• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

গৃহপালিত প্রাণীর শীতকালীন রোগ ও করণীয়

  ডা: মোঃ সাইফুল ইসলাম

১১ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:২০
গবাদিপশুর রোগ
ছবি : সম্পাদিত

হেমন্ত বিদায় নিতে না নিতেই ঘন কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আসে শীত। শীত আসে উত্তুরে হিম শীতল বাতাস আর কুয়াশা নিয়ে। কনকনে শীতে মানুষ ও প্রকৃতি জড়োসড়ো হয়ে পড়ে। এ সময় নানা ধরনের রোগ-ব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে। এই রোগ-ব্যাধি শুধু মানুষেই নয়, গবাদিপশুতেও দেখা দেয়। তাই এসময় গবাদি পশুরও প্রয়োজন হয় বিশেষ যত্ন ও পরিচর্যার।

সাধারণত গবাদিপশুতে কিছু কিছু রোগ শীতকালে বেশি দেখা যায়। আজকের লেখায় যেসব রোগ শীতকালে বেড়ে যায় সেসব রোগ সম্পর্কে ধারণা ও করণীয় সম্পর্কে জানাবো-

গলাফুলা রোগ :

সাধারণত হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনজনিত কারণে গলাফুলা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ রোগ হওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে বর্ষাকাল ও শীতকাল। ভেটেরিনারিয়ান বা প্রাণী চিকিৎসকরা এ রোগকে Hemorrhagic septicemia বলে থাকেন। Pasteurella multocida নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।

লক্ষণ : সাধারণত গলাফুলা রোগে গবাদিপশুর তাপমাত্রা ১০৫-১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বেড়ে যায়। গলার যেকোনো পাশে ফুলে উঠতে পারে। ফোলা জায়গায় গরম অনুভূত হয়। মুখ দিয়ে লালা ঝরে। আক্রান্ত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণীটি মারা যেতে পারে।

চিকিৎসা : অসুস্থ প্রাণীকে দ্রুত রেজিস্ট্রার্ড প্রাণী চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। এ রোগে ভালমানের এন্টি-বায়োটিক ব্যবহার করতে হয়।

রোগ প্রতিকার : রোগ প্রতিকারের জন্য টিকা দিতে হয়। অসুস্থ প্রাণীকে সুস্থ প্রাণী থেকে আলাদা করতে হবে। মৃত পশুকে ৬ ফুট মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে।

খুরা রোগ :

খুরা রোগ ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ। রোগটি বর্ষার শুরু ও শেষ এবং শীতকালে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

লক্ষণ : এ রোগ হলে প্রথমে জ্বর দেখা দিবে। প্রাণী খুঁড়িয়ে হাঁটে। মুখ দিয়ে লালা ঝরে। জিহ্বা ও মুখের ভেতরে ফোসকা পড়ে। ফোসকা থেকে ঘা এর সৃষ্টি হয়। প্রাণী কিছু খেতে পারে না। আক্রান্ত প্রাণির খুর খসে পড়তে পারে। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, শুকর ইত্যাদি প্রাণীতে এ রোগ হতে পারে।

চিকিৎসা : ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার কারণে এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। ক্ষতস্থানে সালফোনামাইড পাউডার ও ভেসলিন মিশিয়ে লাগালে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। আক্রান্ত প্রাণীকে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শমত সেবা নিতে হবে।

প্রতিকার : এ রোগ প্রতিকারে গবাদিপশুকে টিকা প্রদান করতে হয়। ৪-৬ মাস পর পর নিয়মিত খুরা রোগের টিকা প্রদান করতে হবে। কোনো এলাকায় শূকরের পাল গেলে সঙ্গে সঙ্গে গরুর গোয়াল ঘরের চারপাশে ও ভেতরে সোডার দ্রবণ ছিটিয়ে দিতে হবে।

ফেসিওলিয়াসিস :

ফেসিওলিয়াসিস Fasciola hepatica ও Fasciola gigantica নামক এক ধরনের পাতা কৃমির দ্বারা হয়ে থাকে। এ রোগে রক্তস্বল্পতা, চোয়ালের নিচে পানি জমা, ডায়রিয়া এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়।

আমাদের দেশে সাধারণত Fasciola gigantica দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।

চিকিৎসা : চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারিত কৃমিনাশক ঔষধ খাওয়াতে হবে।

প্রতিকার : এ রোগ ছড়ানোর জন্য এক প্রকারের শামুক বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই শামুকের সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। নিচু জায়গা ও জলাবদ্ধ স্থানে অথবা যেখানে প্রচুর শামুক রয়েছে সেসব স্থানের ঘাস গরুকে খাওয়ানো যাবে না।

নিউমোনিয়া :

শীতকালে মানবশিশুর মতো গৃহপালিত প্রাণীরও নিউমোনিয়ার সমস্যা দেখা যায়। এটি বাচ্চা প্রাণীর ক্ষেত্রে বেশি মারাত্মকভাবে হয়।

চিকিৎসা : অনেকগুলো কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই সঠিক কারণটি বুঝে চিকিৎসা প্রদান করতে হয়। এজন্য দ্রুত অভিজ্ঞ প্রাণীচিকিৎসকের সরনাপন্ন হয়ে যথাযথ ওষুধ প্রয়োগ করা উচিত। অন্যথায় আক্রান্ত প্রাণীটি মারা যেতে পারে।

প্রতিকার : ঘরে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। সব সময় আবদ্ধ ঘরে নানা ধরনে জীবাণু ও বিষাক্ত গ্যাসের সৃষ্টি হয়। ফলে নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। বাচ্চার জন্য ভারী খড়ের বিছানা তৈরি করতে হবে।

সাধারণত স্বাস্থ্যবান ও রোগমুক্ত প্রাণী থেকেই খামারি লাভবান হতে পারে। রোগাক্রান্ত প্রাণী থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবণা খুবই কম। তাই আপনার গবাদিপশুর সুস্থতা ও খামারের লাভ নিশ্চিত করতে নিয়মিত রেজিস্ট্রার্ড প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড