক্রমে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করছি।

এ দিকে মহিলা অধিদপ্তরের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মানবাধিকার কর্মী ও শিক্ষক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের জয়িতাদের চিহ্নিত করে তাদের যথাযথ সম্মান, স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা প্রদানের বিষয়টি সমাজের অসহায় নারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড